কল্পনা-০৫

শামীম চৌধুরী ৪ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৬:১৫:৪২অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

কল্পনা-৫
*
আজ মঙ্গলবার।
বানুর শুভ পরিণয়।
আগেই গ্রামের বাড়ি থেকে দাদা,ভাবী ও বানু চলে আসে আমার বাসায়। অন্য দশজন মেয়ের মতই বানুর বিয়েতে সব সখ ও আহ্লাদ পূরন করা হচ্ছে। গায়ে হলুদে বেশ আনন্দ করেছে রহিমের মেয়ে ফাতিমা। ফারাহকে এই প্রথম দেখলাম সারাটাদিন বানুকে ঘিরে ছিলো। দাদী-নাতনির খুঁনসুঁটি লেগেই ছিলো। ফারাহ নিজেই বানুকে সাথে করে নিয়ে যায় বিউটি পার্লারে। কণে সাঁজাতে।
বাড়ি ঘিরে ছিলো আনন্দ আর উচ্ছাস। দাদা ও ভাবীকেও দেখলাম ষোড়শী হয়ে আছেন।
মাঝে মাঝে কুদ্দুস বয়াতীকে দেখেছি দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়তে আর উচ্চ স্বরে

আ- ল-লা- হ,  শব্দ উচ্চারন করতে।

ঘরের এক কোনে বসে ছিলেন দাদা। আমি কাছে যেয়ে দাদার পিঠে হাত রেখে বললাম কি ভাবছো? বললেন কিচ্ছু নারে জর্জ ।

আমারতো সময় ফুরিয়ে এসেছে।

বানুর বিয়েটা দিয়ে যেত পারলাম তাতেই আমি কৃতজ্ঞ ‍সৃষ্টিকর্তার কাছে।

এত টাকা খরচ হলো ভাবছি তোর দেনা শোধ করবো কি করে?

দাদাকে অভয় দিয়ে বললাম এত চিন্তা করো নাতো? মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছো সেটাই আনন্দ। কেউ আর তোমাকে এখন কন্যদায়-গ্রস্ত পিতা বলতে পারবে না। গ্রামের বাজারে রহমানের চা’য়ের স্টলে যেয়ে আবার বসবে। আবার সেই আগের মত সবাইকে বুদ্ধি ও সুপরামর্শ দিবে। তুমি এখন মাথা উঁচু করে চা পান করবে। তোমার তো এখন সুখের দিন। তুমি বানুর জন্য দোয়া করো। আল্লাহ যেন ওর দাম্পত্য জীবন সুখী করেন। কথাগুলি বলার সাথে সাথে দাদার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে এলো। কদ্দুস বয়াতীর কাঁধের হাজী রুমাল দিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিলাম।
রহিমের মা’র চেহারাটা চকচকা থাকলেও কি যেন একটা চাপা কষ্ট বুকে বেঁধে রেখেছে। কুমড়ার মোরব্বার বোয়ামটা কোলে নিয়ে বসে আছে আর রহিমকে ডাকছে একটুকরা মোরব্বা খেয়ে যা বাবা। ফাতু মাঝে মাঝে দৌঁড়ে এসে দাদীর কাছে মোরব্বার বোয়ামটা হাইজ্যাক করতে চায়। দাদীও  শক্ত করে ধরে আছে কোন অবস্থাতেই  যেন ফাতুর কব্জায় না যায়। অন্যমনস্ক থাকায় হঠাৎ মোরব্বার বোয়ামটা ফাতুর হেঁচকা টানে ঘরের মেঝেতে পড়ে যায়। কাঁচের বোয়ামটা দু’টুকরা হয়ে সবগুলি মোরব্বা মাটিতে পড়ে রইলো। তারপরও রহিমের ভ্রুক্ষেপ নেই। ভাবী ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মেঝেটা পরিস্কার করে উচ্চ স্বরেই বললেন-

“হে খোদা মা’ হওয়া এত কষ্ট” কেন?

ফারাহ’র পরিবারের সবাইকে নেমন্তন করা হয়েছিলো। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে বিয়েতে আসে নাই। এব্যাপারে ফারাহ’র কোন মন্তব্যও নাই।
খুব ছোট পরিসরে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে আমাকে বিয়ের অনুষ্ঠানটি শেষ করতে হলো । রহিমের একটা ভালো গুন লক্ষ্য করলাম। সে আমাকে আগেই বলেছিলো চাচা, এক বেলাই’তো খাওয়াবো। খাবারটা যেন সেই মাপের হয়। সবাই যেন তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারে। সেইদিকটা মাথায় রেখে আয়োজনটা করবেন। টাকার কোন প্রশ্ন নেই। আমি শুধু চাই বানুর শ্বশুড় বাড়ির লোকজন বলতে পারে জলিলের শ্বশুড়ের দেয়া বিয়ের খাবার ছিলো শাহী’খানা। নামকরা বাবুর্চী সমিরকে দিয়ে রান্না করানো হলো। কাচ্চি, মোরগের রোষ্ট, খাসীর মাংস সাথে নান-রুটি, আগুনে পুঁড়া মুরগীর কাবাব, বোরহানী ও ফিন্নী। আর ছিলো কোমল পানীয়।
কোন কমতি ছিলো না খাবারে। আগত অতিথিরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেই খেয়েছেন। ফারাহ’র মা-বোনদের জন্য টিফিন বক্সে রহিমের মা’ খাবার তুলে রেখেছেন। যাবার সময় যেন রহিম নিয়ে যায়।
চতুর্দোলাতে চড়ে বানু স্বামী জলিল শেখের হাত ধরে বিদায় নিবে। রহিম দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কারন বোনের বিদায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বলে। আমি যেয়ে রহিমকে কাছে নিয়ে আসি আর বলি বোনটাকে জামাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে দোয়া করে দাও বাবা। বানু বাবাকে কদমবুচি করার সময় টান দিয়ে বুকে টেনে নিলো। কদ্দুস বয়াতীর আর্ত চিৎকারে আকাশ-জমিন কেঁপে উঠলো। বাবা-মেয়ের কান্নায় উপস্থিত সকলের চোখ জলে ভিঁজে গেল। একমাত্র বানুর মা’কে দেখলাম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। চোখে এক ফোঁটা পানিও নেই। ভাবলাম এটাই বুঝি মা’য়ের ভালোবাসা। যে মা’ সন্তানকে দশ মাস গর্ভে রাখতে পারেন সে মা’ জানেন এ বিদায় কষ্টের না। সুখের।
বানুকে বিদায় দিয়ে দাদা বিছানায় শরীরটা ছেড়ে দিয়েছেন। ভাবী আঁচল মুখে গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। রহিম চলে গেছে ফারাহকে নিয়ে। বিদায় বেলায় ফারাহ শ্বাশুড়ীকে সালাম করে মাথায় হাত দিয়ে বলে গেল আপনি দোয়া করবেন। বানু যেন সুখী হয়।
সারাদিন রোজা ছিলাম। ইফতারের পর তেমন কিছু খাইনি। আর বিয়ে বাড়িতে সব সামলানোর ব্যাস্ততায় রাতের খাবারটা এই ফাঁকে সেরে নেই।

আপনারাও দোয়া করবেন বানুর জন্য। শ্বশুড়-শ্বাশুড়িরদের সাথে নিয়ে যেন বানু  স্বামীর সংসারে সুখ করতে পারে।

( চলবে )

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ