কালা জাদু ( কঠিন কালা )

শাওন এরিক ২১ আগস্ট ২০১৬, রবিবার, ১২:৩৮:০৭পূর্বাহ্ন বিবিধ ১৫ মন্তব্য

খারাপ লাগছিলো বলে, এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পরলাম... ....

__ক্লান্ত অবসার্ত শরীর শোয়া মাত্রই ঘুম নেমে এল চোখে! মাঝে মাঝে না এমন মনে হয় শরীরটা বিছানার সাথে পার্মানেন্ট ফিক্সড হয়ে গেছে। আর কোনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারবনা।

কখনও মনে হয়, আমার ঘরের চারপাশে কোনও দেয়াল নেই। আমার বিছানাটা একটা মাঠের মধ্যে পড়ে আছে। অন্ধকারে আমার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে টরটর করে। যার চোখগুলো লাল, কোনও সরীসৃপের মত, এখনি আমার উপর উপর ঝাপিয়ে পরবে, মুখের ভিতর থেকে কাল কুঁচকুঁচে জিব বের হয়ে আসবে এখনি......আর আমার মুখের সামনে লকলক করবে। যাই হোক যা বলছিলাম,

শোয়া মাত্রই ঘুমের মধ্যে জেগে উঠলাম আমি। পা'গুলো জড়ো করে নিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। আমি জানি আমি এখনও ঘুমাচ্ছি আমি, ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছি, গভীর ঘুম।

টেবিলের উপর এখনও গ্লাসটা দেখা যাচ্ছে। একটা এক্সপেরিমেন্ট করা যাক। আমি এখন এটাকে শুন্যে ভাসিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। এবং ঘুম থেকে উঠে দেখব সেটা আমার বিছানার কাছে চলে এসেছে, এটা কখনই হতে পারেনা। তবু দেখা যাক না, কি হতে পারে!!!! প্রকৃতি আমাদের সাথে অনেক রহস্যময়য় খেলাইতো খেলে। কিন্তু সে তার রহস্যকে অবিশ্বাস করারও একটা রাস্তা খোলা রাখে। মানুষ ঐ একটা রাস্তার দিকে অগ্রসর হবে, হাজারটা প্রমাণ বাদ দিয়ে। গ্লাসটা যদি আমার কাছে সত্যি সত্যি এসে থাকে, তাহলে এর পিছনের ব্যাখ্যাটা হবে এই যে আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন কেউ গ্লাসটা আমার কাছে মনের ভুলে রেখে গেছে। তবু আশার কথা এইযে সবাই দাওয়াত খেতে বাহিরে গেছে আমাকে রেখে ।

আমি গ্লাসটাকে আমার চোখের ইশারায় টানতে লাগলাম আমার কাছে। গ্লাসটা নড়লনা পর্যন্ত, নড়া উচিত ছিল। কারন স্বপ্নটা এখন আমার নিয়ন্ত্রনে, আমি যে ভাবে চাইব স্বপ্নটাকে সাজাতে পারি কিছু সময়ের জন্য, কারন আমি জানি এটা সপ্ন । তারপর স্বপ্নটা মুহূর্তেই জটিল হয়ে যাবে, আর আমার করার কিছুই থাকবেনা। আমার বুকে ব্যাথা করতে লাগল। মনে হল কেউ বুকের উপর দাড়িয়ে পড়েছে। শ্বাস নিতেও পারছিনা। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়। পুরো শক্তিটা দিয়েছিলাম চোখের উপর। ধিরে ধিরে চোখে অসহনীয় ব্যথা শুরু হল। আমি হাল ছাড়লাম না। মনে হল ঘুমটা ভেঙ্গে যেতে চাইছে। কিন্তু আমার ঘুম কিছুতেই ভাঙা চলবেনা।

ঠিক যখন গ্লাসটা নড়ছে বলে মনে হল, আমার চোখও গরম হয়ে যেতে লাগল। মনে হচ্ছে ভিতরে রক্তের দলা জমতে শুরু করেছে। চোখ ফেটে এখনি বুঝি একদলা রক্ত ছিটকে বেরিয়ে আসবে। আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। যন্ত্রণায় ছটফট করছি। আমি জানি একটা বাজে কাজ করতে গিয়ে শরীরের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলছি। কিন্তু এখন আর আমার কিছু করার নেই। কখনও কখনও জেদের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় আসে যে, মস্তিস্ক পুরো সিস্টেম হেং করে ফেলে, এবং টাস্ক কমপ্লিট না করে স্বাভাবিক হতে পারেনা । এখনও তাই হয়েছে।

আমার ঘুম শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। আমি বুক চেপে ধরে অনেকক্ষণ হু হু করে কাঁদলাম। মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি...
মাথার কাছে দেয়াল ঘড়িটা টিক টিক করে বেজে চলেছে। লাথি দিয়ে ভেংগে দিতে ইচ্ছা করছে। গ্লাসটা আমার কাছে আনতে পারিনি। গ্লাসটা টেবিলের উপর-ই আছে। ঠিক যেমন ছিল।

কলিংবেল বাজছে, আমি গেট খুলে দিলাম। ওরা শপিংও করেছে বোধয়। আমার বোনটাকে খুব সুন্দর লাগছে, কাজল দিয়েছে কি!! ওর চোখে চোখ পড়তেই ও আর্তনাদ করে উঠল!!?

"তোর চোখে কি হয়েছে!! তোর চোখ পোঁড়া কেন? " :O

এক মিনিটের জন্য মনে হল, আমার পৃথিবী থেমে গেল। আমার পা ভারী হয়ে আসছে। আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা। আমি সেতুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম, অসহায় ভঙ্গিতে।

যাই হোক ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস ছিলনা।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম আমার চোখের উপর দিয়ে বাম থেকে ডানে কপাল হয়ে একটা লম্বা পোড়া দাগ। আম্মু বলল মাথার উপর দিয়ে একটা পোকা হেটে গেছে। নাম মনে নেই। ওটা নাকি যেখান দিয়ে যায়, ঐ জায়গার চামড়া পুড়ে যায়। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। শুতে গিয়ে দেখি বিছানার উপরটা একদম ভেজা, একটা গ্লাস উপুর হয়ে আছে। কি জানি আমার বোন হয়ত ফেলে গেছে পানি। কিংবা কোনও বিড়াল টেবিল পার হয়ে যাবার সময় গ্লাসটা ফেলে দিয়েছে।

হতেইতো পারে, কিন্তু তখন আমার স্বপ্নের কথা একদম-ই মনে ছিলনা। মনে পড়লে হার্ট-এটাক হয়ে যেত মাইরি 😀

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ