একাকী মৃত্যু

রিমি রুম্মান ২৭ এপ্রিল ২০১৪, রবিবার, ১২:৫১:১৮অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৮ মন্তব্য

লাঞ্চব্রেকে পাশের ফাস্টফুডের দোকানটিতে যখন খেতে যেতাম, তখন পরিচয় সত্তর ছুঁইছুঁই বয়সের মিস্টার এরন এর সাথে। কোন ভূমিকা ছাড়াই গল্প শুরু করতো। গল্পের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই থাকতো তার একমাত্র পুত্র আর মৃত স্ত্রী। ওই সময়টাতে যেন তাকে শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা আর বিষণ্ণতায় পেয়ে বসতো। বেদনাবিধুর একটা পরিবেশে আমি তার গল্প শুনতাম আর সেই সময় চেহারায় তার শোক আর ভালবাসার বহিপ্রকাশ ঘটতো।

পাশেই একটি এপার্টমেন্টে মিস্টার এরন একাই থাকতেন একমাত্র ছেলে থাকে অন্য শহরে। পিতা-পুত্রের ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে। দেখা হয়না বললেই চলে। ফাদার'স ডে তে ছেলে উপহার পাঠায়, এতেই এরন ভীষণ খুশি। আমি আমার বাবাকে বিশেষ দিনটিতে উপহার পাঠাইনা শুনে সে খুব আহত স্বরে বলতো, " তুমি তোমার বাবাকে ভালই বাসোনা "। আমিও বলতাম, " বিশেষ একটি দিনের জন্য আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি না... আমি ভালোবাসি প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে ।"

এরপর সূর্য উঠে, বাইরে আলো ফোটে, আবার আঁধার ঘনায়। আমি একাকি চুপচাপ লাঞ্চ করি... এরনের দেখা নেই ! এপ্রিলের এক দুপুর... কফি হাতে বাইরে দাঁড়িয়ে। এপার্টমেন্টের চারিপাশে এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়ী। অন্য অনেকের মতোই উৎসুক আমি ঘটনা জানবার চেষ্টা করছি। অবশেষে জানলাম, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দিয়েছে। একাকি এপার্টমেন্টটিতে পাঁচদিন আগেই এরনের মৃত্যু হয়েছিল।

কাজ শেষে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেই। ট্রেন ক্রমশ দূরে সরে যেতে যেতে ম্রিয়মান হতে থাকে কোলাহল। দৃশ্যমান অনেক মানুষের মাঝে অদৃশ্য এরনের মুখখানা ভেসে উঠে। আহা ! মৃত্যু কি এসেছিলো তার ঘুমন্ত শরীরের উপর দিয়ে ? শেষ সময়টাতে ছিল না কোন মমতার হাত কপালে... প্রিয়জনের ভালবাসাময় মায়াবী চাহনি... কিংবা দেয়নি কেউ মুখে দু'ফোটা তৃষ্ণার জল...!
তবে দু'ফোটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়েছিল "ভিনদেশী আমার"___বর্ষণমুখর সেই সন্ধ্যায় !! বিলিভ ইট অর নট___ সেই সন্ধ্যাটুকু অন্য দিনের সন্ধ্যা'র চেয়েও বেশী অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়েছিলো আমার ।

## সবকিছুর পরও আমার দেশ, আমার কালচারই ভাল। অনেক অভাব অনটনের পরও অন্তত সেখানে আছে বুকভরা ভালোবাসা,একজন বৃদ্ধের জন্য। এরন'দের মত একাকী, নিঃসঙ্গ মৃত্যু তো আর হয় না !

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ