কৃষি ও কৃষকের গল্প : পর্ব-৪

রুদ্র আমিন ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩২:১৫পূর্বাহ্ন গল্প ১১ মন্তব্য

রুদ্র- চাচীকে ডাকুন, সাথে অধরা এবং সাদিয়াকেও, সবার সামনে কথাগুলো বলতে চাই। সবার মতামত খুব প্রয়োজন।
মোহন মন্ডল- মোহন মন্ডল সবাইকে ডাকলেন, সবাই এলো। বাবা এবার বলো কি বলবে।
রুদ্র – কিছু মনে করবেন না। আমি এসেছি অধরার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। শুনলাম মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য আপনারা যৌতুক দিচ্ছেন। চাচা যৌতুক দেয়া নেয়া দুটোই তো অপরাধের কাজ। অধরা দেখতে কি খুব খারাপ? আর সে শিক্ষিত মেয়ে তাকে বিয়ের জন্য যৌতুক ক্যানো। আর হ্যাঁ, দেখতে শুনতে যাই হোক না ক্যানো যৌতুক কারো জীবনে সুখ বয়ে আনতে পারে না।

মোহন মন্ডল- বাবা, বুঝোই তো, ভালো পাত্র পাওয়া খুব কষ্টের। ছেলেটা ব্যাংকে চাকরি করে, অনেক টাকা বেতন পায়, বাড়ির অবস্থাও বেশ ভালো। মেয়েকে ঐ ঘরে দিতে পারলে মেয়েটা সুখে থাকতে পারবে। আর ওর পড়ালেখা তো প্রায় শেষ, মেয়েদের বয়স বেশি হওয়া ভালো না।

রুদ্র – আপনার মেয়ে শিক্ষিত, দেখতে সুন্দর। আর বললেন সুখের কথা। আচ্ছা আপনি যে কৃষিকাজ করে আপনার পরিবারকে অন্য দশ পরিবারের চেয়ে আলাদা রেখেছেন এখানে কি আপনার সুখ নেই? অবশ্যই আপনারা সবাই সুখী। আপনি একটিবার আপনার মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছেন সে যৌতুক দিয়ে বিয়ে করবে কি না? আমার বিশ্বাস আপনার মেয়ে এটা মানবে না। কি অধরা, তুমি এর পক্ষে?

অধরা- না ভাই, আমি কখনোই এর পক্ষে নই। কিন্তু বাবার কথায় আমি রাজি হয়েছি।
রুদ্র – চাচা, শুনতে পেয়েছেন আপনার মেয়ের অভিমত। যাদের ভেতর মনুষ্যত্ব বোধ আছে তারা কখনোই যৌতুক মেনে নিবে না। আপনাদের সবাইকে কিছু বলতে চাই- যদি শুনেন। আর হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত আপনাদের আমার বলার প্রয়োজন বোধ করেছি বলেই আমি বলছি।
মোহন মন্ডল – বাবা তোমার কথার সবটাই ঠিক, কিন্তু আমাদের সমাজ মেনে চলতে হয়।

রুদ্র – সমাজ যেমন আপনি ক্ষুধার্ত থাকলে খাওয়াবে না তেমনি, ভুল সিদ্ধান্তের শাস্তিতে কখনোই সুখ এনে দিবে না। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজে সচেতনতার অভাব, মূল্যবোধের অবক্ষয়, দারিদ্র, বেকারত্ব শিক্ষার অভাব প্রভৃতি যৌতুক-এর দাবীর মূল কারণ। আর দাবী পুরণ না হলে হচ্ছে অসহায় নারীদের উপর অত্যাচার, যার মাত্রা মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়।

১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কোনো পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের আগে-পরে বা বিয়ে চলাকালে যেকোনো সময় যেকোনো সম্পদ বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করে বা করতে সম্মত হয়, সেটাই যৌতুক বলে বিবেচ্য হবে। যৌতুক গ্রহণ ও যৌতুক প্রদান অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

যৌতুক নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার নতুন করে যৌতুক নিরোধ আইন পাস করেছেন। নতুন এই আইনের তিন নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যৌতুক দাবি করলে, তিনি পাঁচ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগে অর্ডিন্যান্সে জরিমানার বিধান থাকলেও জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত ছিল না। এছাড়া, নতুন আইনের চার নম্বর ধারায় বলা হয়েছে— কেউ যৌতুক নিলে এবং দিলে উভয়েই দণ্ডিত হবেন। তারা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল, সর্বনিম্ন একবছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনটির পাঁচ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে— কেউ যদি যৌতুক সংক্রান্ত মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, তারও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল থেকে সর্বনিম্ন একবছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এখন আপনিই দেখুন আপনি কি করবেন। তবে একটি কথা বলতে পারি, যৌতুক কখনোই একজন ভালো স্বামী তৈরি করে দিতে পারে না। সংসারের সুখ বয়ে আনতে পারে না। পাপ সে পাপই, তার শাস্তি সবার বহন করতে হয়। চাচা এখন উঠতে হবে।

মোহন মন্ডল – বাবা, কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতে চাই।
রুদ্র – বলুন চাচা,
মোহন মন্ডল – যদি তুমি আমার মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে তাহলে আমি মানসিক শান্তি পাইতাম।
রুদ্র – ইনশাল্লাহ, যদি বেঁচে থাকি তাহলে আসবো। আজকের মতো উঠছি। তবে চাচা কথাগুলো ভেবে দেখবেন। মেয়ে বিয়ে দিলেই সমাধান হয় না। আর সমাজ সব সময় সবার মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সঠিক সিন্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়।
মোহন মন্ডল- বাবা, কথা দিয়ে ফেলেছি, নিমন্ত্রণও করা হয়েছে। এখন আর পিছু পা হতে পারবো না। একটু ঝামেলাও আছি।
রুদ্র- ঠিক আছে চাচা, আমি উঠছি। ইনশাল্লাহ সময় করে চলে আসবো। অধরা, তুমি একটু তোমার বাবাকে বুঝিও। আল্লাহ হাফেজ চাচা, চাচী আসি।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ