কল্পনা-০৪

শামীম চৌধুরী ৩ জুন ২০১৯, সোমবার, ০৬:১২:২২অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

ইনশাআল্লাহ।

সবকিছু ঠিক-ঠাক থাকলে আগামী মঙ্গলবার ৪ঠা জুন’ রহিমের বোন বানুর বিয়ে। বানুর হবু বরের নাম জলিল শেখ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। চাকুরীর সুবাদেই ঢাকা থাকে। একটি করপোরেট অফিসে ভালো বেতনে চাকুরী করে। জলিল শেখের বাবা-মা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। বানুর হবু বর ঢাকাতে যে মেসে থাকতো সেটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আপাততঃ বিয়ের পর বানুকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকবে। রমজান মাসের জন্যে খুব ছোট পরিসরে বানুকে তুলে দিচ্ছেন কুদ্দুস বয়াতী। বানুকে বিদায় দিয়ে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হচ্ছেন রহিমের বাবা। এদিকে আজ দাদা আমাকে ফোন দিয়ে বললেন আমি যেন বিয়েতে উকিলি দেই। বানুকে তার হবু বরের হাতে তুলে দেই। কুদ্দুস বয়াতী আর আমি নিজ মায়ের গর্ভের ভাই না। আমরা একই গ্রামের। পাশাপাশি বাড়ি। সেই কারনে উনাকে দাদা বলে ডাকি। গ্রামের লোকজন ছাড়া বাহির থেকে কারো বুঝার উপায় নেই যে, রহিমের বাবা আমার গ্রাম্যভাই। আজ সেহরীর পর রহিমের সাথে কথা বললাম। রহিম বললো চাচা টাকার চিন্তা করবেন না। আমি বিয়ের খরচ পুরাটাই দিচ্ছি আপনার হাতে। আপনি আপনার মত করে সব করবেন। কোন অবস্থাতেই  ফারাহ মানে ফাতেমার মা যেন বুঝতে না পারে। খাবার খরচ ছাড়াও আপনাকে আলাদা করে জামাই’র জন্য পোশাকের  টাকাও দিচ্ছি। সানমুন টেইলার্সে নিয়ে ওর স্যুটটা বানিয়ে দিবেন। চাচা, আপনাকে দিয়ে সব করাচ্ছি বলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। উত্তরে বললাম তুমি চিন্তা করিও না বাবা। আল্লাহর রহমতে সব কিছুই ঠিক মত হবে। আরেকটা কথা চাচা সম্ভব হলে বাবা-মা সহ বানুকে আজই নিয়ে আসেন আপনার বাসায়। চাচী যেন মা’কে সাথে সাথে রাখেন। রহিমের সাথে কথা শেষ করে সেহরী খেতে বসেছি। এমন সময় দাদা ফোন দিয়ে বললেন,

জর্জ মিয়া মাইয়্যাডারে বিয়া দিমু কত টেহার যে দরকার।

আমার হাতে তো অহন টেহা নাই।

বশির মিয়ারে কইছি দক্ষিন হালটের জমিডা বেঁইচ্যা দিতে। তুই কি আামরে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দিবি?

জমিডা বেঁচা অইলেই তোর ধার শুধাইয়া দিমু।

শুধু  হুম হাম করে ফোনটা রেখে দিলাম। আর বললাম দাদা অত চিন্তা করিও নাতো। দেখবে তোমার মেয়ের বিয়ে ঠিকমতই হবে।

উত্তরে বললো রহিম কি কিছু কইছে তোরে?

বউমারে কইতেও সাহস পাই না।

আমার বেগম সাহেব সব শুনে বললেন বানুকে আমি আজই  আনতে যাবো। ওর গায়ে হলুদ দিবো। সাঁনাই বাজাবো। আমারতো মেয়ে নেই। বানুকে মেয়ের মত করেই সাজাবো।

রহিমের মা’র কিছু গহনা ছিলো। ভাবী সেগুলি যতনে রেখে দিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ের জন্য। হয়তো বা সেই গহনাগুলিই কুদ্দুস বয়াতির শেষ সম্বল। যদিও ছেলের পক্ষ থেকে কোন দাবী নাই। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবো এমন সময় জলিল শেখের ফোন। চাচা, রহিম ভাইয়া আমাদের বাড়ির ঠিকানা চাচ্ছেন। আগামীকাল ফর্নিচার,টিভি, ফ্রিজ সহ কিছু আনুসাঙ্গিক জিনিষ উনার অফিসের পিয়ন দিয়ে ট্রাকে করে বাড়িতে পাাঠাবেন। আপনি একটু আব্বার সাথে কথা বলেন।

ফারাহকে বললাম,তোমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি তো সকালেই ঢাকা আসছেন। তোমার বাসায় রেখে বানুর বিয়েটা দাও। ফারাহ আমতা আমতা করে বললো চাচা, ফাতেমার টিচার,কোরআন শিক্ষা, ঈদের পর স্কুল খুললেই পরীক্ষা এর মধ্যে আমার বড় বোনের বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাতে আনা, সব কিছু মিলিয়ে কি-যে অবস্থার মাঝে আছি তা বলার ভাষা নেই। দেখুন না চাচা, আপনার বাসায় রাখা যায় কিনা? আমরাতো বিয়ের দিন থাকবোই। বানুর জন্য কি কিছু চিন্তা করেছো কি করবা? চুপ করে থেকে বললো, আপনার ছেলের সাথে কথা বলে জানাবো। খরচের ব্যাপারে ফাতেমার দাদা কিছু বলেনি আপনাকে? সব শুনে ফারাহকে বললাম, বানুর বিয়ে হবে,দাদা ভাবীরও থাকার ব্যবস্থা হবে,বানু দাম্পত্য জীবনও শুরু করবে, ভালোবাসা দিয়ে জলিল শেখের বাবা-মাকে জয়ও হয়তো করবে। শুধু তুমিই পারলে না রহিমের পরিবারকে অকৃত্রিম ভালোবাসতে। দোয়া করি যেন তোমার জীবনে এমনটি না হয়। কুদ্দুস বয়াতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সবাইকে বানুর বিয়েতে নেমন্তন করিলাম। আপনারা সবাই উপস্থিত থেকে বানুকে দোয়া করিবেন। আল্লাহ যেন বানুর সুখী দাম্পাত্যজীবন কবুল করেন।

আমীন।

(চলবে)

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ