জাতী হিসেবে আমরা বাংগালীরা আবহাওয়াগত কারনে অনেক বেশিই আবেগ প্রবন। তাই যেকোন জিনিসের প্রতি আমরা খুব দ্রুত মোহিত হয়ে যাই। কোন বাস্তব কিছু দেখার চেয়ে শুনে থাকা কথা বা অদৃশ্য গুজবে অবলিলায় সময় পার করতেই বেশি পছন্দ করি।

এ সব কথা কেনো বলছি তাও হয়তোবা অনেকেই ধারনা করে ফেলেছেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাস এর আক্রান্তে সমগ্র দুনিয়া কাঁপছে। পৃথিবীর অন্যতম পরাক্রমশালী দেশগুলো পর্যন্ত নাস্তানাবুদ। চীন থেকে শুরু হয়ে ইউরোপ আমেরিকা সহ প্রায় ১৭৯ টি দেশ চরম ভাবে আক্রান্ত। সমগ্র বিশ্বকে এক রকম স্ট্যাচু বানিয়ে পৃথিবীর চলমান গতি বেঁধে দিয়েছে শুধু চার দেয়ালের মধ্যে। স্থবির হয়ে পরেছে উন্নয়ন। এখন সবাই ইয়া নফসি ইয়া নফসি নিয়েই ব্যস্ত।

এত কিছুর মধ্যে এত কিছুর পরেও আমরা আবেগী বাংগালীরা রয়েছি বহাল তবিয়তে। আমাদের কোন চিন্তা নেই। আজকের তারিখ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে ৪৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে, ১৪ জন আক্রান্ত এবং একজন মৃত। এ আর বিশেষ কি? বিশ্বের সব দেশের তুলনায় এটা পাত্তা না দিলেও কিছুনা। এই সংক্রমন রোধ করার জন্যে ইতোমধ্যে সরকার স্কুল/কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আমাদের হয়েছে সুযোগ। এই সুযোগে কিছুদিন কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন কিংবা কুয়াকাটা ঘুরে আসা যাক। এম্নিতেই গরম বেড়ে গিয়েছে, তার উপর কিছু ছুটি ও পাওয়া গেলো। এখন লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রেন এবং প্লেনের টিকেট পাওয়া দুস্কর হয়ে গেলো। কি একটা অবস্থা!

আমাদের দেশের এমনই অবস্থা এই সময়ে সরকার মহারাজের মন্ত্রিপরিষদ যে যেখান থেকে পারছে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে, যা এই দুঃখের মাঝেও মনোরঞ্জন এর কাজ।
করে।

আমরা বাংগালীরা পীর আউলিয়ার জাতি এর মধ্যেই আমরা এই করোনা ভাইরাস নিরাময়ের স্বপ্নে ওহি পেয়ে গেছি, কেউ দাবি করেন তিনটি থানকুনি পাতা খান,কেউ বলে আল্লাহ পাক তাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন তাই হোমিওপ্যাথির বোতলে ঔষধ বিনামূল্যে দিচ্ছেন। কেউ করোনা নিরাময়ে তুলশি পাতা খাওয়াচ্ছেন।

বলা বাহুল্য আমাদের এদেশে করোনা এসেছ্র চায়নার কমকরে হলেও ২ থেকে আড়াই মাস পরে। তাও নিয়ে এসেছেন আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তাদের প্রতি যথেস্ট সম্মান আমার বরাবরই ছিলো এখনো আছে। কিন্তু তার মাঝেও কিছু আবেগী ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন না মেনেই এই দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়েছেন।

এদের মধ্যে কেউ অনেক দিন পরে এসেছেন বলে শশুর বাড়ি গিয়ে বউ বাচ্চা সহ কোয়ারেন্টাইন রত। আবার কেউ কেউ দেখা যায় মটর সাইকেলে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একজনকে দেখলাম বাজারে মাছ বিক্রি করেন। এইগুলোই আমাদের হতাশার কারন।

এছাড়াও কিছু আবেগী রয়েছে যারা করোনাভাইরাস পজিটিভ অবস্থায় ইটালি থেকে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়েছেন। এখন ফেইজবুকে তাদের ছবি পোস্ট করে সন্ধান চাওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে হাজবেন্ড ইটালি থেকে করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়ে ফিরেছে তার স্ত্রী পুলিশে ফোন করে তাকে ধরিয়ে দিয়েছে।

বাংগালী বীর ও বটে, বরিশাল জেলার গৌরনদী থানায় করোনাভাইরাস সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক ব্যক্তি পালিয়ে যাবার সময় এলাকার চারজন যুবক তাকে অনেক কস্টে ধরে ফেলে। এই বীরত্বের জন্যে এলাকার মানুষ তাদের নিয়ে মিছিল করে, করমর্দন করে, একে অপরের বুকে জড়িয়ে ধরে। এ উল্লাস ছিলো বিজয়ের কিন্ত তারা এর ভবিষ্যৎ কি জানেনা!

বাকেরগঞ্জে করোনাভাইরাস সাস্পেক্টেড এক ব্যক্তি পালিয়েছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সবচেয়ে এলার্মিং বিষয় হচ্ছে গত এক সপ্তাহে এয়ারপোর্টের মাধ্যমে লক্ষাধিক লোক দেশে প্রবেশ করেছে অথচ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে মাত্র ৪০-৫০ জন আর হোম কোয়ারেন্টাইনে ৩০০০ বা তার কিছু বেশি তাহলে বাকি লোক গুলোর কি অবস্থা? তার কোন তথ্য কি কেউ জানে?

আমি আগেই বলেছি আমরা আবহাওয়াগত কারনে অনেক আবেগী, তাই একে অপরের জন্যে মন কেঁদে উঠতে সময় লাগে এক সেকেন্ড। আমাদের ভালোবাসা সীমাহীন। আমাদের যেটা নেই সেটা হলো আত্মসচেতনতা। আমাদের যেটা নেই সেটা হচ্ছে জ্ঞান। কোন সময় কি করতে হবে সেটা জানা নাই আমাদের! আমরাও বাঁচতে চাই কিন্তু এই মহামারী এই বিপদ থেকে কিভাবে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারবো তা জানা নেই। যা জানি তা হচ্ছে আল্লাহ যদি আমাদের রক্ষা না করে আমাদের আর কোন রক্ষা কর্তা নাই।

২০-০৩-২০২০

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ