ঘুরে এলাম সোনাদিয়া দ্বীপ।

শামীম চৌধুরী ২৭ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ১২:৩০:০২পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ২৩ মন্তব্য

ভার্জিন বীচের জন্য বিখ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপটিকে ঘিরে গড়ে ওঠতে পারে দেশের এক সম্ভাবনায় পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী ছোট্ট এ দ্বীপটি ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে পর্যটকদের। এই দ্বীপে পর্যটকদের জন্য কোন সুবিধা গড়ে না ওঠলেও আগ্রহী হাজার হাজার পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ প্রতিবছর সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ দ্বীপে শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি আসে। সুদূর সাইবেরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উষ্ণতার খোঁজে বেরিয়ে পড়া এই পাখিরা হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায়। এরমধ্যে বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তপ্রায় Spoonbill Sandpiper বা চামচ-ঠুঁটো-বাটান পাখি বা কাদাখোঁচা দেখা যায় সোনাদিয়ায়। দেশের আর কোথাও এই পাখির দেখা মেলে না। সারা বিশ্বে এ প্রজাতির মোট পাখির ১০ শতাংশ রয়েছে সোনাদিয়ায়।

বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ‘নর্ডম্যান সবুজ পা’ পাখির দেখা মেলে এখানে। এ দ্বীপটি বাংলাদেশের পাখির ২০তম গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য। লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমও এ দ্বীপে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। সাগরঘেরা এ দ্বীপে রয়েছে ১ হাজার ২১৫ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল। এর মধ্যে ৫৬৭ প্রকারের উদ্ভিদ, ১৬২ প্রকারের শামুক, ২১ প্রকারের কাঁকড়া, ১৯ প্রকারের চিংড়ি, ২ প্রকারের লবস্টার, ২০৭ প্রকারের মাছ, ১২ প্রকারের উভচর প্রাণী, ১৯ প্রকারের সরীসৃপ ও ২০৬ প্রকারের পাখি।


আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব গত (২০১৫ সাল) বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচটি স্থানে পাখি শুমারি করে। শুমারিতে ওই পাঁচ স্থানে ১ লাখ ১২ হাজার পরিযায়ী পাখি পাওয়া গেছে। শুমারিটি করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, দোমার চর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল ও সোনাদিয়া দ্বীপে। এরমধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপে ৯২০টি ছোট ধুলজিরিয়া ও ২৫০টি বড় ধুলজিরিয়া পাখির দেখা মিলেছে। এ ছাড়া এখানে বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন নয়টি চামচ ঠুঁটো বাটানেরও দেখা মিলেছে। দেখা পাওয়া গেছে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ছয়টি নর্ডম্যান সবুজ পা।
এখানে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন গড়ানবনও। এখানকার গড়ানবন পৃথিবী বিখ্যাত বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। প্রজাপতির প্রজননের অভয়ারণ্য সোনাদিয়া। অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মিলন মেলাস্থল এই দ্বীপ। রয়েছে দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। দ্বীপের অভ্যন্তরে রয়েছে গড়ানবন ঘেরা ছোট ছোট নদী। এসব নদীতে ভ্রমণ করতে পর্যটকরা বেশ আনন্দ পায়।

১৭-১৮ জানুয়ারী দুইদিনের সফর শেষে যখন ঢাকায় ফিরি তখন বার বার সোনাদিয়া দ্বীপের স্মৃতি ভেসে আসছিলো। হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করা পরিযায়ী পাখিগুলি দেখলে মনে হয় এই দ্বীপই যেন তাদের নিজস্ব আবাসস্থল। তাই সকল ভ্রমন পিয়াসীদের নিকট আমার আবেদন রইলো যারাই এই দ্বীপ বা কোন হাওর এলাকায় যাবেন তারা যেন পরিযায়ী পাখিদের বন্ধু হয়ে থাকেন। একটা কথা মনে রাখবেন। পাখি ও বন্যপ্রানী বেঁচে থাকলে প্রকৃতি বেঁচে থাকবে। আর প্রকৃতি বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবে। তাই প্রকৃতির অলংকার এসব বন্যপ্রানী ও উপকূলীয় পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের জন্য  অভয়াশ্রম গড়ে তুলে নিরাপদ নিশ্চিত করি।

সবাইকে ধন্যবাদ।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ