কৃষি ও কৃষকের গল্প : পর্ব-২

রুদ্র আমিন ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ০১:৪০:২৪অপরাহ্ন গল্প ১২ মন্তব্য

যদি কেউ  গত হয়ে যাওয়া প্রকাশিত পর্ব পড়ে না থাকেন তাদের জন্য, লিংকে ক্লিক করুন -  পর্ব -১

সাচ্চু – দ্যাখ এসব ব্যাপারে আমি তেমন একটা কিছুই জানি তবে সবটাই বাবার কথামতো হচ্ছে। তবে কিছুটা শুনেছি, একটা দামি মোটরসাইকেল, ঘরের আসবাবপত্র, কিছু স্বর্ণলঙ্কার ইত্যাদি। আর শুনেছি মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দর। অবশ্য আমি ছবি দেখেছি, ব্যস্ততার কারণে সরাসরি দেখতে পারিনি। বাবা মায়ের পছন্দ আর ছবি দেখে ভালো লেগেছে এজন্য দ্বিমত করিনি।

রাশেদ – দোস্ত তোকে একটা কথা বলি কিছু মনে করিস না। তুই শিক্ষিত ছেলে হয়ে যৌতুক নিলে কেমন দ্যাখায় বলতে পারিস, যৌতুক খুব খারাপ একটা প্রথা। অন্তত তোর কাছে এমনটা আশা করিনি। তোর বাবা মাকে তোর বুঝানো উচিত।

জুয়েল – সাচ্চু, রাশেদ কিন্তু ভালো কথা বলেছে। যৌতুক নেয়া একটা অমানবিক কাজ। রুদ্র এমন কথা শুনলে তোর বিয়েতে নাও যেতে পারে। গ্রামে ও যৌতুক বিরোধী আন্দোলন করতেছে। আমরাও ওর সাথে আছি। আমরা দুজন হয়তো যাবো, কিন্তু রুদ্র কখনোই সমর্থন করবে ন।
সাচ্চু – কে এলো আর কে আসবে না সেটা যার যার ব্যাপার। আমার বাবা মাকে আমি কিছুই বলতে পারবো না । তোরাও যদি না আসতে যাস সেটাও তোদের একান্ত ব্যাপার। তবে বন্ধু হিসেবে আমার খুব খারাপ লাগবে তোদের পাশে না পেলে।

জুয়েল – বন্ধু, এখন উঠতে হবে, বিয়ের তারিখ পড়লে জানিয়ে দিস। তবে একটু ভেবে দেখিস। তুই ক্লান্ত, বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম কর। আর একটু চেষ্টা করে দেখিস।
রাশেদ, জুয়েল, সাচ্চু যার যার পথে হাঁটতে শুরু করে দিলো, রাশেদ আর জুয়েল রুদ্রের বাড়ির পাশ দিয়েই যাবে। দুজনে সাচ্চুকে নিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছে, আসলে সাচ্চু কাজটি ভালো করছে না। হাঁটছে দুজন, পথেই দ্যাখা হলো রুদ্রের সাথে। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলছে, দেখে মনে হচ্ছে জরুরী পরামর্শ দিচ্ছে।

এই রাশেদ, এই জুয়েল, এদিকে আয়। রুদ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে রাশেদ আর জুয়েল রুদ্রের কাছে পৌছলো। তোরা একটু বসলে আমি কথা শেষ করতে পারি, তারপর তোদের সাথে জরুরী কথা আছে।
জুয়েল- আচ্ছা, তুই কথা শেষ কর আমরা বসতে রাজি।

রুদ্র – কেমন আছেন আপনারা সবাই? (পাঁচজন কৃষককে উদ্দেশ্য করে রুদ্র কথা)
কৃষক -১ – আমরা সবাই ভালো আছি
রুদ্র – এবার ফসলের অবস্থা কি, কেমন হয়েছে?
কৃষক-১- মোটামুটি ভালো, তয় সার দিতে দিতে অবস্থা কাহিল, একেবারে ফতুর হয়ে গেলাম গা।
রুদ্র – কি সার ব্যবহার করছেন আপনেরা?
কৃষক-১- আমরা ইউরিয়া সার দেই, আবার মাইট্টা সারও দেই, তয় কোন সার কোন কামে লাগে তা তো জানি না।

রুদ্র – আপনারা তো জানেন, বাতাসের মধ্যে অক্সিজেন নাইট্রোটজেন, কার্বণ- ড্রাইঅক্সাইডসহ বিভিন্ন ধরণের উপাদান থাকে। বেঁচে থাকার জন্য আমরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকি। আমরা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন রকমের খাবার খেয়ে থাকি, তেমনই গাছ মাটি থেকে মূলত ১৬ ধরণের পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে থাকে; এই ১৬ টি উপাদানের মধ্য থেকে কোনোটি কম লাগে আবার কোনোটি বেশি লাগে। এজন্য মাটির গুণাগণ ও ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করা খুবই জরুরী। সারের প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আপনাদের পরে বুঝিয়ে বলবো, আপনারা আমার বাড়িতে আসবেন।

কৃষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রুদ্র ও তার বন্ধু চলে এলো।
রুদ্র- বন্ধু এবার বল, কোথায় গিয়েছিলি?
রাশেদ – তুই কি জানিস, সাচ্চু বাড়িতে এসেছে?
রুদ্র – না, ও তো নিজেকে নিয়ে গর্ব করে, ওর মন আগের মতো নেই। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। একদিন মোবাইল করেছিলাম, কিন্তু ব্যস্ত দেখিয়ে কথা কেটে দিলো। হ্যাঁ, ব্যস্ত থাকতেই পারে, কিন্তু ফ্রী হয়ে তো কল করা উচিত ছিলো, আমি ২য় বার কল করেছিলাম রাতে তবুও কেটে দিলো। এমন আচরণের কারণেই এমনটা মনে হলো।
জুয়েল- বন্ধু, সাচ্চু কিন্তু বাড়িতে এসেছে বিয়ে করতে, নিমন্ত্রণ তো পেয়ে যাবি। তবে দুঃখ একটাই, আমরা যেটার বিরোধী সে সেটাই করছে।
রুদ্র- কি? ও যৌতুক নিয়ে বিয়ে করছে!
জুয়েল – ঠিক তাই, শিক্ষিত মেয়ে, সুন্দর মেয়ে তবুও যৌতুক, সত্যিই ভাবতে পারছি না। আমাদের আন্দোলন তাহলে কি হবে? এলাকার মানুষ তো আমাদের মুখে থুঁ ছিটাবে, ভাবতেই পারতেছি না।
রুদ্র- তাহলে আমি ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারবো না, তবে হ্যাঁ, তোরা ঠিকানা দিলে আমি মেয়ের বাড়িতে গিয়ে যৌতুক না দেয়ার জন্য বলবো। বুঝবো যৌতুক যারা গ্রহণ করে তারা কতোটা হিংস্র হয়। যৌতুক ইচ্ছে করে দিলেও যারা যৌতুক গ্রহণ করে তারা কখনোই যৌতুকের লোভ সামলাতে পারে না, কোনোদিন পারেওনি। শোন তোরা আমাকে এই কাজটি করে দে, আর সাচ্চুকে কিছুই বলবি না।
রাশেদ- ঠিক আছে, তুই সময় মতো ঠিকানা পেয়ে যাবি। এখন তাহলে আসি।

–পরের দিন সকালে—

রুদ্র – আপনারা সবাই কেমন আছেন? (দশজন কৃষককে উদ্দেশ্য করে রুদ্র কথা)
কৃষক ১ – ভালো আছি বাবা,
রুদ্র – এবার কাজের কথায় আসি, জমিতে অধিক ফসল ফলাতে হলে আমাদের প্রয়োজন, সুষম সারের ব্যবহার।
কৃষক ১ – আসলে সুষম সার কি? এই নাম তো আগে কখনো শুনি নাই।
রুদ্র – মাটি ও ফসলের জন্য যে পরিমান পুষ্টি প্রয়োজন সেই পরিমান উপাদান সঠিক মাত্রায় জমিতে দেওয়াই হচ্ছে সুষম সার।

কৃষক ১ – আমরা তো জন্মের পর থেকেই কৃষি কাজ করতেছি কিন্তু সুষম সার তো কোনো সময় শুনিনি।
কৃষক ২ – আমাদের জমিতে তো এমনই ভালো ফসল হয়, তাহলে সুষম সারের প্রয়োজন কি?

রুদ্র- করিম (কৃষক-৩) – ভাই, আমাদের দেশের জনসংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, তাই না? কিন্তু আবাদী জমির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে না, সুতরাং এই অল্প পরিমান জমিতে কি করে বেশি ফসল ফলানো যায় বা আমাদের প্রয়োজন। এই অল্প জমিতে বেশি ফসল ফলানো জন্যই সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। কারণ, সুষম সারেই বেশি ফলন।

কৃষক-৪- ভাই, তাইলে কি জনসংখ্যা পরিকল্পনা মতো রাখার চেষ্টা করবো না?
রুদ্র- সেটা তো অবশ্যই করতে হবে। সেটা আলাদা একটা বিষয়। সেটা নিয়েও কথা হবে অন্য আরেকদিন।

কৃষক-১- আচ্ছা, সুষম সার কি আলাদা কোনো সার?
রুদ্র- না, সুষম সার বিশেষ কোনো সার না। এই যে আপনার জমিতে যে সার গুলো ব্যবার করেন, যেমন ইউরিয়া, টিএসপি, পটাস, জিপসাম ইত্যাদি।এই সার গুলো জমির মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজন মতো দেয়াটাই হলো সুষম সার। এবার বুঝতে পারলেন সবাই।

সকল কৃষকগণ—–জ্বী (সবার কণ্ঠে)।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ