জন্মাষ্টমী ও আমার অনুভূতি

বায়রনিক শুভ্র ৩০ আগস্ট ২০১৩, শুক্রবার, ১০:৫৩:৫২অপরাহ্ন সমসাময়িক ২০ মন্তব্য

আমি মফঃস্বলের বাসিন্দা । শহরের নাম গোপালগঞ্জ । খুবই ছোট গ্রামের মত একটা শহর । যেহেতু বাইরে বাইরে ঘোরার বদঅভ্যাস সেহেতু ছোটশহরে প্রায় সব কিছুই আমার চোখে পড়ে। এবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্থানীয় ইসকনমন্দির এক বিশাল সোভাযাত্রা বের করেছিল । ৫০/৬০ টি মটরসাইকেল,পিকাপ, ৪/৫পেয়ার সাউন্ড , একটা বড়সড় হাতি, বেশ কয়েকটি মাইক্র বাস ওপ্রাইভেটকার,শ-খানেক রিকশা ও কমপক্ষে হাজার খানেক মানুষ নিয়ে শহরেরগুরুত্বপূর্ণ সড়ক মিছিলটি প্রদক্ষিন করে । প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ারমাধ্যমে জানতে পেরেছি প্রায় সব কয়টি জেলায়ই এরকম বড় শোভাযাত্রা হয়েছে । তারমানে দেশে এখনো বেশ হিন্দু আছে এবং তারা টাকা পয়সা জোগাড় করে যাগযমক পূর্ণভাবে শোভাযাত্রা বের করতে পারে ।

কিন্তু আমি এখনো দেখি নি বাশুনি নি কোন হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কোনদিন সংখ্যা লঘু নির্যাতনেরপ্রতিবাদ করেছে । তারা যে টাকা ও শ্রম ব্যয় করে কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করেসে টাকা ও শ্রম ব্যয় করে যদি খ্রিস্টানদের মত শান্তি পূর্ণ প্রতিবাদ জানাততাহলে আমার মনে হয় সংখ্যালঘু নির্যাতন শতকরা ৭০ ভাগ কমে যেত ।

এই শহরেরই আরেকটা ছোট ঘটনা শেয়ার করতে চাই । গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির মাদকাসক্ত পুত্ররা এক গরিব ও অসহায় খ্রিস্টান বিধবা মহিলার জমি দখল করে ফেলে । এবং ফলাফলে প্রথমে জেলার মধ্যে অবস্থিত সকল চার্চ রাস্তায় নেমে আসে । তারা শান্তিপূর্ণভাবে মানব বন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বারকলিপি জমা দেয় । তাতে কাজ না হলে ২ দিনের মধ্যে সারা দেশে এক জোগে মানব বন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে । ফলাফলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিধাবা মহিলাটি তার ৫ শতাংশ জমি বুঝে পায় । এখানে দেখার বিসয় খ্রিস্টানসম্প্রদায় সংখ্যায় হিন্দুদের তুলনায় কম হলেও তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর সজাগ দৃষ্টির কারণে ।

কিন্তু হিন্দুদের সব কিছু থাকার পরও তারা কিছুই করতে পারে না । যেহেতু হিন্দুদের কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু হিন্দুদের শুধু ব্যাবহারই করে সেহেতু হিন্দুদের নির্যাতন রোধে  ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই কার্যকারী ভুমিকা রাখতে পারে । এক্ষেত্রে ইসকণ বা রাম কৃষ্ণ মিশনের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারে । কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো কোনদিনই নির্যাতিত হিন্দুদের নিয়ে কথা বলতে চায় না । দিন তারিখ মনে না থাকলেও আমার একটা ঘটনা পরিষ্কার মনে আছে , বাশখালিতে একটি হিন্দু পরিবারকে পুড়িয়ে মারার ৬ দিন পর তৎকালিন রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামি অক্ষরানন্দ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন । এবং সেই ছবি ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অভ্যার্থনা কক্ষে আমি ২০০৬/০৭ সালে টানিয়ে রাখতেও দেখেছি । আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই ইসকণ ও রাম কৃষ্ণ মিশন চাইলে সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে । কিন্তু তারা ক্ষমতাবান ও পাথুরে মূর্তির পদ সেবা ছাড়া আর কিছুই করতে চায় না । এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধুরা ধর্মের নামে সব কিছু বিসর্জন দেয়ার সাথে সাথে নিজেদের মানবিকতা বোধও বিসর্জন দিয়ে দয়েছে বলে আমার মনে হয় । হয়ত কেউ কেউ প্রশ্ন রাখবে কেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাস্তায় নামবে ??? তাদের বলতে চাই , হিন্দুদের মনের জোর দেশভাগের সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে গেছে । এরা চাপ সহ্য করে, না পারলে ভারতে চলে যায় । কিন্তু প্রতিরোধ করার কথা কোনদিনও ভাবে না । কিন্তু ধর্মীও প্রতিষ্ঠানের ডাকে হিন্দুরা ঠিকই একজায়গায় জড় হয় । বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানই তার প্রমাণ । তাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই চেষ্টা করলে সাধারণ হিন্দুদের নিয়ে করতে পারবে ।

(নাস্তিকতাবাদ নিয়ে কম হিন্দুর গালি খাইনি, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে এই নাস্তিকরাই প্রথমে সরব হয়)

নোটঃ ব্লগে অনেক ভালো ভালো ও নতুন লেখক এসেছেন । আমি অনিয়মিত হয়ে পড়ায় অনেক ভালো লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি । আশাকরি এখন নিয়মিত হব ।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ