জলতরঙ্গ (৩)

ইঞ্জা ২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ০৬:৫১:১১অপরাহ্ন গল্প ১২ মন্তব্য

 

 

আনকেল, আপনি কি বলেন, শ্রমিক সর্দারদের দাবী কতটুকু যুক্তিযুক্ত, আবীর জিজ্ঞেস করলো রফিক শেখকে।
আসল কথা হলো, শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই বাবা, এই পৃথিবীটা টাকার পাগল আর যারা শ্রম দেয় তারা নিষ্পেষিত।
হুম, তাহলে তো সমস্যা।
তুমি এসেছো এতে আরো সমস্যা বাড়বে।
মানে?
এতদিন এদের নতুন ম্যানেজার আসলে সমস্যার সমাধান করবো বলে দমিয়ে রেখেছিলাম, এখন নতুন ম্যানেজার এসেছে, কি বলে ওদের দমাবো বলো।
এইটা কি ম্যানেজমেন্ট জানে, আবীর উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ওদের পরামর্শ অনুযায়ীই এইসব হচ্ছিলো।
কি বলেন, is it?
হুম।
ওকে এক কাজ করুন আনকেল, ম্যানেজমেন্টকে এখন জিজ্ঞেস করুন করণীয় কি, উনাদের এডভাইস চান, আমি তো মাত্র এসেছি, এইসময় জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবেনা।
দরজায় নক শুনে আবীর চোখ তুলে তাকালো, দরজা খুলে পিয়ন প্রবেশ করলো সালাম দিয়ে, টেবিলে দুই কাপ গ্রিন টি আর এক প্লেট বিস্কুট দিয়ে গেল।
বিস্কুটে একটা কামড় বসিয়ে চাবাতে চাবাতে আবীর বললো, আনকেল আমি চাই শ্রমিকদের অবস্থা নিজে দেখবো, আপনি কি বলেন?
তাতো খুব ভালো কথা বাবা, রফিক শেখের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
সাথে ম্যানেজমেন্টকে বলুন, আমাদের এইখানে জরুরি ভাবে একটা মেডিকেল টিম নিয়োগ দেওয়ার জন্য, যদি ডাক্তার, মেডিসিনের সল্পতা থাকে তাহলে শ্রমিকরা তো আসলেই বিপদে আছে।
ঠিক আছে বাবা, আমি এখনই কথা বলে জানাচ্ছি তোমাকে, চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে রফিক শেখ রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আধা ঘন্টার ভিতর রফিক শেখ ফিরে এলেন আবীরের রুমে।
বাবা, আমি কথা বলেছি জিএম সাহেবের সাথে, উনি এখনি এমডি সাহেবের সাথে কথা বলে জানাবেন বলেছেন।
খুব ভালো কথা, আনকেল চলুন আমরা ফ্যাক্টরি ঘুরে আসি।
চলো বাবা।
দুজনে অফিস থেকে বেরিয়ে হেটে ফ্যাক্টরি বিল্ডিংয়ে এসে আবীরকে ঘুরে ঘুরে সব দেখাতে লাগলেন রফিক শেখ, সাথে সাথে কিভাবে কাঁচা চা পাতা আসে, কিভাবে শুকানো হয়, স্লাইস করা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত চা পাতা বের হয় তা দেখালেন, এরপর নিয়ে গেলেন প্যাকেজিং ডিপার্টমেন্টে, যেখানে চা পাতা কার্টন বক্সে প্যাক করা হচ্ছে সব দেখালেন আবীরকে।
আনকেল একটা কাজ করতে হবে, সুপারভাইজারকে বলুন, সব ব্ল্যান্ড থেকে কিছু কিছু চা পাতা আমাকে পাঠাতে বলুন, আমি ওগুলো চেক করবো ল্যাবরেটরিতে।
আমাদের তো ল্যাব টেকনিশিয়ান তো নেই, রফিক শেখ অবাক হয়ে বললেন।
আনকেল, আমি বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং করেছি আমেরিকা থেকে, আবীর হেসে জবাব দিলো।
রফিক শেখ অবাক চোখে চেয়ে রইলেন আবীরের দিকে।

আবীরের ল্যান্ডফোন বেজে উঠলো, দুইটা রিং হতেই আবীর ফোন রিসিভ করে হ্যালো বললো, অপর প্রান্ত থেকে এমডি সাহেবের কণ্ঠ শোনা গেল।
আবীর কেমন আছো?
সালামালেকুম স্যার, জি ভালো আছি স্যার।
আচ্ছা শুনো, রফিক সাহেব নাকি ফোন দিয়েছিলো, জিএম সাহেব বলছিলো।
জি স্যার, আমি জানি স্যার।
তুমি একটা মেমো পাঠিয়ে দাও, আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেবো, আর হাঁ তুমি তো জানো আমাদের চা পাতায় প্রচুর সীসা পাওয়া যাচ্ছে, যা তোমার বাগানের পাতা থেকেই আসছে, কারণটা তুমি দ্রুত জানার ব্যবস্থা করো, আমরা এই বাগানের চা বিক্রিই করতে পারছিনা, এর একটা বিহিত চাই আমি।
জি স্যার, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি দ্রুত কাজ করবো।
আরেকটি কথা, আমার মেয়ের মাঝে মাঝে বাগানে যাওয়ার ইচ্ছে হয়, আমিও পাঠাই তাকে যেন এই ব্যবসা ভবিষ্যতে সে চালাতে পারে, এইবার সে তোমার বাগানে যাচ্ছে।
জি স্যার।
সে তোমার বাংলোতে উঠবে।
জি স্যার, আমার বাংলোতে!
হ্যাঁ, ওর দিকে খেয়াল রেখো।
জি স্যার।
আমি রাখছি তাহলে।
জি স্যার, সালামালেকুম।
ফোন রেখে মাথায় হাত মারলো আবীর, এমডি সাহেব এ কি করলেন, এইখানে আসলাম একটু প্রাইভেসি পেতে, প্রাইভেসি তো গেল গেল, উল্টো উনার মেয়ের ভার দিলেন আমার ঘাড়ে, ধ্যেত।

স্যার, স্যার নীলা ম্যাডাম আসতেছেন, রফিক সাহেব হাফাতে হাফাতে এসে বললেন।
হাঁ এমডি সাহেব বলেছেন আমাকে।
স্যার গাড়ী পাঠাতে হবে উনার জন্য।
এইখান থেকে গাড়ী পাঠাবেন?
স্যার উনার ফ্লাইট তিনটায় ল্যান্ড করবে।
ওহ গড, আজই আসছেন?
জি স্যার।
মহা মুসিবত, ঠিক আছে ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিন আর হারাধনকে খবর দিয়ে বলুন আমার রুমটা ম্যাডামের জন্য ঠিকঠাক করে নিতে।
জি স্যার।
আনকেল, আপনি স্যর স্যার করবেন?
না না ঠিক আছে।
আবীর হাসতে লাগলো আর বললো, আনকেল আপনি থাকুন, আমি বাগানটা ঘুরে আসি।
ঠিক আছ, দুপুরের খাবার এক সাথে খাবো।
জি চলে আসবো বলে আবীর বেরিয়ে গেল, অফিস থেকে বেরিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে বাগানের রাস্তা ধরে এগুলো, কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখা গেল বেশ কিছু চা শ্রমিক কাজ করছে দুরের চা বাগানে, আবীর গাড়ী নিয়ে এগুলো ওদের কাছাকাছি, ইচ্ছে ওদের সাথে কথা বলবে।
গাড়ী থামিয়ে নিজের জুতা খুলে গাড়ীতে রাখা বুট পড়ে নিয়ে এগুলো ওদের কাছে, সবার সাথে জনে জনে কথা বলছে বাকিরা দল বেধে এসে তাদের কথা বললো শ্রমিকরা, কথা শেষে আবীর পকেট থেকে প্লাস্টিকের পাউচ বের করে কিছু মাটি সংগ্রহ করে ফিরতি পথ ধরলো।

সন্ধ্যার আগে বাংলোতে ফিরে আবীর দেখলো হারাধন বারান্দা পরিষ্কার করছে, আবীরকে আসতে দেখে হারাধন দ্রুত ঝাড়ু রেখে এসে আবীরের গাড়ীর পাশে এসে দাঁড়ায়, আবীর জিজ্ঞেস করলো, আমার কাপড় ব্যাগ এইসব কি সরানো হয়েছে?
জি স্যার, পাশের রুমটাতে রাখা হয়েছে।
ঠিক আছে, আমি ফ্রেস হয়ে নিই, আমাকে কফি দাও।
আবীর ফ্রেস হয়ে এসে বারান্দায় রাখা আরাম কেদারায় বসে চোখ বুঝে ছিলো, হারাধনের আওয়াজ শুনে চোখ খুলে দেখে ছোট একটা টি টেবিল সামনে রেখে সেইটাতে কফি আর কাপ কেক রাখছে সে।
কই পেলে কাপ কেক গুলো?
বাজারত্তুন আনছি।
আবীর কাপ কেকে কামড় বসিয়ে কফির কাপ তুলে চুমুক দিলো, একজন মানুষ সাইকেল চালিয়ে এসে দাঁড়াতে দেখে তার দিকে তাকাতেই লোকটি সালাম দিয়ে বললো, স্যার আমি সুখি, এসিস্টেন্ট ম্যানেজার স্যার পাঠাইছেন।
হুম কি খবর?
স্যার, ম্যাডাম স্যারের বাসায় আসছেন, আপনাকে রাতের খাবার ওখানেই খেতে বলেছেন।
তাই, ঠিক আছে তুমি যাও, আমি ঘন্টা খানেক পর আসবো।

আবীর বের হওয়ার আগে ধবধবে সাদার উপর কারুকাজ করা পাঞ্জাবি আর পাজামা পড়লো, ডিজেল পারফিউমটার হাল্কা ছিটা দিয়ে নিলো।
ও যখন রফিক সাহেবের বাসার সামনে পোঁছাল, খেয়াল করলো সবাই বারান্দায় বসে গল্প করছে, রফিক শেখ আর মিসেস রফিক উঠে এসে আবীরকে রিসিভ করলেন।
আবীরকে নিয়ে বারান্দায় উঠে এসে রফিক সাহেব দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আবীর স্যার ইনি হলেন আমাদের ছোট ম্যাডাম নীলা হক।
আবীর সরাসরি তাকিয়ে সালাম দিলো, খেয়াল করলো নীলার অবাক হয়ে তাকানো।
রফিক সাহেব আবার বললেন, ম্যাডাম, ইনি আমাদের নতুন ম্যানেজার স্যার।
আবীর বিরক্ত হয়ে বললো, আনকেল, আপনি স্যার স্যার করলে আমি কষ্ট পাবো।
আচ্ছা আচ্ছা, আবীর এ হলো আমার মেয়ে রীতা।
আমি চিনি, আবীর মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, আমার ওখানে ফুল কুড়াতে গিয়েছিলো।
তাই?
আবীর মনে মনে আশ্চর্য হলো, নীলাকে সে চিনে, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, ওর জুনিয়র ছিলো, ইউনিভারসিটির সবাই জানে এই মেয়ে প্রচন্ড অহংকারী আর এখন সেই মেয়েটিই ওর ঘাড়ে চেপেছে।

.................... চলবে
ছবিঃ Google

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ