করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশ

ইঞ্জা ৫ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ০৪:০৬:১৫অপরাহ্ন সমসাময়িক ৩৭ মন্তব্য

দুঃখজনক ভাবেই সত্য হলো আমার লেখা "কোভিড-১৯ করোনা আসছে" লেখাটি, এরপরে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশটিতেও একি কথা বলে গেছি, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা বিষয়ক কিছুই লিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এর কারণে আছে আমার হতাশা, দুঃখ ইত্যাদি যা করোনা সংক্রান্তই।

সত্যি আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম সরকারের একের পর এক অবিবেচক সিদ্ধান্ত কিভাবে দেশকে মহামারী রোগের হাতে সঁপে দেওয়া হয়েছে।
প্রথমেই দেখলাম ইটালি থেকে ঢলের মতো আশা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জামাই আদরে বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া যা খুবই অনুচিত সিদ্ধান্ত ছিলো তা নিশ্চয় সরকার অস্বীকার করতে পারবেনা।
এরপর একের পর এক করোনা আক্রান্ত দেশ তথা সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ঢলের মতো এই দেশে চলে এলো, কিন্তু সরকার তাদের বাঁধা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদেরকেও জামাই আদরে বাড়ি ফিরে যেতে দেয়।

এখন লও ঠ্যালা সামলাও অবস্থা, দেশে ধীরে ধীরে করোনা আক্রান্ত পাওয়া যেতে লাগলো, এতেও মনে হচ্ছেনা সরকার ভয় ভীত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঢিলেঢালা করোনা রুগী খুঁজে বেড়ানো উনাদের ভীতি না জাগালেও, জনগণ সত্যিই আতংকিত হয়ে দেখছিলো।
এরপর সরকার দিলো ঢিলেঢালা ধরণের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ছুটি, এতেই আমাদের আবাল জনতা খুশির ঠ্যালায়, ঘো্রতে বেরিয়ে পড়লো দিগ্বিদিক, দেশের পর্যটন এলাকাতে লোকে লোকারন্য হয়ে গেলো, চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেলো হায় হায় রবে।
সরকার বেগতিক দেখে সবাইকে ঘরে ফিরার তাগাদা দিলো, নিষিদ্ধ করা হলো বেড়ানো।
এর কিছুদিন পর সরকার ঘোষণা দিলো সাধারণ ছুটির, এতেই করোনার পায়া ভারী হলো।
লোকজন ছুটি পেয়েই ছুটলো বাড়ি ঘরে ঈদের খুশি নিয়ে, এতে করোনা ব্যাটার সুবিধা হলো ভীষণ ভাবে, সেও ছড়িয়ে পড়তে লাগলো দেশের বিভিন্ন জেলায়, কোণায় কোণায়।

আমি ভাবি, আমাদের মতো আহাম্মক আর কোন দেশে আছে?
মনে হয়না আছে বলে, আছে কি?
শুরু হলো করোনার ভয়ংকর নৃত্য, এদিকে মরে, ওদিক মরে, কিন্তু কেউ স্বীকার করেনা যে যারা মরেছে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাচে থা ধিনধিন, বলে করোনায় আক্রান্তের হার কম, আহা বেশ বেশ বেশ।
আত্মতুষ্টির ঢেকুর তোলা শুরু হলো উনাদের, এরমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আদেশ দিলেন যেন প্রতিটি জেলা থেকে টেস্ট করা শুরু করার জন্য, এদিকে পিপিই সংকটে ডাক্তারগণ সাধারণ রোগীও দেখতে নারাজ, শুরু হলো খোঁজ খোঁজ।
ভাগ্য ভালো কিছু নবীন বুয়েটিয়ানের উদ্যোগে তাও পাওয়া হলো, ইতিমধ্যে সরকার দ্বিতীয় দফা ছুটি বাড়ালো।
এরপর হলো বিজিএমইএর কর্ণধারদের হঠকারি সিদ্ধান্ত, গার্মেন্টস গুলো দিলো খুলে, এ শুধু হঠকারিতা নয়, এ ছিলো জাস্ট কুচক্র, সরকারের থেকে ফায়দা নেওয়ার তালে এই সিদ্ধান্ত ছিলো নিশ্চয়, তারা তাদের লোক দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে গার্মেন্টস কর্মীদের ফিরিয়ে আনা শুরু করলো, মানুষ যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে দুই তিনশো কিলোমিটার হেঁটে পাড়ি জমানো শুরু করলো।
এরপর জনগণের ছিঃ ছিঃ রবে বেতাল হয়ে রাতে তারা সিদ্ধান্ত দিলো গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে আগামী এগারোই এপ্রিল পর্যন্ত।
এতে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে, আরেকদফা করোনা ব্যাটা লাফাতে লাফাতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় এসে আরও আক্রান্ত করে আবার লাফাতে লাফাতে বিভিন্ন জেলায় রোগ ছড়াতে ছড়াতে গেলো।
এখন আজ দেখুন এক লাফে করোনা আক্রান্ত ১৮ জন হয়ে গেলো, আহা কি মজা আকাশে বাতাসে।

এদিকে সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ লক্ষণীয়, যেমন ত্রাণ তৎপরতা।

সরকার বিভিন্ন জায়গাতে ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলো, গরীব দুঃখি ত্রাণ পাবে, খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে।
এতেও বাদ সাধলো এলাকার হর্তাকর্তারা, সরকার তাদের দিলো ত্রাণ দেওয়ার জন্য, কিন্তু তারা ত্রাণ দিলো কম, হজম করা শুরু করলো বেশি বেশি।
প্রধানমন্ত্রী এইসব দেখে নিরাশ হয়ে এখন নির্দেশ দিলেন, এখন থেকে ত্রাণ দেবে আর্মিরা, মনু বুঝছো, এখন নাই ঝারি ঝুরি, এই জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী পুলিশের মাধ্যমেই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ত্রাণ পোঁছানোর ব্যবস্থা করলেন।
স্যালুট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

আমার কিছু কথা আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনুরোধ করছি, প্লিজ ফর গড সেইক আপনি এমন ঢিলেঢালা বন্ধ না দিয়ে কারফিউ জারি করুণ।
সাথে সাথে করোনা আক্রান্তের টেস্ট যেন আরও বৃহত্ পরিসরে করা হয় তার ব্যবস্থা করুণ।
সাথে সাথে আক্রান্ত  রোগীদের দ্রুত আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করুণ, যথাসাধ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করুণ, যারা কোয়ারেন্টাইনে থাকার, তাদেরকে যথাযথ ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুণ।
আপনি যেখানে সাহস দেখিয়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, আন্ডারগ্রাউন্ড রেল, হাইস্পিড ট্রেন, ফোর লেইন, সিক্স লেইন, ফ্লাইওভার, স্কেলেটর, এলিভেটর লাগানো ফুটওভার ব্রিজ, কর্ণফুলী টানেল সহ বিভিন্ন কাজ করতে পারেন, তাহলে নিশ্চয় এই করোনা যুদ্ধেও জয়ী হতে পারবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি চাইলেই চায়নার ডাক্তার, নার্সরা এসে আপনার সকল চিকিৎসকদের ট্রেনিং দিতে পারে এই যুদ্ধে জয়ী হতে।
সাথে সাথে বেক্সিমকো, ইউনাইটেড, স্কয়ার, এপোলো, বসুন্ধরা, প্রাণ গ্রুপ সবার থেকে সহযোগিতা নিন, এই দুঃসময়ে তারা না লাগলে আর কে লাগবে বলুন?
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

এখন সবার জন্য বলছিঃ

প্লিজ বাড়ি ঘরে থাকুন, সবসময় পরিষ্কার থাকুন, হাত ধুয়ে নেবেন যথার্থ ভাবে, জানেন তো বেঁচে থাকাটাই এখন অনেক কঠিন।
ভালো থাকবেন সবাই।

STAY CALM, STAY HOME, BE SAFE.

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ