কৃষি ও কৃষকের গল্প : শেষ পর্ব

রুদ্র আমিন ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ০২:৩৯:০৬অপরাহ্ন গল্প ৮ মন্তব্য

পরের দিন সকালে গ্রামের সকল কৃষকদের ডেকে কৃষি কাজে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল এবং কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে আলোচনা কর্মশালার আয়োজন করে রুদ্র। গ্রামের মানুষের কাছে রুদ্র কৃষিবিদ হিসেবেই বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আর তাই তার ডাকে সকল কৃষক এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়।

রুদ্র- আপনারা কেমন আছেন?
কৃষক দল- জ্বী, খুব ভালো আছি বাবা, তোমার কথা মতো জমি আবাদ করে আমাদের ফসল বেশ ভালো হচ্ছে। মৃতপ্রায় জমি এখন বেঁচে উঠছে।
রুদ্র- আজ আপনাদের এখানে ডেকেছি দুটি কারণে, একটি হলো-আপনাদের কৃষি সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আর একটি হলো- অনেকেই হয়তো শুনেছেন আমি আপনাদের না বলে বিয়ে করেছি। না বলে বিয়ে করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ের অনুষ্ঠানে যে খরচ হতো তা দিয়ে আপনাদের আধুনিক কৃষির কিছু যন্ত্রপাতি কিনবো যা আপনারা স্বল্প খরচে ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। ভাড়া কথাটি এজন্য বললাম, সকল কিছুর ক্ষয় আছে, ব্যবহার করতে করতে একদিন এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আবার নতুন করে কিনতে যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেইজন্য এমন কথা বললাম।

কৃষক দলের একজন- বাবা, তুমি বিয়ে করেছো কোন পরিস্থিতিতে সেটা আমরা সবাই জানি, সব শুনেছি। তুমি যা করছো তা খুব ভালো কাজ করেছো। একটি পরিবার এবং একটি মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছো। আমরাও তোমার সাথে আছি। আমরাও আমাদের ছেলে মেয়েদের বিয়েতে কোনো যৌতুক নিবো না এবং দিবোও না। কি বলেন ভাইয়েরা। আপনারা কি একমত? উপস্থিত সকল কৃষক এবং অন্যান্যরা সম্মতি জানালো।

রুদ্র- আপনাদের কথা শুনে আমার মনে ভরে গেলো। মনে হচ্ছে আমার যুদ্ধে আর আমি একা নই। এখন হাজার হাজার যোদ্ধা আমরা এক সাথে। এমন ভাবে চলতে পারলে আমরা আমাদের গ্রামকে আদর্শ গ্রামে পরিণত করতে পারবো। আর হ্যাঁ, আমরা আমাদের সন্তানদের পড়ালেখা করাবো, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো। অনেক কথা হলো এবার আসুন আমরা কৃষি নিয়ে কথা বলি। আর কেউ যাবেন না, দুপুরে আপনাদের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

এবার শুনুন কৃষি নিয়ে দেশ ও বিদেশের কিছু কথাঃ
আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা এটা তো বুঝতেই পারছেন। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রযুক্তি। যে লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে ‘আধুনিক লাঙল’ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ব্রডকাস্ট সিডার পাওয়ার রিপার মেশিন ইত্যাদি।

আজ আমরা কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একদিকে যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় করছি তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল সবই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ব্রি) হিসাবমতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির ৯০ থেকে ৯২ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে।

আর উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজ একটি সম্মানজনক পেশা। যা এখনো আমাদের দেশে এখনো এমনটা মনে করে না। তাদের কৃষির সাথে সম্পৃক্তরা সমাজের বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কারণ কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই তাদেরকে উন্নত জীবনযাত্রা দিয়েছে, কমিয়েছে পরনির্ভরশীলতা। মাটির উর্বর ক্ষমতা নির্ণয় থেকে শুরু করে ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের কৃষি ব্যবস্থাকে অনন্য মাত্রায় স্থান করে দিয়েছে। বর্তমানে তাদের দেশের কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় একদিকে শ্রমশক্তি কম লাগছে, অন্যদিকে সময়ও কম অপচয় হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে শীতপ্রধান দেশে তাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। মরুভূমিতে বালি সরিয়ে মাটি ফেলে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। কোনো কোনো উন্নত দেশে একটি মেশিনে দৈনিক ১০০ একর জমি চাষ হচ্ছে। জাপানের জমির উর্বরতা বাংলাদেশের জমির চেয়ে ৩গুণ কম হওয়া স্বত্তেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা বাংলাদেশের চেয়ে ৬ গুণ বেশি ফসল পায়। এবার বুঝতে পারলেন তো, জাপানের জমি থেকে আমাদের দেশের জমি উর্বর হওয়া সত্ত্বেও ক্যানো আমরা পিছিয়ে আছি।

আপনারা বুঝতে পারছেন তো, আধুনিক প্রযুক্তি কৃষির জন্য কতোটার সুফল বয়ে আনছে। দিনে দিনে আমাদের দেশের কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে আর এই সীমিত সম্পদের মাধ্যমে অসীম চাহিদা মেটাতে হলে আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার বিকল্প নেই। আমাদের দেশের এই স্বল্প আবাদী জমিতে প্রায় ১৬ কোটি জনগণের খাবার উৎপাদন সনাতনী পদ্ধতিতে অসম্ভব। তাই কাঠের লাঙ্গলকে বিদায় জানাতে হবে। কৃষকের হাতে তুলে দিতে হবে বিজ্ঞানের হাতিয়ার ট্রাক্টর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি।

রুদ্র- আমাদের বর্তমানে একটাই কাজ, সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ, আর সার প্রয়োগের সঠিক সময় এবং পরিমান সম্পর্কে জানা। এসব জানতে পারলেই আমরা আমাদের কষ্টের ফলাফল পাবো। তাহলে আমি আপনাদের কিছু নিয়ম বলে দিচ্ছি, আর সবার জন্য কাগজও নিয়ে আসছি যাতে আপনারা বাসায় বসে বসে পড়ে জানতে পারেন। এবার বলি আপনারা শুনুন—

সার ব্যবহারের ফলপ্রসূতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রয়োগের সময় ও প্রয়োগ পদ্ধতির উপর। বিশেষ করে নাইট্রোজেন সারের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নাইট্রেজেন পানিতে দ্রবনীয় এবং সহজে বিভিন্ন উপায়ে মাটি হতে অপচয় হয়। কোন কোন পরিস্থিতিতে প্রয়োগকৃত নাইট্রোজেন সারের ৭০% মাটি থেকে অপচয় হয় যা ফসলের নাগালের বাইরে চলে যায়। সার ব্যয় বহুল একটা উপকরণ। এ কারেণে প্রয়োগকৃত সারের ফলপ্রসূতা বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ।

সার প্রয়োগের সাধারণ নীতি মালা
১। রাসায়নিক সার কোন বীজ, নতুন শিকড় ও গুল্ম- জাতীয় গাছের কান্ডের অতি সন্নিকটে বা কোন ভিজা কচি পাতার ওপর ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘনীভুত লবন বিধায় এগুলো গাছের নাজুক সকল বাড়ন্ত অংশকে পুড়িয়ে দিতে পারে।
২। সার যতদূর সম্ভব ভালভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩। ইউরিয়া সার দাড়ানো বেশী গভীর পানিতে প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। এতে বেশির ভাগ নাইট্রোজেন অপচয় হতে পারে।
৪। জিংক ও ফসফেট সার একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করা উচিত নয়। কেননা, এ উপাদান গুলো, একে অপরের সাথে আবদ্ধ হয়ে যায় এবং ফসলের জন্য তা গ্রহণ উপযোগী হয় না।
৫। জৈব সার ফসল রোপনের কমপক্ষে ৮-১০ দিন পূর্বে জমিতে দিয়ে মাটিরসাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে। এবং সবুজ সার মাটিতে মিশানোর ৭ দিন পর ধানের চারা রোপণ করতে হবে।
৬। সাধারণ ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে শতকরা ১৫-২০ ভাগ বেশি ফসল পাওয়া যায়।
সারের ফলপ্রদ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমিতে তিন পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করা হয়। হাতে ছিটানো, স্থানীয় প্রয়োগ এবং পাতায় বা পল্বব গুচ্ছে সিঞ্চন। হাতে ছিটানো, স্থানীয় প্রয়াগ সাধারণত ফল বাগান ও সবজিতে করা হয়।

রাসায়নিক সার ব্যবহার
১। রবি মৌসুমে সেচের সুবিধা না থাকলে, জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে ইউরিয়ার পূর্ণ মাত্রায় দিয়ে তা মাটির সাথে মিশাতে হবে।
২। পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে, ইউরিয়া ৩ অংশে ভাগ করে প্রয়োগ করা উচিত। প্রথম অংশ শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ফসলের দ্রুত আংগিক বৃদ্ধির সময় দ্বিতীয় বার এবং কাঁইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে তৃতীয় ও শেষ বার ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
৩। বোনা আমন ছাড়া অন্যান্য ধান চাষের বেলায় ইউরিয়া সমান ৩ ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হয়। রোপা ধানের বেলায় শেষ চাষে বা ধানের চারা মাটিতে লেগে যাওয়ার পরপরই ( আগাছা থাকলে তা পরিস্কার করে) প্রথমবার ইউরিয়া প্রযোগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বোনা ধান চাষের বেলায় কুশি বের হওয়ার পূর্বে প্রথম দফার ইউরিয়া ছিটিয়ে তা ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এ সময় মাটি উত্তম রুপে ভেজা থাকা দরকার। দ্রুত কুশি বের হবার পর্যায়ে অথবা দ্বিতীয়বার আগাছা বাছাইয়ের সময় উপরি প্রয়োগ হিসেবে দ্বিতীয় দফা ইউরিয়া প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। কাঁইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে, পুরোপুরি ভেজা মাটিতে বা সামান্য দাড়ানো পানিতে ইউরিয়া ৩য় বার ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়।
৪। শাক সবজি চাষের বেলায় ফসলের বৃদ্ধির পর্যায়ের সংঙ্গে সমম্বয় করে ইউরিয়া ২-৩ ভাগে ভাগ করে প্রযোগ করতে হবে। স্বল্প মেয়াদি ফসলের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সারের পুরোমাত্রা শেষ চাষের সময়েই প্রয়োগ করতে হবে।
৫। অধিকাংশ মশলার ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার ২-৩ ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে।
৬। ভেজা মাটি অথবা জো আসা মাটিতে পড়ন্ত বিকেলে ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ করে উত্তমরুপে মিশিয়ে দিলে সর্বাধিক সুফল পাওয়া যায়। তবে তা ধানের শীষ বের হওয়ার পূর্বেই করতে হয়।
৭। ফসফেট সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের ২/১ দিন পূর্বে প্রয়োগ করা উচিত এবং দস্তা সারও শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
৮। জমি তৈরির শেষ চাষে পটাশ ও গন্ধক জাতীয় সারগুলো একবারে প্রয়োগ করা যায়। তবে, মোটা বুনটযুক্ত মাটিতে পটাশ সার দুভাগে ভাগ করে ব্যবহার করা ভাল। প্রথম ভাগ, জমি তৈরির শেষ সময় এবং দ্বিতীয় ভাগ দ্রুত কুশি বের হওয়ার সময় প্রয়োগ করা উচিত।
৯। তামাক ও রসুন ফসলে এমওপি (KCL) এর পরিবর্তে পটাশিয়াম সালফেট (K2So4) ব্যবহার করা উচিত।১০। সালফার এবং জিংক সারের সুপারিশকৃত মাত্রা শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করা না হলে প্রয়োজন বোধে এ গুলি উপরি প্রয়োগ করে ব্যবহার করা যেতে পারে। সময়মত ইউরিয়া প্রয়োগের পরেও পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে তা সালফারের ঘাটতি বলে ধরে নিতে হবে।

রুদ্র- এবার বুঝতে পারলেন তো। আমাদের উচিত সময় মতো প্রয়োজন অনুসারে পরিমাণ মতো ও যে ফসলে যে সার দেওয়া দরকার ঠিক সেই সার ফসলের জমিতে প্রয়োগ করতে পারলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।

মাটির বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের প্রেক্ষিতে শস্য বিন্যাস ভিত্তিক সার সুপারিশে নিম্ন বর্ণিত বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে হবেঃ

১। নাইট্রোজেনের উৎস হিসেবে ইউরিয়া মাটিতে অত্যন্ত ক্ষনস্থায়ী এবং মৌসুম শেষে মাটিতে তা একবারেই অবশিষ্ট থাকে না বা সামান্যই অবশিষ্ট থাকে। কাজেই উপাদানটি প্রতি ফসলের চাহিদা মাফিক গাছের আংগিক বৃদ্ধির ধাপে ধাপে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হয়। সবুজ সার প্রয়োগের পর ( হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন সবুজ ধৈঞ্চা) ধান ফসলে নাইট্রোজেন সারের মাত্রা ২৫-৩০ কেজি/ হেক্টর কমানো যায়। শুঁটী জাতীয় দানা ফসলের পর যদি ফসলের পরিত্যক্ত অংশ মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়, তাহলে নাইট্রেজেন সারের প্রয়োগ মাত্রা ৮-১০ কেজি/ হেঃ কমানো যায়।

২। মাটির অম্লমান বা পিএইচ কম বা বেশি উভয় ক্ষেত্রেই ফসফরাসের সহজলভ্যতা কম। সাধারণত ফসফরাসের লভ্যতার হার খুব কম ( ১৫-২০ %) এবং ফসফরাস সারের অবশিষ্ট পুষ্টি যথেষ্ট পরিমান মাটিতে থেকে যায়।

এমতাবস্থায় ফসল বিন্যাসের ২য় ও ৩য় ফসলের জন্য ফসফরাসের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নরূপঃ ফসল বিন্যাসের ২য় ও ৩য় ফসলের ব্যবহারের জন্য সারের সুপারিশকৃত মাত্রার শতকরা অংশ মৃদু অমস্ন থেকে মৃদু ক্ষার মাটির জন্য (%) অধিক অমস্ন এবং চুনযুক্ত মাটির জন্য (%) ধান (উন্নত জাত) ধান (স্থানীয় উন্নত) , পাট ৫০-৬০ ৬০-৭০, গ্রীষ্মকালীন শাক- সব্জী ৬০-৭০ ১০০।

৩। সাধারণত হালকা বুনটযুক্ত এবং পিডমন্ড মাটির পটাশ সরবরাহ ক্ষমতা কম। আবার, ধান, কন্দাল ফসল, পাট, আখ, বিভিন্ন ফল, সব্জী এবং মশলা জাতীয় ফসলে পটাশের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে না রাখায় নিবিড় চাষ এলাকায় পটাশের ঘাটতি বেশি হয়। গোলআলু, ভুট্টা, তামাক, আখ, সব্জী ও মশলা ফসলে উচ্চ মাত্রায় পটাশ সার প্রোয়োগ করায় পরবর্তী ফসলের মাত্রায় তা ৩০-৪০% কমানো যায়। হেক্টর প্রতি ২-৪ টন ফসলের অবশিষ্টাংশ / ধানের খড় যথাযথভাবে মাটিতে ব্যবহার করা হলে পরবর্তী ফসলের মাত্রায় ২০-৪০% পটাশ কমানো যায়। যেহেতু খরিফ মৌসুমে সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে তা ১০-১৫% কমানো যায়।

৪। শুষ্ক চাষাবাদে গন্ধকের সহজলভ্যতা কাদাময় ধান চাষের তুলনায় বেশী এবং যথেষ্ট অবশিষ্ট পুষ্টি মাটিতে থেকে যায়। কাদাময় চাষের ফসলে পূর্ণমাত্রায় সালফার প্রয়োগ করতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে কাদাময় ফসলের পর তৈল জাতীয় ফসল ,ভুট্টা, সব্জী ও মশলা ব্যতীত অন্যান্য শুস্ক চাষের ফসলের বেলায় সুপারিশকৃত মাত্রার ৫০% প্রয়োগ করতে হবে। তৈল জাতীয় ফসল, ভুট্টা, সব্জী এবং মশলা ফসলের বেলায় পূর্ণ মাত্রায় সালফার প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়।

৫। দস্তার প্রাপ্যতা চুনাময় এবং কাদাময় মাটিতে কম। চুনাময় মাটিতে ( এইজেড, ১০,১১,১২ ও ১৩) রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে দস্তা প্রয়োগ করতে হবে। ২ অথবা ৩টি ধান- ধান ফসল বিন্যাসের ১ম ফসলে পূর্ণ মাত্রায় এবং ২য় ও ৩য় ফসলে ৫০% মাত্রায় দস্তা প্রয়োগ করতে হবে। ভুট্টা, আলু, শাকসব্জী এবং মশলা ব্যতীত ধান- ধান ছাড়া অন্য ফসলের শস্য বিন্যাসের বেলায় শুধুমাত্র ধান ফসলেই দস্তা প্রয়োগ করতে হবে। ভুট্টা, আলু, সব্জী এবং মশলা ফসলে পূর্ণ মাত্রায় দস্তা প্রয়োগ করতে হবে।

৬। শস্য বিন্যাসের রবি মৌসুমে কোন জমি পতিত থাকলে খরিফ-১ মৌসুমে ফসলের সুপারিশকৃত সারের পুরো মাত্রা প্রয়োগ করতে হবে।
৭। সবুজ সার/ শুটী জাতীয় দানা ফসল ব্যতিত মাঠ ফসলে জৈব উৎসের পুষ্টির যথাঃ গোবর, খামারজাত সার, মুরগির বিষ্ঠা, কম্পোষ্ট ইত্যাদি প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সারের সুপারিশ মাত্রার কিছু পরিমাণ সার কমানো যায়।

৮। শীম জাতীয় ফসলে জীবানু সার ব্যবহার করলে নাইট্রেজেন সার প্রয়োগের প্রয়োজন নাই।
৯। বোরো ধানের জমিতে যদি পুরো দুই স্তরে এ্যাজোলা মিশানো হয় তবে ২৫-৩০ % নাইট্রেজেন সার কমানো যায়।
১০। বৃষ্টি নির্ভর ফসলের জন্য সেচ নির্ভর ফসলের সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে ২৫-৩০% পুষ্টি উপাদানের (N P K S ইত্যাদি) পরিমাণ কমানো যেতে পারে।

আজকের জন্য এতোটুকুই। আর সবাই এককপি করে এই কাগজ নিয়ে যাবেন, বাড়িতে অবসর সময়ে পড়বেন, কেউ পড়তে না পারলে তার সন্তানকে দিয়ে পড়াবেন, যত বেশি পড়বেন বা শুনবেন ততবেশি মনে থাকবে। যদি বুঝতে কারো সমস্যা হয় তাহলে আমি তো আছিই, চলে আসবেন। কেউ কিন্তু না খেয়ে যাবেন না।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ