প্রেম ও অপ্রেমের অণুগল্প

অপার্থিব ২৭ অক্টোবর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৩:৩০অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

১) কেয়ার সাথে আমার পরিচয়টা কাকতালীয় ছিল বলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেখানেই প্রথম ওকে দেখি আমি। সেই অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিল কেয়া। সামনা সামনি কোন অনুষ্ঠানে এত দরদ ভরে গাইতে আমি কাউকে দেখিনি। মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম সেদিন ওর গান। সৌভাগ্য ক্রমে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ওর আগে থেকেই পরিচয় ছিল। সেই বন্ধুর মাধ্যমে প্রথম কেয়ার সাথে কথা হয় এবং তার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। টাকাওয়ালা বাবার সন্তান আমি, দেখতে শুনতেও মন্দ নই। শৈশবে বাবা মা হারানো চাচার পরিবারে আশ্রিত কেয়ার তাই আমার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ার কোন কারণ ছিল না। বেশ ধুমধাম করেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। প্রথম প্রথম দিনকালও বেশ ভালই চলে যাচ্ছিল। সমস্যাটা তৈরী হয়েছিল বিয়ের ঠিক মাস খানেক পর। নুতুন একটা ব্যবসা উপলক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে বাসায় একটা পার্টি দিয়েছিলাম। আমার বন্ধু বান্ধবেরা সবাই এসেছিল। কেয়া সকাল থেকেই রান্না বান্না নিয়েই খুবই ব্যস্ত ছিল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই এক সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডার মধ্যেই প্রস্তাবটা তুলেছিল আমার বন্ধু সাইফ।
-দোস্ত, ভাবীর তো দারুণ গলা একটা গান গাইতে ক না?
আমি এই কথার কোন উত্তর দেইনি কিন্ত মুহূর্তেই সেই কথায় তাল দিয়েছিল আমার অন্য বন্ধুরা। তারা ঘিরে ধরেছিল কেয়াকে। সাইফ বলেছিল-ভাবী শুধু জামাইরে গান শুনাইবেন, আমাদের শুনাইবেন না, এটা ঠিক না। খাওয়া দাওয়ার পর একটা গান না হইলে আমার আবার ভাত হজম হয় না। ভাবী একটা গান শোনান না?

ওদের অনুরোধ আর উপযোগের জবাব হাসি দিয়েই দিচ্ছিল কেয়া, এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে চোখের ভাষায় আমার কাছে অনুমতি চাইছিল। আমি সেদিন অনুমতি দিয়েছিলাম। কেয়া গেয়েছিল শ্রেয়া ঘোষালের -চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন আর কবিতায় শুয়ে কাপলেট গানটি। যথারীতি কয়েক মিনিটের জন্য মন্ত্র মুগ্ধ ছিলাম আমার সবাই। কেয়া চলে যাওয়ার পর কথাটা বলেছিল সাইফ- দোস্ত তোর তো রাজকীয় কপাল, এমন বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, যেমন সুন্দরী তেমনি গানের গলা। আমরা দেখ না কোথাকার কোন বালছালরে নিয়া সংসার করতাছি।
সাইফের কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পরেছিল আমার অন্য বন্ধুরা। তীব্র ঘৃণা আর ঈর্ষার সম্মোহিত অবস্থায় আমি সেদিন ওদের হাসি দেখেছিলাম। হাসিতে আড়াল করার চেষ্টা করলেও সাইফের চোখে মুখে কেয়ার জন্য লেগে থাকা কামনার আগুন সেদিন আমার কাছে মোটেও আড়াল হয়নি। বাসায় ফিরে কেয়াকে বলেছিলাম- তুমি আর কখনো স্বাভাবিক পোশাকে পর পুরুষের সামনে আসবে না, এখন থেকে হিজাব পরে চলাফেরা করবে।
আমার কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিল কেয়া, তারপর মৃদু স্বরে বলেছিল-আমি কোনদিন বোরখা হিজাব পরিনি, হঠাৎ করে কি এমন ঘটলো যে আমাকে হিজাব করতে হবে?
-এতকাল করোনি, এখন থেকে করবে। মেয়েদের জন্য পর্দায় থাকাই কোরানের নির্দেশ। আর আজ থেকে গান গাওয়াও সম্পূর্ণ রুপে ছেড়ে দেবে। গান বাজনা শরীয়তে হারাম।
এই পর্যায়ে আমার কপালে হাত দেয় কেয়া, বলে- কি হয়েছে তোমার? তোমার কি শরীর খারাপ ?
আমি মুহূর্তেই ওর হাত নামিয়ে নেই, বলি -যা বলছি শোনো এখন থেকে তুমি আর গান গাইতে পারবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরবে, হিজাব করবে, আল্লাহর রাস্তায় চলাফেরা করবে।
-আচ্ছা তুমি কি আল্লাহর রাস্তায় চলাফেরা কর, আমি যতদূর জানি তুমি তো শুক্র বারের নামাযও ঠিক মত পর না?
-আমি যা করি, করি তোমাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে না কিন্ত তুমি এখন থেকে আল্লাহর রাস্তায় চলাফেরা করবে।

একদৃষ্টিতে খানিক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল কেয়া। এরপর থেকে আমার কথামত সে বোরখা পরতে শুরু করে, লোকজনের সামনে গান গাওয়াও ছেড়ে দেয় তবুও ঘরের মধ্যে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুণগুণ করে গাইতো সে। আমি শুনতাম ওর গান তবে সেই গান আর কখনো আমার মধ্যে মুগ্ধতার অনুভূতি জন্ম দিত না। আমি সম্পূর্ণ রুপে ভুলে গেলাম যে একদা কোন এক সময় ওর গান শুনেই আমি প্রথম ওর প্রতি আগ্রহী হয়েছিলাম। ওর গান শুনলেই আমার চোখের সামনে শুধু সাইফের কামনা মেশানো দৃষ্টিটাই ভাসতো। যাই হোক, এভাবে আমাদের যাপিত জীবন মোটামুটি বেশ ভালই চলে যাচ্ছিল। আজ রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পর আমার কাছাকাছি এসেছিল কেয়া, আহ্লাদী গলায় বলেছিল -আজ তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো, দিবে তো ?
খানিকটা অবাক হয়ে বলেছিলাম- কি জিনিস?
-একটা অনুমতি চাইবো ?
-বল কিসের অনুমতি?
-তুমি তো আমার বান্ধবী তুলিকে চিন, তাই না?
-হ্যা।
-ওনা একটা কাজ করেছে। টিভিতে গানের একটা রিয়েলেটি কন্টেষ্ট শুরু হচ্ছে, তার প্রাথমিক বাছাই আগামী কাল আমাদের শহরে। ও না সেখানে আমার নাম দিয়ে দিয়েছে।
-কী ?
-হ্যা, আমি দিতে বলেনি, ও নিজেই দিয়েছে। কালকে অডিশন। আমি তো নিশ্চিত অডিশনেই বাদ পড়বো। তবূও ও বারবার করে যেতে বলছে। এখন তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে যাব নাহলে না। জাষ্ট একবারের জন্য।
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলি -আচ্ছা ঠিক আছে যেও।
থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ বলে প্রবল খুশিতে প্রায় চিৎকার করে উঠে কেয়া। ওকে সর্বশেষ কবে এত উচ্ছল দেখেছি মনে করতে পারিনা আমি। প্রবল উচ্ছাসে সে আগামী কালের অডিশনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। কি পরবে, কোন গান গাইবে তা নিয়ে ওর মাতামাতি যেন শেষ হয় না। ওর উচ্ছ্বাস দেখতে আমার ভালই লাগে। একপর্যায়ে সব প্রস্তুতি শেষ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কেয়া। ওর পাশে বসে আমি শুধু একাই জেগে থাকি। একাকী নির্ঘুম এই রাতগুলোতে আমার একমাত্র সঙ্গী শুধু সিগারেট। বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট টানতে থাকি আমি, কতগুলো হিসেব নেই। আগামী কাল কেয়ার অডিশন। আমি জানি যে সে ঐ অডিশনে বাদ পড়বে না। সে চলে যাবে অনেক উপরে , কে জানে হয়তো চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটাও জিতে যেতে পারে। ওর যে গান আমি কাউকে শোনাতে চাই না সেই গান শুনবে সমগ্র দেশের মানূষ। একটা ভয়ংকর ভাবনা খেয়াল করে আমার মাথায়। সময় যতয় এগোয় ঘনীভুত হতে থাকে সেই ভয়ংকর ভাবনা। ধীর পায়ে আমি এগিয়ে যাই ঘুমন্ত কেয়ার দিকে। আমার হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরা..

২)
একবার এক তরুণীকে বলেছিলাম- এই মেয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
তরুণী খানিক ক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, তারপর দৃঢভঙ্গীতে বলেছিল-না।
চলে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে তরুণীকে পিছন থেকে ডেকেছিলাম, বলেছিলাম-কেন না জানতে পারি?
তরুণী ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়েছিল, মিষ্টি করে হেসে বলেছিল- আপনি কি বলিউডের পিঙ্ক সিনেমাটা দেখেছেন। হোয়েন এ গার্ল সেইস নো দ্যাট মিন্স ইটস নো।
-সিনেমাটা দেখেছি, ভাল লেগেছে। আই হ্যাভ আটমোষ্ট রিস্পেক্ট টু ইউর ডিসিশন, বাট কেন এই সিদ্ধান্ত তার ব্যাখ্যা চাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে। তুমি সেটা দিতেও পার আবার নাও দিতে পার।
চলে যেতে চেয়েও কি যেন মনে করে আবার ফিরে আসে তরুণী, তারপর বলে-স্কুল লাইফের কথা মনে আছে আপনার?
-কেন থাকবে না ? জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সময়গুলোর কিছু কাটিয়েছি সে সময়।
-আপনার মনে আছে আপনারা বন্ধুরা মাঝে মধ্যেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমাদের বাসার সামনের মাঠটাতে ক্রিকেট খেলতেন। কখনো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো সেই খেলা। মাঝে মধ্যে বিশাল কোন ছক্কায় বল আমাদের বাসায় চলে এলে আপনি সেই বল নিতে আমাদের বাসায় আসতেন।
-হ্যা, মনে আছে।
-আপনি কি জানেন আপনাদের সেই খেলা দেখার জন্য প্রতিদিন বিকেলে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো সে সময়ের ক্লাশ সিক্সে পড়া একটা মেয়ে। প্রেম কি সেটা তখনো ঠিক মত বোঝার মত বয়স হয়নি মেয়েটির , শুধু ভাল লাগাবোধের এক অদ্ভুত অঙ্কুরোদগম ঘটেছিল এই যা। কিভাবে কিভাবে যে সেই ভাল লাগা বোধের বীজ মহীরুহের শিকড় হয়ে হৃদয়ে গভীরে গেঁথে গিয়েছিল টেরই পায়নি মেয়েটি। তারপর এসএসসি পর ইন্টারমিডিয়েটে আপনি শহরের এক নামকরা কলেজে ভর্তি হলেন, তারপর ভার্সিটি। বাসায় আসতেন খুব কম। মেয়েটিও ততদিনে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে তবুও সে আপনার প্রতীক্ষায় থাকতো, ভাবতো কোন এক সময় আপনি হয়তো নিজেই ভালবাসার পংক্তিমালা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু.. কিন্তু আপনি সেটা কখনোই করেননি, উল্টো দেখা হলে এড়িয়ে চলতেন। মেয়েটি দেখতে খুব একটা সুন্দর ছিল না। কে জানে একারনেই হয়তো সৌন্দর্যের পুজারী আপনি কখনো তার দিকে ভাল করে তাকাননি।

এ পর্যন্ত বলে কয়েক সেকেন্ড বিরতি নেয় তরুণী তারপর আবারো বলতে শুরু করে- সবাই প্রত্যাখানকে সহজ ভাবে গ্রহন করতে পারেনা, মেয়েটিও পারে নি। আপনার এই নীরব প্রত্যাখান মেয়েটিকে আরো আপনার প্রতি কেন্দ্রীভুত করেছিল। ভাল বাসার এক অদ্ভুত চক্রে আবদ্ধ হয়েছিল সে। সেই চক্রের কেন্দ্রে থাকা আপনাকে ঘিরে তার সকল ভাবনা চিন্তা আবদ্ধ হত। যতই দিন যাচ্ছিল ততই যেন সে জড়িয়ে পড়ছিল আরো আষ্টেপিষ্টে। একবার লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে আপনাকে ফোন করে বলেছিল তার ভালবাসার কথা। কিন্তু আপনি সেই কথা অল্প বয়সের পাগলামি বলে অট্টহাসিতে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনই প্রথম সেই চক্রের বন্ধন আলগা হয়ে যায় মেয়েটির কাছে। তারপর ... জীবন থেমে থাকে না, মেয়েটিরও থাকেনি। মেয়েটি এখন অন্যদের চেয়ে নিজেকে অনেক ভালবাসে, ভালবাসে তার পরিবারকে, ভালবাসে ক্যারিয়ার, ভালবাসে তার নিজের মধ্যে থাকা এক ঝাঁক কাঁচা স্বপ্নগুলোকে। যে অদ্ভুত চক্র থেকে সে অনেক কষ্টে বের হয়েছে সেই চক্রের মধ্যে আর সে নিজেকে আবদ্ধ দেখতে চায় না। বলেন এই না চাওয়াটুকু কি খুব অন্যায় ?

তরুণীর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনি আমি, খানিকটা ধাতস্থ হয়ে বলি - কাউকে প্রবলভাবে ভালবাসতে পারাটাও এক ধরনের আশ্চর্য ক্ষমতা। আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানো সবার মধ্যে এই ক্ষমতাটা থাকে না। আচ্ছা চক্র কি শুধু ভালবাসারই হয়? প্রেম হীনতাও কি কোন চক্রের মধ্যে আবদ্ধ হতে পারে না? আর আজ যদি আমি সেই চক্র ভেঙ্গে বের হয়ে যেতে চাই তবে সেই সুযোগটুকু কি আমি পেতে পারি না ?
-হয়তো পারেন, হয়তো পারেন না কিন্ত আপনাকে প্রেমহীনতার চক্র থেকে বের করতে গেলে আমাকেও আবার নুতুন করে সেই পুরনো চক্রের মধ্যে আবদ্ধ হতে হবে।
-হয়তো হবে তবে সেই চক্র পুরণের পাথুরে রাস্তায় এবার আর তুমি একা হাঁটবে না, তোমার পাশে আমিও থাকবো। সেই পথ হয়তো কাঁটায় ঘেরা হবে, হোক না কিইবা এসে যায় তাতে? পৃথিবীর প্রতিটা পাথুরে পথ আমি তোমায় নিয়ে পাড়ি দিতে চাই, তোমায় নিয়ে হাঁটতে চাই শেষ বিকেলের আলোয়, জ্যোছনাময় নিশীথে, শ্রাবণের বৃষ্টিতে। তোমায় নিয়ে পূর্ণ করতে চাই আমি আমার জীবনের প্রতিটা চক্র, তোমায় নিয়ে...

নিস্তব্ধতার প্রহরগুলো অতিবাহিত হয়, তরুণী আর আমার মধ্যে আর কোন বাক্যের বিনিময় ঘটে না। আমাদের মধ্যে বিরাজ করে মহাজগতের নৈঃশব্দিক দুরত্ব। মাঝে মধ্যে আমাদের নিঃশ্বাসের শব্দমালা সেই ক্ষণিকের নৈঃশব্দ্যতার স্নিগ্ধ সমুদ্রে মৃদু ঢেউ তোলে। আমরা সেই ঢেউয়ের প্রবাল তীরে আছড়ে পড়ার তীব্র শব্দ শুনি,আমাদের ভাল লাগে। নৈঃশব্দ্যতাকে আর কখনো এত মধুর বলে মনে হয়নি আমাদের কাছে..

0 Shares

২০টি মন্তব্য

  • নীরা সাদীয়া

    নারীদের জন্য যেমন কোরআনে পর্দা করার নির্দেশ আছে, তেমনি পুরুষের জন্যেও চোখের দৃষ্টি সংযত রাখা,রিপু দমন করার নির্দেশ আছে। পুরুষরা এখানেই ভুল করে,তারা নিজেরা কিছুই মানতে চায়না, অথচ নারীদের ওপর সকল নির্দেশ হুকুম আকারে চাপিয়ে দেয়। এ বৈষম্য আর কতকাল চলবে কে জানে? মেয়েটির দিকে যে লোক কামনার দৃষ্টিতে তাকাল অন্যায় তারো হয়েছে। এক্ষত্রে কর্তাব্যাক্তির উচিত সেরকম বন্ধুকে পরিত্যাগ করা। পাশাপাশি বউকে একা কোরআন মানতে বাধ্য না করে উভয়েরই কোরআন মেনে চলা উচিত। আর কোন মেয়েকে রূপ দিয়ে বিচার না করে তার অর্জিত গুন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচার করা উচিত। রূপ সংসারে কোন কাজে লাগে না। যা কাজে লাগে তা হল গুন ও ভাল মন মানষিকতা।

    • অপার্থিব

      প্রথমেই যেটা বলা দরকার তা হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের কারো দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকানো কোন অপরাধ না। পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন অসংখ্য প্রেমের গল্প তৈরী হচ্ছে, এই গল্পের নায়ক নায়িকারা পরষ্পরের দিকে কামনার দৃষ্টিতেই তাকিয়েছে, ভবিষ্যতেও তাকাবে। এই কামনা কোন অস্বাভাবিক জিনিস না বরং এটাই প্রাকৃতিক,মানব প্রজাতির টিকে থাকার উৎস । অপরাধ তৈরী হবে তখনই যখন এই কামনা পুরনের জন্য কারো উপর শারিরীক কিংবা মানসিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হবে। যারা এই চাপটা প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধটা জরুরী। নারীদের দেখার সময় দৃষ্টি সংযত রাখার থিওরি অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক ধারণা। আর পুরুষের পর্দা চোখে আর নারীর পর্দা শরীরে বাড়তি কাপড়ে এটাও চরম বৈষম্যমুলক ধারণা। রাস্তায় বের হলে মেয়েরা যদি ছেলেদের চেহারা দেখতে পারে তবে ছেলেদেরও ঐ মেয়েদের চেহারা দেখার অধিকার আছে, তার দিকে তাকানোতে সে নিশ্চয় প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে না। যাই হোক, মন্তব্যের শেষ দুই লাইনের সঙ্গে একমত। ধন্যবাদ।

      • নীরা সাদীয়া

        আপনি গল্পে কোরআন কে টেনে আনলেন। তাই আমিও কোরআনের কথা বললাম। ছেলেটি মেয়েটিকে কোরআন মতে পর্দা করতে বলছে। তাহলে ছেলেটিরো উচিত কোরআন মতে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখা। এবং অন্যান্য নিয়ম মেনে চলা। কিন্তু ছেলেটি তা মানতে চাইছে না। এটাই বর্তমান পুরুষ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। তারা চাইবে তাদের স্ত্রী সকল কিছু মেনে চলুক। কিন্তু নিজেরা কিছুই মানবে না। তাহলে বৈষম্য তো তারাই তৈরি করছে। আবার আপনি বললেন, কামনার দৃষ্টিতে তাকালে তো মেয়েটি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে না। তাহলে মেয়েটির স্বামীর এত সমস্যা কিসে যখন তার বন্ধু তার বউয়ের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকায়? তাতে দো তার বৌ প্রেগনেন্ট হয়ে যাবে না তাইনা? শুনুন ছেলেদের দৃষ্টি সংযত রাখার কথা কোরআনেই আছে। সুতরাং আল্লাহ নিশ্চই বিজ্ঞান আমাদের থেকে বেশি ভাল জানেন। সুতরাং ছেলেরা যদি মেয়েদের কোরআন মানাতেই চায়,তাহলে আগে তাদের নিজেদের মানতে হবে।

    • অপার্থিব

      সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সন্তানকে সঠিক ভাবে লালন পালন করে সমাজে বিয়ে প্রথা অর্থাৎ একজন নারী বা পুরুষকে পরষ্পরের জন্য নির্দিষ্ট রাখার গুরুত্ব আছে। আমরা যেহেতু সমাজে বসবাস করি তাই আমাদের কিছু সামাজিক বিধিবিধান বা নৈতিকতা মেনে চলতে হয়। কোন সামাজিক বিধি বিধানই চিরস্থায়ী নয়, প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজের ধারা। অন্যের বউয়ের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকানোকে আমাদের বর্তমান সমাজের প্রচলিত নৈতিকতার মানদণ্ডে অনৈতিক বলে গণ্য করা হয় কিন্ত এটা কোন অপরাধ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা অহিংস অবস্থায় থাকে । তাই বন্ধু বা অন্য কারো কামনার দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে স্ত্রীকে বোরখা পরতে বাধ্য করার কনসেপ্ট সম্পূর্ণ রুপে ভুল। একজন নারী কি পোশাক পরবে বা না পরবে সেটা বেছে নেওয়ার অধিকার একমাত্র শুধু তারই আছে, স্বামী বা অন্য কারো এখানে নাক গলানোর কোন সুযোগ নেই। আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ এর উল্টোটাই করে যেমনটা করেছে এই গল্পের চরিত্রটি। আমি একচুয়ালি গল্পে এই সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ সমাজের মানসিকতা তুলে ধরারই চেষ্টা করেছি এবং সেটা কোন ইতিবাচক ভাবে নয়। ধর্মের বিধি বিধানকে আমি পুরুষতন্ত্রের সৃষ্ট বলে মনে করি তাই দৃষ্টি শক্তি সংযত রাখার কনসেপ্টকে আমার কাছে অবাস্তব বলে মনে হয়। আসলে ধার্মিক অধার্মিক কেউই সেটা আজীবন মেইন্টেইন করতে পারে না ইনফ্যাক্ট মানব সমাজ যতদিন থাকবে বা নারী পুরুষের মধ্যকার জৈবিক আকর্ষণ যতদিন টিকে থাকবে ততদিন সেটা সম্ভবও নয়।

  • ইঞ্জা

    এই হচ্ছে আমাদের সমাজে, নারীরা এখন অন্দরমহলের সাজসজ্জা হয়ে উঠেছে আর পুরুষরা হয়ে উঠছে নারী খেকো, নারী স্বাধীনতা এদের কাছে হয়ে উঠেছে বিভিষিকা।
    দারুণ লিখেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে।

  • ফারহানা নুসরাত

    গল্প দুটি পড়লাম। ভালই লেগেছে। যেকোন বিষয়ের ভাল মন্দ দুটো দিকই আছে। কিন্তু আমরা মন্দটাকেই প্রাধান্য দেই। যে কাজ সহজেই হয় তাকে ইচ্ছে করে জটিল করে তুলি। মানুষ যেন সোজা পথে হাটতে ভুলে যাচ্ছে।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    মেয়েদের নিয়ে একটা প্রবাদ তৈরী করেছিলো সমাজ, “ঘোমটা দিয়ে খেমটা নাচে।” কিন্তু সেই খেমটা দেখে পুরুষই।
    আবার ওই একই পুরুষ নিজের ঘরে এসে অন্যরূপ।
    কেয়ার গল্পটা আমাদের এই সমাজে খুবই কমন। দ্বিতীয় গল্পটিও কম নয়।

    আপনার গল্প ভালো লাগে, আগে বলেছি কি?

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        খেমটা নাচ হলো খেমটা তালের সাথে নাচ। তবে এ নাচ সাধারণত মাহফিলে নাচা হয়। তো নবাবী মাহফিলে ঘোমটাও থাকে মাথায় আবার নাচও। অবশ্য বাগানে শুনতাম বিভিন্ন জুয়াড়ি আসরে কিছু অশ্লীল নাচ হয়ে থাকে, যাদেরকে খেমটা নাচ বলে।
        অথচ জানেন খেমটা নাচ-গানের প্রধান বিষয় হলো রাধা-কৃষ্ণের প্রেম।

        আমি চেষ্টা করবো সামনে কোনো একসময় খেমটা নাচ সম্পর্কে লেখার। ঠিক আছে?

  • মিষ্টি জিন

    দুটে গল্পই ভাল লেগেছে ।
    দুটো গল্পেই আমাদের সমাজের রূপ ফুটে উঠেছে।
    বেশী আর নাই বলি।
    আপনার লেখনি অনেক ভাল বড়ভাইয়া।

  • লীলাবতী

    এই সমাজে নারীদেরকেই সব নিয়মের বেড়াজালে আঁটকে রেখে দিতে হয়। নারী তার আপন মহিমা প্রকাশ করলেই আর রক্ষা নেই। পুরুষ তাকে দমন করবেই করবে। নারী স্বাধীনতা পায় ততটুকু, পুরুষ যতটা দেয়।

    • অপার্থিব

      // নারী স্বাধীনতা পায় ততটুকু, পুরুষ যতটা দেয়।//
      কথাটা ঠিক, সমাজের হাই ক্লাস শ্রেণীর নারীরা একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে কিন্ত এই স্বাধীনতা তাদের নিজের অর্জিত না। এটাও সমাজের হাই ক্লাস পুরুষদের কাছ থেকেই প্রাপ্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত নারী তার নিজের স্বাধীনতা নিজে অর্জন করতে না পারবে ততক্ষণ তাকে দমনের স্বীকার হতে হবে। এটাই হল বাস্তবতা। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ