আমাদের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্যে বছরে দুই ঈদকে উৎসবের  মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটা ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আযহা। আরবী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান মাসের একমাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের এক তারিখে ঈদুল ফিতর পালন করি। জ্বিলহজ্জ্ব মাসের দশ তারিখে পালিত হয় ঈদুল আযহা। এই ঈদকে আমরা কুরবানীর ঈদ বলি। কুরবানীর ঈদ কেন পালিত হয় তা কমবেশি সবাই জানেন। সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেক মুসলিম ব্যাক্তি চেষ্টা করেন জীবনে অন্তত একবার পবিত্র হজ্জ্ব আদায় করতে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে কুরবানী দিতে। এক্ষেত্রে ইসলামে হালাল হিসেবে স্বীকৃত (উট, দুম্বা,গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) পশুগুলোকে ধর্মীয় রীতিতে জবাই করে এবং জবাইকৃত মাংস যথাযথ বন্টণের মাধ্যমে কুরবানীর নিয়ম পালণ করা হয়।

ইদানীং আমাদের সমাজে যে জিনিসটা খুব বেশি নজরে পড়ে তাহলো, উচ্চবিত্ত /সামর্থবান ব্যাক্তিরা একাধিক পশু কুরবানী করে থাকেন। তাদের কুরবানী করার জন্যে কারো কোনো প্রশ্নের জবাবদীহি করতে হয় না। সমস্যা হয় মধ্যবিত্ত এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্পবিত্তদের। মোটামুটি টাকাপয়সা আছে, কিন্তু অঢেল খরচ করার সামর্থ নেই এমন মানুষদের কুরবানী করতে দেখলে আশেপাশের মানুষের কিছু একটা হয়। তারা কেন জানি এই ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিতে পারেন না। তেমন ব্যাক্তিদের কুরবানীর পশু কিনতে দেখলেই শুরু হয় নানারকম কথাবার্তা।
যেমন :

সে এতো টাকা পেলো কই?
সে নিশ্চয়ই দুইনম্বরি আয় করে,
সুদ খায়, ঘুষ খায়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের একার পক্ষে একটা বড় পশু কেনা সম্ভব হয় না। কয়েকজন মিলে একটা গরু কিনে। আশেপাশের কিছু লোক তখন ধরেই নেন যে, যারা ভাগে কুরবানী দিচ্ছেন তারা আসলে কুরবানী দেয়ার জন্য নয়, নিজেরা খাওয়ার জন্যে দিচ্ছেন। মোটকথা, তারা যে উদ্যেশ্য নিয়েই কুরবানী দিক তাদেরকেও বিভিন্ন কথা শুনতে হয়।

কিন্তু এতকথা কেন? মধ্যবিত্ত/ নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষদের জন্যে কুরবানী করা কি অপরাধ? একটি পরিবারের সবার অর্থনৈতিক অবস্থান এক হয় না। কেউ কেউ আর্থিক দিক দিয়ে বেশি স্বচ্ছল অবস্থানে থাকেন। এমতাবস্থায়  পরিবারের ঐ স্বচ্ছল ব্যাক্তি যদি চান নিজের সামর্থানুযায়ী কুরবানী করে পরিবার-আত্মীয় স্বজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে, তাহলে তার দোষটা কোথায়?

আমি /আমরা এমন অনেক পরিবার দেখি যারা কুরবানী দেন নিজেদের গরীব-অসহায়-অস্বচ্ছল আত্মীয়দের জন্যে। এই কুরবানীকৃত পশুর মাংস শুধু যে আত্মীয় স্বজনদেরকে দেন তাও নয়, বাসায় গৃহকর্মী, কাজের সহযোগী, ভাড়াটিয়া, এলাকার নৈশপ্রহরী, পরিচিত মুদি দোকানী সহ গলিতে ঘুরে বেড়ানো ভিক্ষুক, কেউই বাদ যায় না নিজেদের অংশ পেতে। বাদ পরেননা মাংস কাটাকাটিতে সাহায্য করতে আসা ব্যাক্তিরাও।

অনেকে ধার দেনা করেও কুরবানী দেন, কারণ যেসব মানুষ সারাবছর অপেক্ষায় থাকে তাদেরকে নিরাশ করতে চান না এইসব মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অথচ উদার মনের মানুষগুলো। এসব মানুষেরা আছে বলেই অপেক্ষাকৃত গরীব মানুষদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বয়ে আসে।

সহজ/ সাধারণ ব্যাপারগুলো কেন আমরা এত জটিল করে দেখি?

মানুষ সব কিছুকে নেগেটিভ দেখতে দেখতে স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনা করার অবকাশটুকুও হারিয়ে ফেলছে। এটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা কি পারিনা আলোচনা/ সমালোচনা উর্ধ্বে  রেখে ঈদকে ঈদের মতোই উদযাপন করতে!

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা। সোনেলা পরিবারের সকল ব্লগার, পাঠক, সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই ঈদ মুবারক। ভালো থাকুন সকলে। শুভ কামনা 🌹🌹

ছবি- নেট থেকে 🙂

0 Shares

৩৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ