এই পাখিটি আমাদের দেশীয় পাখি। বাংলায় নাম ”নীল-গলা বসন্ত বাউরী”। পাকা পেঁপে ও বটফল পাখিটির খুব প্রিয় খাবার। পাখিটির ছবি আগেও বহুবার তুলেছি। কিন্তু খুব শখ বা ইচ্ছে ছিলো পাকা পেঁপে খাচ্ছে এমন একটি ছবি তোলার জন্য।
২০১৫ সালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ব্যাসপুর গ্রামে শ্বশুড় বাড়িতে গিয়েছি বেড়াতে। স্পষ্ট মনে আছে আম কাঁঠালের সময় তখন। সকাল বেলা নাস্তা সেরে বের হয়েছি ক্যামেরা হাতে নিয়ে গ্রামে অনেক প্রজাতির দেশীয় পাখি পাওয়া যায়। তাই সব সময় একটা লোভ কাজ করে দেশীয় পাখির ছবি তোলার। মাসটা ছিলো মে’ মাস। গ্রামের ফসলী জমির আইল ধরে হাঁটছি। চোখের নজর গাছে গাছে। মাঝে মাঝে এদিকে সেদিকে চোখের নজর চলে যায়। হঠাৎ চোখ যায় একটা বাড়ির উপর। চেয়ে দেখলাম এই পাখিটি পাকা পেঁপে খাচ্ছে। দৃশ্যটি দেখার পর এমনই উত্তেজিত হয়ে পড়ি যেন নিজেকে সামলানো মুশকিল। তখন মাথায় কাজ করেনি এটা বাড়ির পিছন দিক নাকি সামনের দিক। চোখ পাখির দিকে। আমি সামনের দিকে এগুচ্ছি। তখনও ক্যামেরায় কোন ছবি ধারন করতে পারিনি। পুরা উত্তেজিত আমি। জগতের কোন জ্ঞান নেই। শুধু একটিই নেশা নীল-গলা বসন্ত বাউরীর পেঁপে খাওয়া ছবি তুলতে হবে।কোন দিক চিন্তা না করেই সেই বাড়ির সীমানা বেঁড়া ভেঙ্গে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করি। (বলে রাখা ভালো বাড়ির সীমানা বেঁড়া ছিলো পাটখড়ির) একেবারে নিরিবিলি পরিবেশ। বাড়িতে কোন মানুষ জন আছে কিনা বুঝাই যায়নি। মনের সুখে ছবি তুলছি। যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি সেই পেঁপে গাছটি ছিলো একটি রান্না ঘরের পিছনে।
ছবি তোলার নেশায় কোন হুঁশ নেই। হঠাৎ কানে শব্দ এলো একজন মেয়ের চিৎকার। শুধু কানে শব্দ ভেঁসে আসলো
কে আপনি?
জোরে শোরে বলে চিৎকারের শব্দ। মুহুর্তর মধ্যে বাড়ির পুরুষ লোকজন আমাকে ঘিরে ধরলো। তখনও আমার কোন হুঁশ নেই। এমন সময় পাখিটি উড়ে চলে যায়। তাকিয়ে দেখি ৫ জন পুরুষ মানুষ আমার পিছনে ও পাশে। একজন বলে উঠলেন-
আপনার পরিচয়?
কোথা থেকে আইছেন? বাড়ির ভিতরে ঢুকছেন কেমনে? আপনার হাতে এত বড় এই যন্ত্রটি কি? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমিও হতভম্ব হয়ে চুপ করে তাকিয়ে আছি লোকগুলির দিকে। একজন বলে উঠলেন বোবা নাকি? কাচারী ঘরে নিয়ে চল? তাদের একজনকে বললাম ভাই এক গ্লাস পানি খাবো। মহিলা গলার আওয়াজে ভেসে আসলো “ইশশ..চোরে আবার জল চায়”। তাতে বুঝলাম বাড়িটি হিন্দু পরিবারের বাড়ি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো বাড়ির সামনে কাচারি ঘরে। সেখানে একটি বেঞ্চে বসানো হলো। একের পর এক প্রশ্ন। আমিও সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। তখন আমার একমাত্র শ্যালকের নাম বললাম। নামটা শুনে মনে হলো তাদের মাথায় বিশ্বাস ও সুখের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের মধ্যে একজন আমার শ্যালককে কল দিয়ে বললো দাদা একটু বাড়িতে আহা লাগে যে আফনের। একজন মানুষ পরিচয় দেবার নাগছে তিনি নাকি আফনের বুনাই।
আমার শ্যালক ঘটনা বুঝতে পেরে তার বোন মানে আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সুশীল শীলদের বাড়িতে হাজির। বাড়ির মহিলারা আমার স্ত্রীকে দেখে মহা খুশী। কেউ কেউ বলছে দিদি জামাই বাবু আপনার স্বামী। যাক বেঁচে গেলেন জামাই বাবু।
পরবর্তীতে অনেক হাসি তামাশার মধ্য দিয়ে দুপুরে সুশীল শীলের বাড়িতে মোরগ পোলাও আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে আমার মুক্তি হয়। এখনও শ্বশুড় বাড়িতে গেলে সেই সুশীল শীলের বাড়িতে যাই। হাসি তামাশা করি। ওরাও দুলাভাইয়ের মতন আমাকে দেখে।
৩২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
😂😂😂😂😂
ইঞ্জা
হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেলো, কি নাজেহাল অবস্থা, জানিনা এমন কত কট খেয়েছেন আপনি এই পাখির পিছনে ঘুরে, বসন্ত বাউরী খুব সুন্দর পাখিটি, মুগ্ধ না হয়ে পারিনি ভাই, অনুরোধ রইলো নেক্সট লেখা দ্রুত দেওয়ার জন্য।
শামীম চৌধুরী
❤️❤️❤️
শামীম চৌধুরী
<3
ইঞ্জা
😄
জিসান শা ইকরাম
ছবি তোলার নেশা মারাত্মক এক নেশা। এরপর যদি পাখির ছবি হয়। অসীম ধৈর্য প্রয়োজন পাখির ছবি তুলতে। আপনার সে ধৈর্য আছে বলতেই হবে।
পাকা পেঁপে খাচ্ছে এই পাখির ছবি তোলার নেশায় আপনি বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন।
ছবি তোলার গল্প যে ভাবে উপস্থাপন করলেন, তাতে যে কোন গল্পকারই হার মানবে আপনার কাছে।
মজা পেলেও আপনার নেশা দেখে অবাক হলাম, ভালোও লাগলো এমন একজন পাখি প্রেমিক আমাদের সোনেলায় আছে এটি ভেবে।
প্রতিটি ছবির পিছনেই একটি গল্প আছে,
আমরা আরো গল্প জানতে চাই।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
জ্বী জিসান ভাই, আমার প্রতিটি ছবি একেকটি গল্প।
ফটোগ্রাফী আসলেও আমার একটা নেশা। দোয়া করবেন যেন সুস্থ্য থাকতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা ভাগ্যিস কিল ঘুষি দেয়নি।অনেক হাসলাম।এমনো হয় যখন কাজের নেশাটা চরমে পৌছায়।ভাল লাগল পিছনের গল্পটা।
শামীম চৌধুরী
ভাই চড় থাপ্পড় খাওয়ারও অভিজ্ঞতা আছে। অন্য কোন লেখায় না হয় জানবেন। আরো কত যে ঘটনা দীর্ঘ ষোল বছের।
ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
প্রদীপ চক্রবর্তী
দারুণ হাস্যরসাত্মক।
ভালো লাগলো।।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…। আপনাকে লেখাটা হাসাতে পেরেছে শুনে আমিও হাসছি।
তৌহিদ
কি সুন্দর পাখি আর দেখতেও দারুন! ছবি তুলতে অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন। আমি হলে জীন্দেগীতে পারতামনা ভাই। সোনেলায় আপনার প্রতিটি লেখাই অমুল্য। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভাই।
শামীম চৌধুরী
আমিও কৃতার্থ সুহৃদ। তোমাদের সাথে যুক্ত থেকে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারছি বলে আমিও ভাগ্যবান। ভালো থাকবে নিরন্তর।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই
নাজমুল হুদা
সত্যিই অনেক সুন্দর দৃশ্য । পাখিটি আরো সুন্দর যেন ও ভাব নিছে আপনি ছবি তুলার জন্য ।
গল্পটি আরো মজার একটা পাখির জন্য আপনাকে পরিবার থেকে উদ্ধার করে আনতে হলো।
যদি হাতে ক্যামেরা না থাকত , এতক্ষণ হামলা শুরু হয়ে যেতো ।
শুভ কামনা রইলো দাদা
শামীম চৌধুরী
নাজমুল ভাই,
হাতে ক্যামেরা না থাকলে এই দুঃসাহস কোনদিন দেখাতে পারতাম না। আবার এই ক্যামেরার বদৌলতে অনেক জায়গা থেকে রক্ষাও পেয়েছি। সম্মানও পেয়েছি। আবার তিরস্কারও হয়েছে। বহুরূপী জীবন শখের ছবিয়ালদের।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর পাখিটি পেঁপে খাচ্ছে রামে খেতেও দিলেন না। আবার বাগড়াও বাদল। যাক সমাপ্তি আনন্দের তাতেই খুশি।
মোঃ মজিবর রহমান
দুঃখিত রামে নই আরামে হবে।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…..মজিবর ভাই, শুধু পাখিটির খাবারই দেখলেন। আপনার ভাইয়ের পরিশ্রমের কথা ভাবলেন না।এর পর থেকে পাাখি দেখলে আপনার কথা ভেবে আরামে খেতে দিবো। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
পাখিটা দেখতে খুব সুন্দর। আপনার লেখা পড়ে পাখি ভালো করে চিনে নিলাম। এরপর যদি কখনো দেখতে পাই চট করে নাম বলে দিতে পারবো।
ছবির পিছনের গল্প পড়ে হাসি পেলো,,, ছবি তুলতে কি না শেষ পর্যন্ত ভিতর বাড়ির রান্নাঘরের কাছেই গেলেন !! তবে ভালোই হয়েছে, আত্মীয়ের তালিকায় নতুন কিছু মুখ যোগ হয়েছে। তারাও আপনার মতো একজন গুণি মানুষকে তাদের মাঝে পেলো।
ভালো থাকবেন, আর ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে এমন গল্পে গল্পে আমাদের পাখি দেখাবেন। শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
আপুউউউউউউউউউ……….অনেক শুভ কামনা রইলো।
সঞ্জয় মালাকার
সুন্দর পাখিটি শান্তিতে খেতে দিলো না.।
অনেক হাসলাম অনেক আনন্দিত হলাম
শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
হাসাতে ও আনন্দ দিতে পারাতে নিজেকে মিঃ বিন মনে হচ্ছে। হা হা হা
সঞ্জয় মালাকার
😤😤😤😤😉
ছাইরাছ হেলাল
ছবি, ছবি তোলার নেশা, তাও আবার পাখি!!
ভাবছি বছর দশেক আগে দেখে হলে অনেক কিছু উল্টে পাল্টে দেখতে পারতাম একসাথে।
পাখি শিকারের নেশা ছিল, মারাত্মক।
পাখির পিছু নিয়ে এক বনেদি বাড়ীর পিছনে রান্না ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ার অবস্থা,
প্রথমে কিন্নর, পড়ে হেড়ে গলার আওয়াজ। কে কে আপনি? এই পিছনে?
পার পেয়েছে সহজেই, যাদের বাড়ী এসেছি (শ্বশুর বাড়ি) তাদের নাম বলায়।
এটিও অতি কাছের আত্মীয় বাড়ি পড়ে জেনেছি।
না বলে পারলাম না।
শামীম চৌধুরী
বাহ। হেলাল ভাই।
আপনার আমার ঘটনা, লোকেশান, বাড়ির রান্নাঘর সবই তো দেখছি কাকতালীয় ভাবে মিলে গেল।
😂😂😂😂😂
আরজু মুক্তা
পাখি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি।।নানা বর্ণের পাখি আর তার গল্পও অনেক ভালো লাগলো।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপু। আপনাদের ভালো লাগে জেনে কাজ করার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
শাহরিন
‘শুধু কানে শব্দ ভেসে এলো’ এই লাইন পড়ে মনে হচ্ছিলো ২/৪ খানা বাড়ি মনে হয় দিয়েই দিলো। পরে বুঝলাম, নাহ!!! এই যাত্রায় বেচে গেছেন। প্রতিটি ছবির সাথেই অনেক স্মৃতি থাকে। আমি তাই সব সময় কিছু ছবি প্রিন্ট করে ফ্রেমে রেখে দেই। ভাল স্মৃতি মনে পরে যায় যখনই ফ্রেমে চোখ পরে।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা সোনেলার দোয়ায় বেঁচে গেলাম এই যাত্রায়।
সিকদার সাদ রহমান
প্রতিটি কাজের পিছনেই একটা গল্প থাকে। স্বার্থক হলে শুরু হয় নতুন গল্প তা না হলে বিলিন হয়ে যায় পেছনের গল্পের গল্প।
শামীম চৌধুরী
ভাইয়া, আমার প্রতিটি ছবিই একটি গল্প।