আকাশঁটা আজ মেঘাছন্ন ভোর হতেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে এ রকম পরিবেশ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কর্মব্যাস্ততায় অতিরক্ত অর্থের অপচয় ঘটে।যারা মাসিক বেতনে চলেন তাদের জন্য কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়।কাজে যোগ দেয়ার সময় চলে যাচ্ছে। ফুলীঁ ঝির ঝির বৃষ্টির মাঝেই বেড়িয়ে পড়েন কাজের উদ্দ্যেশ্যে।বৃষ্টিতে ভিজেঁ পায়ে হেটে বাস ষ্টপে এসে অপেক্ষা করছে বাসের জন্য।বৃষ্টি হলে যাতয়াতের যান বাহন পাওয়া মুশকিল তাই অগত্যা ফুলীঁ দাড়িয়ে থাকে বাস ষ্টপেসে। এবার আকাশঁ যেন আরো বেশী বে পড়োয়া  হয়ে উঠে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যায় তার উপর মাঝে মাঝে বিজলি চমকাচ্ছে।ফুলীঁর মাথায় বৃষ্টির পানি চুল বেয়ে গাল দিয়ে পড়ছে।ফুলীর পাশে বাস ষ্টপসে দাড়ানো ছিল বেশ কয়েকজন ইয়ং যুবন।বেশ পরিপাটি তাদের পোষাক-আষাক।তাদের মধ্য থেকে একজন অভদ্র ভাবে বার বার তাকাচ্ছেন ফুলীর দিকে।ফুলীঁ নিজেকে আনইজি মনে করছে কারন সেখানে আর কোন মেয়েলোক ছিল না যে অপেক্ষার সময়টা কাটাবে।হঠাৎ সাদা পোষাক পরিহিত কিছু লোক টেক্সি থেকে নেমে বাস ষ্টপসে দাড়ানো ঐসব অভদ্র লোকগুলোকে ধরে টেক্সিতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।।লোকগুলোকে গাড়ীতে তুলার সময় বেশ কথা কাটি হয় এবং ধস্তাধস্তি হয়।টেক্সির লোকগুলোর কমড় থেকে হঠাৎ পিস্তল বের করে বলে আমরা আইনের লোক কেউ কোন ঝামেলা করবেন না বলে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে লোকগুলোকে নিয়ে চলে যাবে এমন সময় ফুলীঁ কথিত আইনের লোকগুলোর মধ্যে ছোটনকে মনে হয় দেখতে পেল।ফুলীঁ অবাক হয় ছোটনতো আইনের লোক নয় তাহলে ফুলীঁর দেখার মাঝে কি সে ভূল দেখেছে এর মধ্যে ফুলীঁর বাস এসে গেলে বাসে উঠে চলে যায় সে তার কর্মস্হলে।

ফুলীঁর কর্মস্হলে যেতে আধ এক ঘন্টা লেট।এইচ আর ডিভিশন তার কর্ম যোগদানে বাধা দেন। এ নিয়ে কিছু কথা কাটাকাটি করে ফুলীঁ,তা দেখে কিছু ওয়ার্কার এগিয়ে যায় ফুলীঁর কাছে।সব কিছু জেনে এইচ আর ডিভিশনকে রিকোয়েষ্ট করে কিন্তু এইচ আর এর আর এক কর্মকর্তা একটি বেফাস কথা বলে ফেলেন যা ওয়ার্কাদের মধ্যে ধীরে ধীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।কিছু ওয়ার্কার সুইং মেশিন থেকে উঠে লাইন অতিক্রম করে বাহিরে আসার চেষ্টা করলে লাইনচীপের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় লাইনচীপ এক ওয়ার্কারকে হালকা ধাক্কা মেরে মেশিনে বসতে বলাতে ওয়ার্কারটি লাইনচীপকে ধাক্কা মারে লোকটি সেখানে মেশিনের উপর পড়ে।এরই মধ্যে জড়ো হয়ে যায় ষ্টাফরা তাদের দেখে ওয়ার্কারাও একে একে মেশিন থেকে দাড়িয়ে পড়ে সবাই এক সাথে জড়ো হতে থাকে।অনেক অফিসার গিয়ে তাদের বুঝাবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন।ওয়ার্কারা একটি দাবী পেশ করেন ব্যাবস্হাপনা পরিচালকের বরাবর....

(y) লাইন চিফ এবং এইচ আর বিভাগের ঐ কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুত করতে হবে।

(y) তাদের বকেয়া নাইট বিল পরিশোধ সহ পাচঁ তারিখের মধ্যে বেতন দিতে হবে।

(y)সরকার বর্ধিত বেতন কাঠামো ঠিক করতে হবে।

(y)সপ্তাহে এক দিন বাধ্যতামূলক ছুটি থাকবে কোন ওভার টাইমও চলবে না।

(y)সবার সাথে আলোচনা না করে হঠাৎ শ্রমিক ছাটাই চলবে না এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি বা দলিল করতে হবে।

এরকম কিছু শর্ত দিয়ে সে দিনের মতন সব ওয়ার্কারা বাহিরে চলে যায়।এ দিকে মালিক পক্ষের মাথায় হাত পেটে লাথি আজ তাদের শিপমেন্টের শিডিউল ছিল তা আর হলো না,সামান্য কথার রেশ ধরে এভাবে ওয়ার্কারদের কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি।কিন্তু ওয়ার্কারতো আর্জেন্টটা বুঝবে না।মালিকের এবার রাগ হলো শিপমেন্টতো বাতিলই হলো,গুণতে হবে কোটি টাকার লোকসান,এভাবে প্রায় সময় কিছু একটা হলেই ওয়ার্কারদের যন্ত্রনা আর সহ্য হয় না  সুতরাং কাল থেকে ফ্যাক্টরী লে অফ ঘোষনা করা হল ।দেখি ওরা কত দিন কাজ না করে থাকতে পারে।কোম্পানী লে অফ ঘোষনা করে থানায় জানিয়ে দেন।

পরদিন অফিস টাইমে ওয়ার্কারা ফ্যাক্টরীতে এসে দেখে ফ্যাক্টরী তালা লাগানো।শুরু হয় গুঞ্জন মালিক তাদের বেতন ভাতা পরিশোষ না করে ফ্যাক্টরী তালা মেরে উদাও।শুরু হয় ভাংচুড় আর মেইন রোড অবরুদ্ধ।প্রায় ঘন্টাখানেক যাবৎ মেইন রোড বন্ধ থাকার পর স্হানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে।ওয়ার্কাররা সবাই মেইন রোড দখলে নিয়েছে তাদের মাঝে ফুলীও ছিল।থানার এক কর্মকর্তা আসেন তাদের সামনে তাদের কথা শুনেন এবং সবাইকে রোডের উপরই বসতে বলেন।সবাই রোডের উপর রোড ব্লক করে বসে পড়ে।পুলিশ অফিসার বুঝানোর চেষ্টা করেন ঠিক সেই সময় ওয়ার্কারদের মাঝ থেকে একজন উঠে পুলিশের নাক বরাবর আঙ্গুল তুলে যা মন চায় বলতে থাকে।

-ঘোষ খোর পুলিশ মালিকের চামচা,মালিকের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আমাদের বুঝাতে এসেছে,আমরা মালিক এখানে না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।

পুলিশ তারপরও তাদের শান্ত থাকতে বলেন কিন্তু কিছুতেই শ্রমিকরা শান্ত হচ্ছেনা।অন্যদিকে এ খবরে আশে পাশের গার্মেন্টসের শ্রমিকরা তাদের সাথে যোগ দিতে থাকে তারা আসবার পথে দু'তিনটি গাড়ি ভাংচুড় করে এবং দুটি টেম্পুতে আগুন দিয়ে রাজপথে তাদের সাথে বসে পড়ে।এরই মধ্যে সংবাদপত্রের রিপোর্টার ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এসে যায়।ঢাকা নারায়ণগঞ্জের রাস্তা প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ বন্ধ।পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপরের লেভেলের এক সাংসদের সাথে টেলিফোনে কথা বললে সাংসদ সাফ জানিয়ে দেন কি ভাবে রাজপথ ক্লিয়ার করবে সেটা তার ব্যাপার যদি লাশ পড়ে তাতেও আপত্তি নেই তবুও রাজপথ দশ মিনিটের মধ্যে ক্লিয়ার চায় বলে পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্শেদ দেন।পুলিশ কর্মকর্তা খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন।কি করা যায় ভাবছেন তার সঙ্গীদের নিয়ে তার শুরু করল পুলিশি কৌশল।শ্রমিম সবাইকে সারি বদ্ধ ভাবে শান্ত হয়ে বসতে বলেন এবং আশ্বাস দেন কিছুক্ষনের মধ্যে মালিক আসবে এবং কথাও বলবে।পুলিশ অফিসারের এমন আশ্বাসে শ্রমিকরা সবাই শান্তভাবে বসে পড়েন।শ্রমিকরা বসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ এক যোগে কয়েক'শ  পুলিশ পিছন থেকে লাঠি চার্জ শুরু করেন।শ্রমিকরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে এলোপাতালি পালানোর চেষ্টা করে ।মাত্র দশ পনের মিনিটেই রাজপথ ক্লিয়ার হওয়ার সাথে সাথে পুলিশের সহযোগিতায় গাড়ী চলাচল শুরু করে।লাঠি চার্জের আঘাতে ফুলীঁর মাথা ফেটে যায় ফুলীকে পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্হানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করান।

চলবে....

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীঁরা০৭

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ