গণধর্ষণ!!!

মারজানা ফেরদৌস রুবা ৩১ জুলাই ২০১৫, শুক্রবার, ১১:২৭:৪০অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৪ মন্তব্য


আবারও গণধর্ষণ!!
সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টা দেখা যাচ্ছে, আগে দেখা যেতো নিম্নমানের লোকগুলোই এই অপকর্মগুলো করে বেড়াতো। যাদের কোন সামাজিক গ্রাউন্ড ছিলো না। পরিবার বলে কিছু ছিলো না। আর থাকলেও অশিক্ষা, কুশিক্ষা যাদের মানুষ হওয়ার পথে অন্তরায় ছিলো।
কিন্তু দিনকে দিন দেখা যাচ্ছে, এই পাশবিক কর্মটিতে এখন তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের কতিপয় কুলাঙ্গার যুক্ত হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কি বলবেন আমি জানি না।

কিন্তু আমি যা দেখি, আমাদের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার হার যে গতিতে বাড়ছে, সুশিক্ষা ঠিক সে গতিতে বাড়ছে না। অক্ষরজ্ঞানে পরিপূর্ণ হলেও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষিত লোক ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

ছোটবেলা আমার খুব মনে আছে, বাবা ভোরবেলা নামাজ সেরেই আমাদের নিয়ে বসতেন। প্রথমে আরবী সুরা কয়েকটা মুখস্ত পাঠ করাতেন, তারপর স্রোতলিপি পড়াতেন-
*'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেনো ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেনো সেই কাজ করি ভালো মনে।'
*'সদা সত্য কথা বলিবে, কখনো মিথ্যা বলিও না।'
*'মিথ্যা বলা মহাপাপ।'
*গুরুজনকে করো ভক্তি।'
এমন আরো অনেক আছে, যা পড়তে পড়তে অবচেতন মনেই মস্তিষ্কে এক ধরনের ক্রিয়া কাজ করতো। শিশুমনে গেঁথে যাওয়া এসব বাক্য সারাজীবন পথ চলায় বাতি হিসাবে কাজ করেছে। এখনকার মা-বাবা কি তার সন্তানটিকে নৈতিক শিক্ষার এ দীক্ষাটুকু দেন? ঘর থেকেই তো মানবশিশুর শিক্ষার শুরু। নৈতিক মূল্যবোধ জাগাতে না পারলে অক্ষরজ্ঞানে পরিপূর্ণ সন্তানটির তো নৈতিক অধঃপতন ঘটবেই।

একসময় খুব ছোট্টবয়সে দেখতাম পাড়ার কোন কোন বিত্তশালী লোক কেমন যেনো মাথা নীচু করে পথ চলতো। দিনেদিনে সমাজে নৈতিকতার মানদণ্ড নিম্নমুখী হওয়ায় সে সময়ে যে ক্যাটাগরির মানুষ সমাজে মাথা নীচু করে পথ চলতো আজ তারাই সমাজে মাথা উচুঁ করে চলে।

তাই বলছি, জাগো সমাজ! যেভাবে শিক্ষিত ছেলেপেলেরা উৎসব করে গণধর্ষণে দলবেঁধে নামছে, বর্তমানের টাকাওয়ালা দুর্নীতিবাজদের মতো একসময় ধর্ষকরাও সমাজে মাথা উঁচু করে পথ চলবে।

আমার বাবা ছিলেন ব্যাংকার। এখনকার ব্যাংকারদের মতো তেমন মানসম্মত বেতন তখন ছিলো না। হাতেগোনা টাকা দিয়েই সারামাস কোনরকমে চলতে হতো। কিন্তু তারপরও দেখতাম সেই বিত্তশালী লোকটি বাবার সাথে কেমন নীচু স্বরেই কথা বলতো, সমীহ করতো। এমনকি পাড়াতেও সে মাথা নীচু করেই পথ চলতো। প্রতিবেশির কাছে আমার বাবা যতোটা সম্মানের ছিলেন তার একআনাও অই লোকটির প্রতি তারা দেখাতো না। বরং আড়ালে তাকে কালোবাজারি বলেই ট্রিট করা হতো।

অথচ, আজ টাকাওয়ালাদেরই জয় জয়কার। কোথা থেকে, কেমন করে, সে টাকা উপার্জন হচ্ছে তা নিয়ে কারো কোনা মাথা ব্যাথা নেই। সবাই জানছে লোকটি ঘোষখোর অথবা সীমান্তে তার ইয়াবা ব্যবসা আছে অথবা সে অবৈধ মানব পাচারকারী তবুও তার টাকা আছে, কাজেই সে মানিলোক, সাদালোক, এক্কেবারে ফকফকা!!

ধর্ষণের মতো মানবিক অপরাধও কি একসময় সমাজে স্বাভাবিক জায়গা করে নেবে? আজ যদি ধর্ষণকে কেবল নারী বিষয়ক সমস্যা বলে এড়িয়ে যাওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে তা সমাজের জন্যই বিষফোঁড়া হিসাবে দেখা দেবে।

কাজেই জাগো সমাজ....

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ