গল্প: প্রতিশোধ

শিপু ভাই ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ০৬:০২:৪০অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

১২ বছর পর দিয়াখালিতে এল ইমু। ঢাকায় বসেই মজিদ মেম্বারের সমস্ত ডিটেইলস জেনেছে ও। কখন মজিদ বাজারে আসে কখন ফিরে যায়, কোন দোকানে চা খায়, আসা যাওয়ার সময় সাথে কারা থাকে ইত্যাদি সব জানে ইমু। সবার ছবিও সংগ্রহ করেছে ও। দুপুরের পর দিয়ে গাড়ি থেকে দিয়াখালি নেমে এক হোটেলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছে। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে মজিদ মেম্বারকে খুজতে বের হয়। বেশিক্ষন খুজতে হয়নি, প্রতিদিনকার মতো আজো মজিদ রহিম মিয়ার চা এর দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। দূর থেকে নজর রাখে ইমু। আজকের আড্ডা যেন শেষই হয় না।
মাগরিবের আজান পরতেই মজিদ আড্ডা থেকে উঠে যায়। সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। বাড়ি ফেরার সময় ফজলু নামের একজন সাথে থাকে সব সময়। আজ ফজলু কী কাজে যেন বাজারে রয়ে যায়। অগত্যা মজিদ একাই রওনা দেয় বাড়ির দিকে। মনে মনে খুশি হয় ইমু। রিক্সা না নিয়ে হাটতে থাকে মজিদ। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পিছু নেয় ইমু। অদূরেই মসজিদ! মজিদ মেম্বার মসজিদে ঢুকে পরে। বাইরে অপেক্ষা করে ইমু। দীর্ঘ ১২ বছর অপেক্ষা করেছে ও। ইমুর বাবাকে খুন করেছে এই মজিদ মেম্বার। কিন্তু আদালতে মজিদ নির্দোষ প্রমানিত হয়। মামলা চালিয়ে নিজেদের সর্বস্ব খুইয়ে ফেলে ইমুর মা। ইমুর তখন ১০/১২ বছর বয়স। মজিদ ইমুর মাকে বারবার বলেছে- "ভাবিসাব, মিয়া ভাইর লগে আমার জমি লইয়া গ্যাঞ্জাম আছে সত্য তয় ভাইরে আমি খুন করি নাই। কে করছে তাও বুঝতেছি না। বিশ্বাস করেন!"
বিশ্বাস করেনি ইমুর মা। পিতৃহারা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শহরে চলে আসে। বহু কষ্ট করে ইমুকে মানুষ করে আর ইমুর ভেতর জাগিয়ে দেয় পিতৃ হত্যার প্রতিশোধস্পৃহা। আজ সেই প্রতি শোধের দিন। কোমরে গোজা বুলেট ভর্তি পিস্তলে হাত বুলিয়ে নিষ্ঠুর এক হাসি দেয় গাছের আড়ালে দাঁড়ানো ইমু।
নামাজ শেষে অল্প কয়েকজন মুসুল্লি সহ বেরিয়ে আসে মজিদ। আবার হাটা শুরু করে বাড়ির দিকে। অলরেডি অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ। পকেট থেকে মিনি একটা টর্চ বের করে হাটছে মজিদ, ২০ গজ দূরে ইমুও হাটছে। রাস্তার এই অংশটা প্রায় নির্জন। শুধু মাঝে মাঝে কিছু মালবাহী ছোট ট্রাক যাচ্ছে দিয়াখালি বাজারে। ট্রাকগুলোর হেডলাইটের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই পথে। ৭/৮ বছরের এক বাচ্চা মাঠ থেকে মনে হয় বাড়ি ফিরছে। হাতে ফুটবল। সেটাকে মাটিতে ড্রপ দিতে দিতে যাচ্ছে ছেলেটা। হঠাত বলটা রাস্তার মাঝামাঝি চলে যায়। ছেলেটাও দৌড়ে যায় বলটা ধরতে। এদিকে ইমু আর মজিদ দুজনেই দেখতে পায় তীব্র দুইটি আলো প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে বিপরিত দিক থেকে। ট্রাকটা থামার সুযোগ পাবে না। একদম পিষে দেবে ছেলেটাকে। এক দৌড়ে রাস্তার মাঝে ছেলেটার কাছে পৌছে যায় মজিদ মেম্বার। কোনমতে শরিরের সাথে বাচ্চাটাকে আটকিয়েই ঝাপিয়ে পরে রাস্তার বাইরে। কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে ছুটে যায় ট্রাকটি। ইমু ২০ গজ দূর থেকে পুরো দৃশ্যটাই দেখলো। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে গেছে ও। মজিদ আর বাচ্চাটা উঠে দাড়িয়েছে। মজিদের টর্চটা তখনো হাতে ধরা এবং সেটা জ্বলছিল। উঠে দাঁড়িয়ে টর্চ এর আলো ফেলে নিজের আর বাচ্চার ক্ষত দেখছে মজিদ। বাচ্চাটা অক্ষতই আছে কিন্তু মজিদের দুই হাটু ছড়ে গেছে। পাজামা ভেদ করে রক্ত দেখা যাচ্ছে।
কোমর থেকে পিস্তল বের করে ইমু। চোখের সামনেই পিতার খুনি। পিস্তলটা শক্ত করে ধরে খুব জোড়ে পাশের অন্ধকার ডোবায় ছুড়ে মারে ইমু। দৌড়ে যায় আহত মজিদ মেম্বারের দিকে।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ