পূঁর্ণিমা গত চাদেঁর আলো জমিনে পড়তে পড়তে মধ্য রাত হবে।তাই চারদিক গভীর অন্ধকার।অন্ধকারের মাত্রা এতো ভয়ংকর যে পাচঁ ব্যাটারির টর্চ লাইটের আলোতেও imagesযাতায়াতের পথ অন্ধকার মনে হয়।গভীর অন্ধকারে গ্রাম্য ডান পিটের ছেলে সজল,সুজন,রতন,তাদের প্রতি রাতের কাজের মতো আজোও ঘরের বাহিরে বের হবে।সজলদের বাড়ীর কয়েক কদম এগুলে আর এক জীর্ণ বাড়ী অবস্থিত তার পাশে বিশাল বাশঁ বাগান।পথের দু'ধারে সেই বিশালাকৃতি বাশঁ বাগানের মধ্য দিয়ে সজলকে একা যেতে হবে সেখানে যেখানে তাদের পূর্ববর্তী প্লান মত একটি নিদিষ্ট স্থান ঠিক করে ছিলো।একই স্থানে আরো দুই বন্ধু সুজন ও রতন মিলিত হবে।
প্রচন্ড শীত পড়েছে এবার পাশা পাশি কূয়াশাঁ পড়ছে যেন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।এমনি শীতের রাতে সন্ধ্যা না হতে মানুষ জন ঘর বন্দী হয়ে পড়েন,কেউ বা বাড়ীর উঠোনে খড় কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে খোশ গল্পে মেতে থাকেন।তেমনি আগুন জ্বালানোর আড্ডায় জীর্ণ বাড়ীর উঠোন হতে এক পিচ্চি কাকে যেনো হঠাৎ চলে যেতে দেখে চিৎকার দিয়ে ঘরের ভিতর এক লাফে ঢুকে পড়েন।তা দেখে পিচ্চির এক চাচা তাকে ধমকের সহিত প্রশ্ন করতে থাকেন।
-কি অইল তুমি এভাবে কানছো কেন?আহো বাইরে আহো দেহি কি অইছে।
পিচ্চি ভয়ার্তবস্থায় চাচার সাথে উঠোনে গিয়ে আঙ্গুল উচু করে বলল।
-ঐ যে... ঐহান দিয়া ভুতের মতো কেডা যেনো দৌড় দিল।
পিচ্চির চাচা তার দেখানো পথের দিকে তাকিয়ে আকাশেঁর দিকে তাকাতেই আৎকে উঠেন।তাদের বাড়ীর কয়েক কদম দূরেই একটি বিশাল বাশঁ ঝাড়,সেই বাশঁ ঝাড়ের বেশ কয়েকটি বাশঁ গাছের অগ্র ভাগের দাপড়া দাপড়ি দেখতে পেল সে।কখনো কখনো একে অন্যের আলিঙ্গন,আবার হঠাৎ শাঁ শাঁ শব্দে বিচ্ছিন্ন।পিচ্চির অতি ভক্তি শুজুর টাইপের চাচা তৎক্ষনাত চিৎকার করে,"লা হাওলা অলাকুআতা...."  বলতে বলতে আগুন নিভিয়ে সবাইকে ঘরের ভিতর চলে যেতে বললেন।ভয়ে নিজেও ঘরে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে দিলেন।কথিত আছে বাশঁ বাগানে নাকি মাঝে মাঝে এমন দৃশ্য দেখা যায়,তেমন কোন বাতাসের বেগ না থাকলেও ঐ বাশঁ গাছের আগাগুলোকে অস্বাভাবিক ভাবে শাঁ শাঁ শব্দ সহ মিনিট পাচেক থেমে থেমে নড়াচড়া করতে থাকে তা এলাকার অনেকেই দেখেছেন।লোকজন বাশঁ গাছ তলায় জড়ো না হওয়া পর্যন্ত তা থামে না এবং যা পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ভোগ দিতে হয় নতুবা এলাকা জুড়ে কোন এক অঘটন ঘটে থাকে এমন ঘটনা যদিও এখন তেমন দেখা যায় না তথাপি ঐ বাশঁ বাগানের পথ দিয়ে সহজে কেহ ভয়ে যেতে চায় না।

ইতি মধ্যে ভয়ে সজলের পায়ের তলার মাটি ক্রমশতঃ সরে যাচ্ছে।সারা শরীর শালাবৃত্ত হলেও হাতে টর্চ লাইট না নিয়ে আসতে ভুল করেনি কিন্তু বাশঁ বাগানের মধ্য পথে এসে সজলের কর্ণ শ্রবণে একটি অতি পরিচিত শব্দ অথচ ভয়ংকর৴৴৴৴ও.ও.ও.ওওয়াও ওওয়াও...ও ওয়াও ওয়াও আবার এরকমও শব্দ হয় ৴৴৴হু হু হু হুও হুওয়াও হু হু হু ওয়াও ওয়াও....এ রকম অদ্ভুদ কিছু শব্দ অনবরত সজলের কানে আসছিল,মনে হচ্ছিল দু'জন মানুষ যেন ঝগড়া করছেন।হঠাৎ টর্চ লাইটের আলো মারল লক্ষ্য স্থানে তৎক্ষনাত সে ভয়ার্ত চিৎকার দিল।তার শরীর যখন বাশঁ গাছে ধাক্কা লাগে অমনি বাশঁ পাতার বৃষ্টি স্নান শুরু হয়,আঝোড়ে ঝড়ে পড়তে থাকে অসংখ্য বাশঁ পাতা যা সজলের নাকে মুখেও পড়ল,ভীষন ভয়ে সে মাটিতে বসে পড়ে।জলন্ত লাইটটি হাত হথে খসে পড়ে মাটিতে গড়া গড়ি করল।গড়া গড়ির এক পর্যায়ে লাইটের আলো আবারো সেই জ্বলন্ত দু'জোড়া অপ্রত্যাশিত উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলো।যতই আলো বৃত্ত দ্বয় কাছে আসছে,ততই সজলের শরীরের তাপ মাত্রা বাড়তে থাকে।যদিও শীত কাল তথাপি ভয়ে গরমে সব পোষাক খুলে ফেলল সে।অবশেষে আলো বৃত্ত তার চোখ বরাবর দিয়ে চলে যায় তখন সজল বুঝতে পারে৴৴৴এ তো হালার বিলাইরে....।সালা পাতা গুলো সব মনে হচ্ছে বুড়ো হয়ে গেছে তাই একটু ধাক্কায় ঝড়ে পড়েছে।নিশ্চিত হলেন সে এখানে কোন ভয় পাবার কারন নেই।সে ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়নের পোষাকে লেগে থাকা ধূলো বালি হাত দিয়ে থাপরিয়ে পরিষ্কার করে রওয়ান দিলো নিদিষ্ট স্থানে পৌছতে।মনে যদিও ভয় নেই তবুও যেতে যেতে মুখে আ্ল্লাহ রসূলের নাম যপতে ভুলেনি।

আগ থেকেই এসে বসে আছে একটি নির্জন পুকুর ঘাটে রতন সুজন।শুধু সজলের আসতে একটু দেরী হলো।তবুও ওরা নিজের মধ্যে তর্ক আর বাড়ালো না।ওরা ব্যাস্তার সহিত image_106944_0লাউ চুরিতে নেমে পড়ল।এর মধ্যের ওদের সলাপরামর্শ হলো কে কি ভাবে কাজ করবে।দূর থেকেই দেখতে পেলো লাউয়ের মাচায় অসংখ্য ঝুলন্ত লাউ যেনো লাউয়ের হাট।
-শোন তুই কয়েকটা জালি লাউ ছিড়বি আর তুই দুইটা বড় লাউ ছিড়বি।কাল যোলা বাতিতে মুখ মজা করে খাবো, জালির ভর্তা আর রুইয়ের মাথা দিয়ে লাউয়ের ঘটা।
লিডারসীপের সহিত কথাগুলো সজল ওদের দু'জনকে লাউয়ের মাচার ভিতরে চারদিক ভাল করে দেখে ঢুকতে বলে।সজল একটু পরেই আসবে বলে ওদের পাঠিয়ে দিল।ওরা মাচার কাছা কাছি গিয়ে তৎক্ষনাত দৌড়ে ফেরত আসে সজলের কাছে।দুজনই এমন ভাবে হাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছে ওরা।
-কি রে এ ভাবে দৌড়াইয়া চলে আইলি....আমিতো আইতাছিলাম।
-নারে ভাই ওহানে আর যামু না।
-কেনো কি অইছে?
-তুই গিয়া দেখ....মাচার মাঝ খানে ইয়া বড় একটা ভূত খারাইয়া আছে।আমাগো দেহার লগে লগে করমর করমর শব্দ কইরা উঠল।....তুই যা আমি যাবো না।
-চলতো কই দেহি...এতো ভয় পেলে কি হবে,কাল যে আমাগো যোলাবাতিতে তরকারি দিতে হইব তা পাবি কোন থেকে?টাকাওতো নেই যে কিনে দেব।চল আমার লগে লগে চল।দেহি কোথাকার ভূতটুথ।
সজল যদিও সাহস নিয়ে এ গুচ্ছে তার পরও কিছুটা ভয়তো মনে আছেই সে ভয় মনে ধারণ করেই এগিয়ে গেলো লাউয়ের মাচার দিকে ওরা দুজন পিছু পিছু।নিঃশব্দ কুয়াশাঁ ছন্ন শীতের সন্ধ্যা,শিশিরে ভেজাঁ ঘাসগুলোকে পায়ে মাড়িয়ে এগুচ্ছে তারা।সজলের হাতে টর্চ লাইটি এখনো জ্বালাচ্ছে না কারন আলো দেখতে পেলে লোকজন জেনে যাবে তাই লাইট আপাতত বন্ধ।মাচার কাছা কাছি গেয়ে অবাক সজল।মাচার উপরে ভূতের মতো কে যেনো কালো পাঞ্জাবি পড়ে দাড়িয়ে আছে।দু হাত মেলে দিয়ে এ দিক সে দিক নেরে জানান দিচ্ছে কেউ চুরি করতে এলেই তার ঘাড় মটকে খাবে।সজল এবার লাইটের আলো মারল সে দিকে।লাইটের আলো গিয়ে পড়ল ভূতের চোখে।ভূতের জ্বলন্ত চোখ ঘুড়ানি দেখে পিছনে থাকা রতন ও সুজন পিছনেই দৌড়ে চলে গেলো,সজল তা বুঝতে পারেনি।সজল একাই লাইট হাতে নিয়ে এগুচ্ছে।হঠাৎ তার কানে এলো করমর করমর শব্দ আর হাম্বা শব্দের ন্যায় এক বিকট চিৎকার,পিছনে ফিরে দেখে ওরা দুজনের একজনও নেই তাহলে পিছন থেকে ভূত কি ওদের!।সে ভয়ে সেখানেই সে ফিট।

চলবে।

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ