মোহাম্মদ আবু খদির নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর । গাজার দক্ষিণে রাফাতে তাদের বাস । ফিলিস্তিনের আর সাধারণ দশটা কিশোরের মতই তার জীবন । বাবা-মার দুই সন্তানের বড়জন সে । বড় ছেলেসন্তান বলে সর্বদাই বাবা-মায়ের নক্ষত্রের মণি । ছেলেটা বাইরে গেলেই বাব-মায়ের চিন্তার অন্ত থাকে না । একে তো বয়স আর সাথে আতংক থাকে কারণ জায়গাটার নাম ফিলিস্তিন । ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর জন্য জীবন্ত ফায়ারিং রেঞ্জ । তার ছোটভাইয়ের বয়স ৬ বছরের একটু বেশি । গত রবিবার সন্ধ্যায় খদির বাইরে গিয়েছিল । কারণটা কিছুই না । তার ছোট্ট ভাইটির একটা চকলেটের আবদার মেটাতে । কিন্তু জানতো না তার সেই যাওয়াই সব শেষ করে দিবে । এর আগের সপ্তাহে গাজার পশ্চিম তীর থেকে অপহৃত হয় তিন ইসরায়েলী কিশোর । তারই প্রতিশোধ নিতে ঘাপটি মেরে ছিল ৫ নরপশু । সুযোগ পেয়ে খদিরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা । শুধু তাতেই ক্ষান্ত থাকেনি । বরং পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাকে ।

 

পরেরদিন সকালে যখন ঘটনা জানাজানি হলে তার পরিবারে শোকের মাতমের জায়গাতে বিরাজ করে নিস্তব্ধতা । আর কিছু ফিলিস্তিন বাসী ক্ষিপ্ত হয়ে রকেট-মর্টার হামলা চালায় ইসরায়েলের রাজধানী লক্ষ্য করে । মার্কিন অর্থায়নে তৈরি ইসরায়েলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবগুলো রকেটই ভূপাতিত করে দেয় । আর সামরিক বাহিনী পেয়ে যায় ফিলিস্তিনের উপরে হামলা করার একটা ছুতা । ব্যস একের পর এক বিমান হামলা শুরু হয় । শুরু হয় নৌ-পথ থেকে আক্রমণও । হতাহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে । কেউ থামানোর নেই ।

 

রমজান মাস । মুসলমানদের ফরজ রোজা । যত যাই হোক ধর্ম-প্রাণ খদিরের বাবা-মা সবগুলা রোজাই পালন করেছেন । আজকেও সন্ধ্যায় সময় হওয়ার সাথে সাথেই তারা ইফতার করা শুরু করে দিয়েছেন । তাদের ছোট ছেলেটা গতকয়েকদিনের ধকল এখনো কাটাতে পারেনি । সে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে রয়েছে । হটাতই আকাশে প্রচন্ড গর্জন শোনা যাচ্ছে । এই আওয়াজ টা ফিলিস্তিন বাসীর নিকট অতি পরিচিত । এ যে জঙ্গি বিমানের আওয়াজ । যখনই এসেছে তখনই একটা করে সর্বনাশ করে গেছে । তীব্র আশংকাতে খদিরের বাবা-মা দোয়া করছেন, " আল্লাহ তুমি বাঁচাও । " হটাতই বিস্ফোরণের বিকট একটা শব্দ । এরপরে সব অন্ধকার ।

 

চোখ মেললো খদিরের ছোট ভাই আরাফাত । ঠিক কি কারণে ঘুম ভাংলো বুঝতে পারছে না সে । চোখ খুলে অন্ধকার দেখে ভয়ে মা-মা ডাকা শুরু করলো । কোন সাড়া নেই । বাবাকে ডেকেও সে সাড়া পেলো না । চোখে অন্ধকার সয়ে আসতেই সে দেখলো বিভীষিকাময় এক দৃশ্য । যে দৃশ্য ..................

 

আরাফাত এখন এতিম শিশুদের আশ্রমে । মাঝে মাঝেই তার সেই বিভীষিকাময় দৃশ্যের কথা মনে পড়ে । গা শিউরে উঠে । পাশাপাশি প্রতিশোধের নেশায় তার চোখ জ্বলে । প্রতিজ্ঞা করে, " আজ হোক কাল হোক সে তার পরিবারের হত্যার বদলা নিবেই নিবে । " এইরকম প্রতিজ্ঞা আরো অনেক আরাফাতের । যেইদিন বোধহয় এই প্রতিজ্ঞাগুলা এক হবে সেই দিনই বোধহয় ফিলিস্তিন বাসীর এই বিভীষিকাময় দিন শেষ হবে ।

 

গোটা ফিলিস্তিন এখন সেই দিনের অপেক্ষায় ।

 

[ বিদ্রঃ সম্পুর্ণ কাল্পনিক লেখা ]

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ