জ্বি হাঁ বাংলাদেশ এখন করোনা সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে রয়েছে, অর্থাৎ সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে, যার উৎস অজানা, কে এই ভাইরাস বহন করছে তা জানা না থাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

রোগী বাড়ার কারণে, জুন মাস পর্যন্ত সচেতন থাকতে বলেন তারা, রোগী আরো বেড়ে গেলে চিকিৎসা দেয়াও কঠিন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যখন চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো তখন থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোগ প্রতিরোধে মানুষে মানুষে দুরত্ব মেনে চলতে হবে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সাধারণ ছুটি দিয়ে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয় সরকার, যা মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে।

চিন্তা করুন তো উপরের কথা গুলো, কোথায় কি বা কিসের ফাঁক রয়ে গেছে আমাদের মাঝে?
জ্বি সোস্যাল ডিস্টেন্স কি সত্যি কি আমরা মানছি, সত্যি দুঃখজনক যে কেউই মানছি না।
যে দেশের মানুষ একজন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাথে সাথে হাজার জনও তার সাথে এক হয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে, সেই দেশের মানুষের কাছে সোস্যাল ডিস্টেন্স মেনে চলার আহবান মানেই উলু বনে মুক্তো ছড়ানো।
এমন অবস্থা যে সবাই যেন পিকনিকে আছে, কিন্তু আজকের দিনের রেকর্ড শুনেন, গত চব্বিশ ঘন্টায় দুইশোত ছেষট্টি জন্য আক্রান্ত, পনেরো জন্য মৃত্যু বরণ করেছে।

সরকার ইতিমধ্যে পুরা দেশটিকেই করোনার জন্য ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন

সত্যি দুঃখজনক যে আমি অবাক হই দেশের নীতিনির্ধারকদের গা-ছাড়া অবস্থা দেখে, এমন এক স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেলাম যিনি খোদ ডাক্তার না হয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরু দ্বায়িত্বে আছেন।
যিনি দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলোর অবস্থা কি তা নিজেই জানেন না বলে প্রতীয়মান হয়।
বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারলাম খোদ রংপুর হাসপাতালের ডাক্তার নার্সগণ কোনো পিপিই পাননি, তাহলে বুঝুন দেশের অন্যান্য হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরা কিভাবে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করবেন?
উনারাই যদি না বাঁচেন, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা কে দেবে ভেবে দেখেছেন একবার?
দেশের সরকারি হাসপাতালের আইসিউ এবং ভেন্টিলেশন ইউনিটের ইনস্ট্রুমেন্ট গুলো যথেষ্ট পুরানো, এগুলো দিয়েই যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে কিভাবে বলতে পারেন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট সচেষ্ট দেশের এই বিপদে মানুষের সেবা করতে যা সত্যি উল্লেখযোগ্য, কিন্তু একা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা কি সব সম্ভব বলুন?
সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রীকে এইসব মন্ত্রী, আমলারা যা বলছেন তাই শুনতে বাধ্য উনি, যেমন ধরুন উনারা বলছে সব কন্ট্রোলে আছে, যেভাবে চলছে তাতেই চলবে, প্রধানমন্ত্রীও তাতেই হয়ত পুরাপুরি সন্তুষ্ট না হলেও হতে বাধ্য উনি, কারণ সব দেখা উনার একার পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু আমরা সাধারণ জনতা নিজ চর্মচোক্ষে যা দেখছি এবং উপলব্ধি করছি তা হয়ত উনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা, আর তাই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মুহূর্তে কি করা উচিত তার কিছু আলোকপাত করতে চাই।

যেহেতু দেশের মানুষ সোস্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন করছেনা এবং ফলশ্রুতিতে দেশে করোনা আক্রান্তের হার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই আছে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত এই মুহূর্ত থেকেই পুরা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা, স্ট্রেইট কারফিউই হতে পারে করোনা আক্রান্তের হার কমানো, এর কোন দ্বিতীয়টি হবেনা।
দরকার হলে প্রতিদিন ঘন্টা দুয়েক শীতিল থাকতে পারে জরুরী প্রয়োজন মেটানোর জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর উচিত জরুরী ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌগ্য ব্যক্তিকে সোর্পদ করা, যিনি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জানবেন, বিশেষ করে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দিলে ভালো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উচিত এই মুহূর্তেই যত বড় বড় প্রজেক্টে ইনভেস্টমেন্ট করতে হচ্ছে তা বন্ধ করে দেওয়া এবং তা স্বাস্থ্যখাতে এবং কৃষিখাতে দেওয়া, এতে হবে কি, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উচিত জরুরী আইন জারি করে দেশের সকল বড় বড় হাসপাতাল গুলোকে সরকারের আন্ডারে এনে সেইসব হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট, ভেন্টিলেশন ইউনিট গুলো জরুরী ভাবে ব্যবহার করা, সাথে সাথে দেশের নার্সিং সেবাই জড়িতদের কোভিড-১৯ ভাইরাসের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
সাথে সাথে দেশের ছোটো বড় সকল হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সদের জন্য জরুরী ভাবে পিপিই পর্যাপ্ত ভাবেই ব্যবস্থা করা।
এরি সাথেই আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইউনিটের জরুরী আনুষাঙ্গিক পার্টসের ব্যবস্থা করা।

প্রধানমন্ত্রী রিসেন্টলি ঢাকার ডাক্তারদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করেছেন, আমার মতে দেশের প্রতিটি জেলার ডাক্তার নার্সদের জন্য হোটেল, মোটেল, অভিজাত রিসোর্ট গুলোকে সরকারের আয়ত্বে এনে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা।

এরই সাথে সাথে সকল মানুষের বা আপামর জনতার কোভিড-১৯ টেস্ট অবশ্যই করা উচিত, দরকার হলে ঘরে ঘরে যেতে হবে টেস্ট করার জন্য, এলাকা ভিত্তিক টেস্ট করার ব্যবস্থাও করতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এখন শুধু দরকার স্বদইচ্ছার।

প্রধানমন্ত্রীর জানার জন্য বলছি, দেশের সকল সরকারি হাসপাতাল গুলোর রুগীদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য সামগ্রী অত্যন্ত নিম্ন মানের, বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় যা খুবই বিপদজনক, এমত অবস্থায় দেশের সকল হাসপাতালে যেন উন্নত এবং পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা আবশ্যকীয় করা উচিত।

বর্তমানে অনেক ডাক্তার, ইন্টার্ন নিজেরা প্রাক্টিস করছেন, আমি অনুরোধ করবো তাদেরকে দ্রুত এবং জরুরী ভাবে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য আবশ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে বা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

দেশে চলমান ত্রাণ বন্টন এখন হুমকির মুখে ত্রান চোরদের কারণে, আমার মতে সরকার এইসব ত্রাণ বন্টনের জন্য বিজিবি, র‍্যাব এবং আর্মিকে সংযুক্ত করতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া সকল ত্রাণ চোরদের দশ বছরের জেল এবং দশ লাখ টাকার জরিমানা করুন, দেখবেন সব সিধা হয়ে গেছে।

দেশে ল্যাবের অভাববোধ প্রকট, কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য আরও বৃহত পরিসরে করার জন্য দেশের সকল প্রাইভেট হাসপাতালের ল্যাব ব্যবহার অত্যাবশকীয় করা উচিত, সাথে সাথে তাদের ল্যাব টেকনিশিয়ানদের ব্যবহার করা যেতে পারে।

দেশের খাদ্য সামগ্রীর দাম এখন উর্দ্ধমুখি, প্রধানমন্ত্রীর উচিত সেনাবাহিনী দ্বারা খাদ্য সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেনে রাখুন এই দেশের মানুষ শক্তের ভক্ত, নরমের জম।

পরিশেষে আমি সকল আপামর জনতার প্রতি বলছি, ভাইলোগ আপনারা ঘরে থাকলে অসুবিধা কোথায়, আপনাদের কৃমির এতোই কি বেশি জোর যে চুলকায় ঘরের বাহিরে যাওয়ার জন্য, জানেন নিশ্চয় আপনাদের বাইরে চলাচলের কারণে করোনায় আক্রান্ত শুধু আপনি নন, আপনার প্রিয় সন্তান আক্রান্ত হতে পারে, স্ত্রী আক্রান্ত হতে পারে, সকল প্রিয়জন আক্রান্ত হতে পারে, পারবেন কি তাদের মৃত্যু সইতে?
যদি সইতে পারবেন বলেন, তাহলে মর, সইতে না পারলে ঘর ধর।

সমাপ্ত।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ