JBও বন্দে মায়া লাগাইছে
পিরিতি শিখাইছে
কি জানি কি দিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে....জেলের ভিতর বাম হাতের দু আঙ্গুলের ভাঝে জলন্ত সিগারেট টানে টানে সূরের তালে জ্বলছে কয়েদীদের জীবন।ছোটন কিছুটা দূরত্ত্বে ছোটন একাকিত্ত্বের অবসান ঘটান ভবিষৎ জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিয়ে যদি এবারের মতো জেল হতে বের হতে পারেন তবে এ নষ্ট জীবন ছেড়ে আট দশ জন স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করবেন।ফুলীকে সে আর কষ্ট দিবে না তাকে নিয়ে সাজাবেন তার সংসার জীবন।ভাবনার এক পর্যায়ে তার সামনে এসে দাড়ান এক সময়কার ত্রাস ও রাজনৈতিকবিদ জুবায়ের খান।সে এখন অপজিসন পার্টির বলে জেল খাটতে হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্র এবং ত্রাসের মামলায়।তাকে দেখে ছোটন দাড়িয়ে তাকে সালাম দেয়।
-সালামুআলাইকুম ভাই,
-অআলাইকুম,তুমি এখানে?
-হ,ভাই ঐ যে গুম হইছে ...সেই মামলায় আমাকে আটক করেন।
-হুম সমস্যা নেই সময় হলে বেড়িয়ে যাবে,,,তা তোমার ভাইয়ের খবর কি?শুনলাম গুমে নাকি তোমার ভাইয়ের হাত আছে।
সব খবরই তার জানা তবুও খবর শুনতে চাচ্ছেন ছোটনের কাছ থেকে।
-না ভাই কি যে বলেন,কিছু দিন আগে নবীর সাথে বিদ্যুতের টেন্ডার নিয়ে তার সালার সাথে ঝগড়া হয়েছিল,ভাই সেটা জানতো।
-নবীর সালাতো নবীর ব্যাবসাই দেখাশুনা করত।
-হ,তবে তার সালাও মনে মনে চাইত ব্যাবসাটা তার নিজের কি ভাবে করা যায়,সেই চিন্তায় টেন্ডারে নবীর ফার্মটা না দিয়ে নিজেরটা দিয়ে নবীর নাম ভাঙ্গিয়ে কাজটা নিজের করে নেয় তার পর হতেই তাদের সালা দুলা ভাইয়ের মাঝে গেঞ্জাম শুরু হয় অবশেষে নবী সহ আরো ছয় জন আদালতে সেই মামলার হাজিরা দিতে এসে গুম হন।
-কি জানি, আমি যতদুর জানি তোমার ভাই আরেক বড় ভাইয়ের ইশারায় ওদের গুম করে।
-হতেও পারে ভাইয়ের সাথেও নবীর দন্দ ছিল আতে ঘা লাগার মতো।
-ঠিক আছে আবার কথা হবে,কোন সমস্যা হলে জানাবে।
-ঠিক আছে ভাই,সালামুআলাইকুম।
জুবায়ের তাকে আশা দিয়ে চলে গেল।জেলের অন্যান্য কয়েদীরা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছিল তাদের কথোপকতন।এ দিকে ফুলী রাত দিন দুশ্চিনতায় থাকেন কাজ কর্ম কিছুতেই তার মন বসে না সারাক্ষন কেবল ছোটনের কথাই মনে পড়ে, হয়তো তাকে বেশী ভালবেসে ফেলেছিল বলে।ফুলী খালাকে সঙ্গী করে ভাইয়ের সাথে দেখা করবেন বলে ভাইয়ের বাসার দিকে রওয়ানা দেন।ভাইয়ের বাসায় এসে নক করেন সেখানকার এক রক্ষিকে ভাইকে বলতে যে, ছোটনের আত্ত্বীয় এসেছেন তার সাথে দেখা করতে।কথা মতো সে ভিতর থেকে কিছুক্ষন পড় এসে তাদেরকে ভাইয়ের ড্রইং রুমে বসিয়ে চলে যান।বেশ গোছানো ড্রইং রুমটি অবৈধ পয়সায় কত কিছু দিয়ে যে সাজিয়েছেন রুমটি তা ফুলীকে ভাবিয়ে তুলে।এক সময় ভাই আসেন নিয়মানুযায়ী ফুলী ভাইকে দাড়িয়ে সালাম দেন।ভাই হাত নেড়ে বসতে বললেন।
-ভাই আমি ফুলী,ছোটনের পরিচিত।
-হুম তোমার কথা শুনেছি ছোটনের কাছে।তা.....
ঠিক সেই সময় ভাইয়ের মোবাইলে রিং বাজে।ভাইকে কে ফোন করেছেন তা দেখে রিসিভ করেন।
-কি হইছে অসি...কোন খবর?
ফোনের ওপারের কন্ঠে কথাগুলো যতই শুনছেন ততই ভাই ধীরে ধীরে বিমুর্ষ হয়ে পড়ছেন।এক সময় ভাই ফোনে উত্ত্বেজিত হয়ে পড়েন।
-মাসটা শেষ না হতেই তো মানতিটা পেয়ে যান...এবার কিছু কাজ টাজ করুন...আমার বাড়ীতে জরুরী ভিত্তিতে ফোর্স নিয়োগ করুন।
ফোনটা রেখে ভাই এবার তাদের সোফায় বসিয়ে নিজে তার বাড়ী বরাবর মেইন রাস্তায় এসে অত্যান্ত অস্থিরতায় কিছুক্ষন পায়চারি করে রক্ষিদের ভাল মতো পাহাড়া দিতে বলে আবার ভিতরে চলে যান।ভাইকে এমন অস্থির অস্থির ভাব দেখে ফুলী তাকে জিজ্ঞাসা করিতে সে এড়িয়ে যান।
-ভাই কোন সমস্যা!
-না...তবে সমস্যা মনে হয় হবে...আচ্ছা এক কাজ করুন আপনি আগামীকাল সকালেই  আমার এখানে আসবেন আপনাকে নিয়ে এক মন্ত্রীর বাসায় যাবো... ছোটনের দেখি কিছু করা যায় কি না।মামলাটা বেশ বে-কায়দায় ফেলে দিবে ছোটনকে।
-সে তো আপনার কাজই করত।
-হ্যা সে জন্যইতো মায়া হয়,তবে ভয়ের কিছু নেই আমি মন্ত্রীর সাথে কথা বলে রেখেছি পূর্বেই, কাল আপনাকে নিয়ে গেলে কিছু একটা সুখবর নিয়ে আসতে পারব।
ফুলী চলে আসার পর কয়েক দফা বেশ কয়েজ জনের সাথে কথা বলেন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল তার কোন মহা বিপদ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।ঠিক সেই সময়ে খবর আসে তার জুয়া আর অশ্লীল যাত্রা আসরটিতে হামলা করেছে জনতা।তৎক্ষনাত বেশ মুষড়ে পড়েন ভাই।সাধারন এক ট্রাক হেলপার থেকে ভাগ্যের সুপ্রসহ্ন চক্রে অল্প কয়েক বছরে বণে যান এক ছত্র ক্ষমতাবান আর প্রতি দিন লক্ষ কোটি কোটি অর্থের মালিক তাও আপনা আপনিই খদ্দেরা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে থাকেন কেউ মাসে কেউ বা প্রতি দিন সেই টাকায় ভাগ দেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতান থেকে শুরু করে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত।

ফুলীর চোখের জল যেনো ফুরিয়ে যাচ্ছে, ভাবনার আকাশে ভঙ্গুর জীবনে আসা ভরসার দেবতাকে হারাতে বসা ফুলী যেনো অসহায়ের মতো জীবনকে ধরে রেখেছেন ধরনীতে।কখনো সুখ কখনো দুঃখ কখনো বা এর সমন্বয়ে ঘটা জীবনকে উপলব্দি করতে পারেননি অনবরত দুঃখ কষ্ট যেনো জীবনকে অসার করে দেয়,ছোটনকে ছাড়া বেচে থাকার আর কোন আগ্রহই যেন আর নেই।কিছুক্ষন পরই বেড়িয়ে পড়বেন ফুলী ভাইয়ের সাথে।ছোটনকে এ যাত্রায় বাচাতেই হবে যে করে হোক,প্রয়োজনে মন্ত্রীর পায়ে ধরে ছোটনের জীবন ভিক্ষা চাইবেন।
আজ সে ছোটনের প্রথম দেয়া নীল শাড়ীটি পড়ছেন।আয়নায় তাকাতেই ফুলী তার পিছনে খোলা পিঠে হালকা মৃদু ছোটনের হাতের স্পর্শ অনুভূত হলে চমকে গিয়ে মৃদু হাসেন।আয়নাতে কপালে লাল টিপটি দেখেও মনে  পড়লো না তার ছোটনের নিষেধগুলো ।এক দিন লাল টিপ পড়াতে তাকে যা ইচ্ছে তা বলেছিল, ছোটনের রাশিতে লাল টিপ নাকি অলক্ষী তার পছন্দের নয়।সে যদি তার কোন আত্ত্বার আত্ত্বীয় দেখতো লাল টিপ পড়তে তখন সে ভেবে নিতো লাল টিপ পড়ুয়া মানুষটি তার জীবন থেকে এক দিন না এক দিন চির তরে হারিয়ে যাবেন।ছোটন এমন তথ্য পেয়েছিলেন এক অদৃশ্য পাগলা বাবার কাছ থেকে সেই থেকে তার জীবনে ঘটেছিল তার বাস্তবতা।সেই দিন থেকে ফুলী আর কখনোই লাল টিপ দেয়নি তার কপালে।এমনটি জানার পরও আজ সে ভূলে যায়,কিসের মোহে যেনো কপালে পড়েন টকটকে অস্থমিত সূর্য্যের ন্যায় লাল টিপটিই।

খালাকে সাথে করে ফুলী বেরিয়ে পড়েন ভাইয়ের বাসার উদ্দ্যেশে।পৌছে ফুলী লক্ষ করলেন ভাই যেনো তার অপেক্ষায় ছিলেন সে যাবার সাথে সাথে প্রাইভেট কারটি স্টার্ড দিলেন।ভাই সামনের সিটে এবং ফুলী ও খালা পিছনের সিটে বসেন তাদের সাথে আরো এক জন অপরিচিত স্মার্ট মেয়ে ছিল।গাড়ীতে কারো সাথে তেমন কোন কথা হলো না ফুলী সে সময়টা ছোটনের সাথে ভবিষৎ কল্পনার সুতো বুণতে থাকেন।টেক্সি যথা সময়ে যথা স্থানে গিয়ে পৌছল।অপরিচিত মেয়েটির সাথে ভাই তাদের যেতে বললেন ফুলী প্রথমে একটু অনিহা প্রকাশ করলেও ভাইয়ের আশ্বাসে তারা মেয়েটির সাথে লিফটে উঠেন।

চলবে....

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১৩তম

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ