কদম রসুল দরগাহ

কামাল উদ্দিন ২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৪০:৩১পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ২১ মন্তব্য

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জে কদম রসুল দরগাহ অবস্থিত। কদম রসুল বলতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পা অর্থাৎ পায়ের ছাপ কে বোঝায়। অনেক দিন যাবো যাবো করে শেষে কিছুদিন আগে ওখানে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো।

ইতিহাসঃ প্রচলিত আছে যে, মুহাম্মদ মিরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার পূর্বে পাথরে তার পায়ের কিছু ছাপ অঙ্কিত হয়। পরবর্তীতে সাহাবিগণ পদ চিহ্নিত পাথর গুলো সংরক্ষণ করেন বলে অনেকে দাবি করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি বর্তমানে জেরুজালেমে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ইস্তাম্বুল,কায়রো এবং দামেস্কে অনুরূপ পাথর সংরক্ষিত আছে। ষোল শতকের শেষদিকে মাসুম খাঁ কাবুলি নামে একজন সম্ভ্রান্ত রাজা ছিলেন। ইনি ঈসা খাঁর বন্ধু ছিলেন। তিনি ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে আরব বণিকদের নিকট থেকে বহু অর্থের বিনিময়ে এই মহা মূল্যবান পাথরটি কিনে নেন। এবং এ স্থানে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সুবাদার ইসলাম খান, শাহজাহান সহ আরো অনেক আমির-ওমরা এ স্থান দর্শন করেন। সুলতান শুজা এই দরগার জন্য ৮০ বিঘা জমি দান করেন। সে সময় এখানে কীরকম ইমারত ছিল তা জানা যায় না। এর পরে ঈসা খাঁর প্রপৌত্র দেওয়ান মনয়ার খান এখানে একটি ইমারত তৈরি করেন। কিন্তু সেই ইমারতও কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এর অনেক পরে তৎকালীন ঢাকায় বসবাসকারী কুমিল্লা জেলার টোরা পরগনার জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে নতুন করে একটি দরগাহ নির্মাণ করেন এবং তাতে পবিত্র পাথরটি স্থাপন করেন। তখন ১ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি ইমারত ছিল। এর পরে গোলাম নবীর তৃতীয় পুত্র গোলাম মোহাম্মাদ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমদিকের দোতলা তোরণটি নির্মাণ করেন। তথ্যঃ উইকিপিডিয়া


(২) কদম রসুল দরগার সাথেই একটা বাজার রয়েছে। গলি ধরে এগোলে শেষ মাথায় দেখা যায় সুউচ্চ দরগা গেইট।


(৩) দরগাহের সুউচ্চ প্রবেশ পথটা কিন্তু বেশ দৃষ্টিনন্দন।


(৪) লম্বা ধাপগুলো বেয়ে উপরে উঠার পর বাঁম পাশে মসজিদ এবং ডান পাশে দরগার কবরগুলো ও রসূল (সঃ) এর পায়ের ছাপ অংকিত সেই মহা মূল্যবান পাথর খানা রাখার ঘর।


(৫) প্রধান গেইটের ধাপগুলোর উপরে দাড়ানো বিল্ডিংটার পেছনের অংশ এটা।


(৬/৭) এখানে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির মাজার রয়েছে।


(৮) বিশাল একটা কাঠ গোলাপ গাছের নিচে আরো অনেকগুলো কবরের অবস্থান, জানিনা সেগুলো কার। সবই সবুজ কাপড়ে ঢাকা।


(৯) পুরো গাছ খুঁজে আমার ক্যামেরা এই একটা কাঠ গোলাপের সন্ধানই পেয়েছিলো।


(১০) সারা বছরই এখানে পূণ্যার্থীদের আনাগোনা কম বেশী থাকে।


(১১) এই ঘরটায়ই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর কদম মোবারক এর চিহ্ন সম্বলিত পাথরখানা একটি ধাতব পাত্রে গোলাপ জলে ডোবানো অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।


(১২) দর্শনার্থীর ভেতরে ঢোকার অনুমতি নাই, তবে কেউ দেখতে চাইলে খাদেম নিজেই পাথরখানা বের করে মানুষকে দেখিয়ে দেয়।


(১৩) এখানে পাথরটা গোসল করানো হয়।


(১৪) কাঠ গোলাপের গাছে কিসের সুতা ঝুলছে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এখানে সুতা বেধে মনের যে কোন আশা পূরণ করা সম্ভব।


(১৫) এমন সুযোগ হাত ছাড়া করার মতো বোকা আমি না 😀


(১৬) ভাবছেন এই সুতা পেলাম কোথায়? মাত্র ১০ টাকায় একান থেকে এই মনোকামনা সুতা সংগ্রহ করা যায় 😀


(১৭) মেইন গেইটের সিড়ির সব চেয়ে উপড়ের ধাপে দাঁড়িয়ে বাহির দিকের তোলা একটা ছবি।


(১৮/১৯) কদম রসুল দরগা থেকে বের হয়ে চলে আসার সময় হাতের বামে পড়বে হযরত সৈয়দ হাফেজ মোঃ হানিফ চিস্তি পাঞ্জাবী (রঃ) এর দরগা। দরগা বা নাজার গুলো এমনি, ওরা যৌথ ভাবে থাকতে পছন্দ করে। আয় রোজগারও কিন্তু ওদের বেশ ভালো।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ