করোনা চুমু!

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার, ০৩:২৭:৫৮অপরাহ্ন রম্য ২৩ মন্তব্য

আজ লিখব চুম্বন রম্য-

চুমু, চুম্বন, কিস্ কতনামেই আমরা বলি।যার যেটা বলতে ভালো লাগে। বেশ কিছুদিন আগের সেই ভাইরাল চুম্বন দৃশ্য নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। অনেক আলোচনা- সমালোচনা লেখালেখি হয়েছে। মুসলিম একটা দেশে এমন ঘটনা ঘোর অন্যায়। আমরাও পাপীদের তালিকায় পরে যাচ্ছি। এমন অবস্থা যেন প্রকাশ্য চুমুর মত জঘন্য, অশ্লীল, জাত যাওয়া পাপ আমাদের দেশে আর একটিও হয়না। আমার কাছে এটি সবার মত অতটা অস্বাভাবিক মনে হয়নি। চারিদিকে লোকজন, শোরগোল, শব্দ কিছুই তাদের কানে যাচ্ছে না। দুজন মগ্ন প্রেমিক ঝুমবৃষ্টিতে চুম্বনে ব্যস্ত, ভালোই লেগেছে। কারন একটু দূর্নাম-বদনাম ছাড়া প্রেম কি জমে?

" তোমাকে বলব হ্যালো মি: খবর শুনেছ নাকি! তোমার আমার প্রনয় নিয়ে দেশ জুড়ে মাতামাতি। ঢাকা শহরেরে অলিতে গলিতে তোমার আমার পোস্টার, সব পত্রিকার ফ্রন্ট পেজে আঁকা  ছবি তোমার আমার!"

করোনার আগে অলিগলি, ভার্সিটি, কলেজ, পার্ক, চিপাচাপায় গেলেই এ ওয়েষ্টার্ন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যেত। এখন অনেক কম, নাই বললেই চলে। করোনা কালে নিজের জীবন আগে। দুএকপয়সার চুমু খেয়ে জীবন হারানোর কোন মানে নেই। এমন ধারণায় সবাই শামুকের খোলে ঢুকে পরেছে। একদলের সাথে আমিও একমত, করোনা এসেছে পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে, পাপীদের বিলীন করতে। এখন মনে হচ্ছে কিছু যাক না যাক প্রকাশ্য চুমু বোধহয় বন্ধ হবেই হবে! আর করোনা যেহেতু থাকবে সময় নিয়ে, তো সাবধান থাকাই ভালো।

আমাকে বেহায়া ভাবলে ভাবতে পারেন কিন্তু চুমু শব্দটা আমার ভীষন পছন্দের। সকল ভালোবাসার প্রথম ধাপ এটি। আমরা শুধু নর-নারীর ব্যাপারে এটিকে ভেবে শুধু শুধু লাল হই। এই রম্য পড়ে দুধে-আলতা পাঠকগণের গাল লাল হলে আমার কিছু করার নেই। আর মোটামুটি কলম যারা ধরতে জানে, লেখক না কিন্তু? তাদের নাকি সব বিষয় লেখা যায়!

তো চলুন পড়া যাক-

আমাদের বাসায় অনেক ভাড়াটে, তাদের অনেক বাচ্চা-কাচ্চা। আমি বাচ্চাদের ভীষন ভালোবাসি, তারাও আমাকে পছন্দ করে। দুদিন আগে সবচেয়ে কিউটের ডিব্বার সাথে দেখা হয়ে গেল গেটে। আমি হেসে ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দিলাম। টপাক করে নিয়ে নিল। এখন আমার ফেরত গিফট চাই, একটু জড়িয়ে চুমু দিতে গেলাম। স্পষ্ট জানিয়ে দিল,

- আম্মু তুমু( চুমু) দিতে না কলেছে( করেছে)! কলোনা( করোনা) ধরবে। যাও গিয়ে হাত মুখ ধোও তারপর। হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখি তিনি চকলেট নিয়ে উধাও। 😜😜

বাইরে যাবার আগে ঘড়ি পরতে পরতে মাকে জড়িয়ে বিদায় নেই। মাও সবসময় কপালে চুমু দিয়ে দেয়, সারাদিন দারুন কাটে। ঈদানিং দেখছি তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। শুধু মাথায়, গালে হাত বুলিয়ে তার ঠোঁটে ছোঁয়ান। আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস।কষ্ট হয়, মন ভরেনা। মনে মনে বকা দেই ভাই- বোনদের। নিশ্চয়ই আমার কোন ভাই- বোন কুটনামি করে গেছে করোনার ভয় দেখিয়ে। করোনার ভয়ে মা তাই প্রিয় মেয়েকেও এড়িয়ে যাচ্ছেন।

দিপ্তীর জ্বর, কিছু ভালো লাগছে না বেড়াতে যাবে। নানা বাহানায় কাটিয়ে দিলাম সপ্তাহ। কিন্তু জ্বর আর ভালো হয়না। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় গেলাম, সে অর্ধেক রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আমি আর রিকশা থেকে নামিনা কারন তিনি দেখা হওয়ার সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরেন। গালে গাল লাগান, চুমু দেন। সরাসরি যেখানে যাওয়ার সেখানে গিয়ে তারপর দুরে দুরে দাঁড়িয়ে আছি। পুরো সময় ভয়ে ছিলাম কখন জড়িয়ে ধরবে।সে বোধহয় বুঝতে পারেনি। জীবনের মায়া সবথেকে বেশি করোনা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিল।

যা হোক এ সব না হয় মানা গেল! কিন্তু এ দুজনের কি হবে?

তারা দুজনে ডাক্তার আমার আত্মীয় ও খুব কাছের । মাসখানেক হল বিয়ে হয়েছে। দুজনে একই হাসপাতালে জবও করে। বিয়ের পর বর হাসপাতালে জয়েন করেলেও বউ এখনও অফ ডিউটি আছে। বিয়ের ধকল সামলাচ্ছে। সংসার বেশ ভালোই চলছে তাছাড়া দুজনের পছন্দের বিয়ে।

হঠাৎ মাস না যেতেই তুমুল ঝগড়া এবং মেয়ে বাপের বাড়ি। ঘটনা কি? কিছুতেই মুখ খুলছে না কেউ। অনেক চাপাচাপির পর মেয়ের মুখে শোনা গেল-

হাসপাতালে জয়েন করার পর থেকেই শুরু হয়েছে এমন। প্রথম প্রথম সহ্য করেছে কিন্তু আর কত সহ্য করবে। সেদিনও হাসপাতাল থেকে ফিরে দরজা খুলেই জড়িয়ে চুমুর বায়না জুড়ে দিয়েছে। সহ্যের সীমা পেরিয়ে সে সরিয়ে দিয়ে  বলেছে- করোনার জীবাণু থাকতে পারে। যাও গোসল করে এসো? এ সময় এত ওয়েষ্টার্ন হতে হবে না।

জামাইসাহেব মুখে কিছু না বললেও আশাহত হয়ে গাল ঠিকই ফুলিয়েছে। ভালোবাসা কি ফুরিয়ে গেল? ডাক্তার হয়েছি বলে সব নিয়ম কি আমাকেই মানতে হবে? আর মনের ব্যাপারটা তো আর এতসহজলভ্য নয়। কখন আবেগ আসে, কি চায়। হুটহাট আসেও না আর ডিউটি তো নয়ই!

গোসল সেরে হুঙ্কার- কই, কফি দাও!

- কফি তো বানাইনি। তুমি না অন্যকিছু খাবা! তারপর,,,

- মহা গরম। আরে! আমি কি সাধু- সন্ন্যাসী যে গোসল করে এসে চুমু খাব। মুড নেই, কফি দাও।

এবার বউ এর মন খারাপ। এই ফাঁকে একটু সেজে বেচারী বড় আশা নিয়ে ছিল। চুমু বিরহে কফিতো হলই না উল্টো এ কথা সে কথায় শুরু হল ঝগড়া। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মুখ দেখাদেখি, খাবার-দাবার বন্ধ অতঃপর  মেয়ে বাপের বাড়ি। করোনা মিয়ার আচ্ছা একটা বিচার হওয়া দরকার। না জানি এরকম কত সংসারে আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছে। 😜😜 😜

ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু পেছনের বেঞ্চে বসা ছেলে/ মেয়েটি, এমন গল্পে এতক্ষনে বলেই বসত ম্যাম আপনার ব্যাপারটা বলেন একটু শুনি? গম্ভীর, রিজার্ভ হওয়া ছাড়া তখন আর উপায় থাকেনা। তেমনি পুংটা/দুষ্টু পাঠকেরা মিটমিট হাসছেন আর এটাই ভাবছেন তো! আসেন তাহলে বলি আমার ব্যাপার। কালকেই জানতে পেরেছেন আমার বয়স। রীতিমত বুড়ো মানুষ আমি। তো এ বয়সে আর কিইবা থাকতে পারে।!

কাল সকাল সকাল তৌহিদ ভাই এর গ্রুপ পোষ্ট পেয়ে- "ও আল্লাহ মোর বয়স সবায় জানি গেইল"। তৌহিদ ভাইকে রীতিমত খুন করতে ইচ্ছে হল! আমারই তো ভাই, তাই এমন পাওয়ায় তাকে শুধু ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতাই দেয়া যায়। খুন তো নয়ই! আর বাকি সবাইকেও অনেক অনেক ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা আমাকে উইশ করার জন্য।

আসলে আমি এমন করে অভ্যস্ত নই। কেন তাও জানিনা। ভাইবোন কাছের বন্ধু-বান্ধবরা ম্যাসেন্জারে ম্যাসেজ পাঠায়, ওটুকুই চলছে অনেকদিন। আর কেকটেক কাটার মত মানসিকতাও নেই কেন যেন। সেখানে এতগুলো মানুষের ভালোবাসায় সত্যি আমি ভীষন আপ্লুত। এমন কিছু মানুষের সাথে থাকবার, তাদের ভালোবাসা পাবার মত সত্যিই কি আমার যোগ্যতা আছে? তাই সবার জন্য আমার ক্ষুদ্র মানুষটার পক্ষ থেকেও অনেক অনেক ভালোবাসা।😍😍😍

আর আমরা সবাই, বাসায় ঢুকে আগে সাফ-সুতরা হব তারপর অন্যকিছু। কারণ করোনা মিয়া/বেগম তুমুল বেগে ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কাউকে চেনে না সে। তাই আমাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। "অপেক্ষা হল শুদ্ধতম ভালোবাসার প্রকাশ"। তাই অপেক্ষা করব ভালো সময়ের। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।🌹🌹

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ