“একটি পাগলের ভালবাসা”

ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির ২২ মার্চ ২০১৫, রবিবার, ০৯:৫০:৪৮পূর্বাহ্ন গল্প ৪ মন্তব্য

"একটি পাগলের ভালবাসা"

নিউমাকের্টে এসেছে আজ স্পর্শ । উদ্দেশ্য কিছু একটা কিনবে বলে । কিন্তু স্পশের্র সেদিকে খেয়াল নেই । চোখদুটো এদিক ওদিক শত মানুষের ভিড়ে কি যেন খুজতেছে ।
.
খুব মজা করছে অভ্র । অনেকগুলো বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতেছে । মজা হবেই না কেন । বন্ধুদের সাথে কথা বলে আর লিফট থেকে নামছে অভ্র । হঠাৎ অভ্রের চোখদুটো থমকে গেল কিছু একটা দেখে ।
.
আবিদ , অন্তু , সুমন ,রানা দেখ দেখ ঐ মেয়েটাকে । মূহুর্তেই সবার চোখ আটকে গেল মেয়েটির মাঝে । সবাই কিছুটা তরিঘরি করে নামলো লিফট থেকে । অভ্র এক দৌড়ে চলে গেল মেয়েটির পাশ্বে । অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই মেয়েটির সাথে কথা বলবে এ সাহসটুকু পাচ্ছে না আজ অভ্র । কত মেয়েকে চোখের ইশারাই কাত করে ফেলল অথচ আজ , ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে । এবার কিছুটা সাহস নিয়ে অভ্র মেয়েটিকে ডাক দিলো ।

অভ্রঃ এই যে আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি ? ?

স্পর্শঃ না । কে আপনি ? ?

অভ্রঃ আপনি স্পর্শ না ?? আমি আবিরের ফেন্ড অভ্র ।
.
কথাটা বলতেই নির্বাক দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে স্পর্শ । তারপর হঠাৎ বলে উঠলো হুম আমিই স্পর্শ । কিন্তু আপনার ফেন্ডকে তো দেখতে পাচ্ছি না কোথাই সে । নিশ্চয় অনেক ভাল আছে ।
.
বিস্ময়ে চোখগুলো বড় করে স্পর্শ দিকে লক্ষ্য করতেই চোখের কোনায় পানি দেখতে পেল অভ্র । কিন্তু কখন যে নিজের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে , তা খেয়াল ই করে নি অভ্র । 'কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেন ? ' স্পর্শের কথায় আবার ও চমকে উঠলো অভ্র । হুম অনেক ভালো আছে আবির । ছেলেটা আগের চেয়ে সত্যি এখন অনেক ভাল আছে ।
.
'স্পর্শ ভারি কন্ঠে বলল কোথাই সে এখন ?' কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না অভ্র । উপরের দিকে চেয়ে আনমনে মৃদু বলল না ফেরার দেশে ।
.
কথাটা শোনার পর স্পর্শ কেমন যেন হয়ে গেল । স্পর্শের বার বার মনে পড়ছে আবিরের কথা । আবির বলেছিল একদিন তুমি অনেক খুজবে কিন্তু আমাকে আর পাবে না ।
.
.
আবির নামটা অনেক ছোট শোনা গেলেও । ফেজবুকে নামটা কিছুটা পরিচিত । কেউ জানে না ছেলেটা কে । কিন্তু একসময় পাঠকের হৃদয় ছুয়েছিল তার লিখা গল্পগুলো । স্পর্শ ও আবির এর মতো লেখালেখি করতো । তাই স্বাভাবিক ভাবেই দুজনের পরিচয় হয় । একটা সময় ছিল আবির এর লেখার প্রচুর চাহিদা ছিল । অসংখ্যা লাইক কমেন্ট পেত । কিন্তু একটা ডাক্তারের রিপোট আবিরের জীবনটা ছিন্নভিন্ন করে দেয় । আবিরও ডুব দেয় ফেজবুকের সবুজ বাতিটার ভূবন থেকে । হয়ে যায় অপরিচিতদের একজন ।
.
স্পর্শ লেখালেখি ছাড়েনি । আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে । আর আকড়ে ধরার কারনে উজ্জল তারকা হয়ে যায় ।
.
হঠাৎ করে আবির স্পর্শকে চ্যাট এ নক করে । কারন আবির আজকাল আর লেখে না । শুধু পাঠকের মত পড়ে যায় । স্পর্শের একটি গল্প খুব ভাল লাগে । সেদিন থেকেই শুরু হয় চ্যাট আর মেসেজিং । একটা সময় আবির অনুভব হলো এ ভালো লাগা নয় ,ভালবাসা । মনের কথাটা স্পর্শকে বলতেই প্রত্যাখান করে । আবির তাকে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারে না ।
.
অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আবির । কিন্তু আবির এর ভালবাসাটা যেন বাড়তেই থাকে ।
.
কি করে ভালবাসবে স্পর্শ কারন এর আগেও একটি ছেলে তাকে স্বপ্ন দেখিয়ে পালিয়েছিল । দ্বিতীয়বার সে স্বপ্ন দেখতে চায়না স্পর্শ ।

তারপরও আবির সবকিছুই মেনে নিয়ে , স্পর্শকে আবার ও বোঝায় পৃথিবীর সব মানুষ গুলোই এক না । যদি তাই হতো পৃথিবীর কোন অস্তিত্ব থাকতো না ।
কিন্তু আবিরের কোন কথাই না শুনে স্পর্শ পাশানের মত ফোন বন্ধ করেআর ফেসবুকের আইটা থেকে রিপ্লে দেওয়া বন্ধ করে । আবির সে দিন অনেক কষ্ট পেয়েছিল । আর কয়েক রাত জেগে । শুধু ছোট্ট করে একটি কবিতা মেসেজ দেয় স্পর্শকে ।

``কতটা ভালবেসে ফেলেছি তোকে কয়েক মুহূর্তে ,
যদি তুই বুঝতি তাহলে
আমাকে খুজতি তোর নোনা জলে ।

রংহীন রাতটা কেটেছে কিভাবে আমার শুধু তোর ই বিহনে ,
শত খুজলেও পাবিনা আমাকে আর এই ভূবনে``
______

আজও আবিরের কথা গুলো মনে পড়ছে স্পর্শের । সত্যি সেদিনের পর কোথাও খুজে পাইনি আবির কে । ছেলেকে হারিয়ে গিয়েছে দূর অজানায় । অভ্রের ডাকে পুরোনো স্মৃতির মায়াজাল থেকে বেড়িয়ে এল স্পর্শ । আবির এর কিছু জিনিস আর একটা ডায়রি আছে আমার কাছে । ইচ্ছে করলে নিতে পারেন ।

স্পর্শ কোন কথা বলে মাথা দিয়ে সম্মতি জানালো অভ্রকে । বাসায় গিয়ে আবিরের ডাইরিটা পড়তে লাগলো স্পর্শ ।

জান স্পর্শ তোমাকে না পেয়ে আমি সম্পূর্ন একা হয়ে গিয়েছিলাম । ফেজবুক ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম । আমি জানি ফেজবুকে থাকলে হয়তো আমি তোমার প্রতি আরও দূবর্ল হয়ে যেতাম । ঢাকায় গিয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলাম । ডাক্তার বলেছিল আমি এই চার দেওয়ালের মাঝে থাকলে ভাল হয়ে যাব । কিন্তু আমি জানি তোমাকে না পেলে , আমার বেচে থাকার উদ্দেশ্য টাই অর্থহীন হয়ে যাবে । তাই হসপিটাল থেকে পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছিলাম ।

জান স্পর্শ প্রথমে কিছু যন্ত্রনা অনুভব হয়ে ছিল । ধীরে ধীরে সব এক হয়ে যায় । কিন্তু সেখানে কিছুদিন থাকার পর বুঝতে পারলাম আমার জীবনের মুহূর্তগুলো শেষের পথে । তাই দেশে এসে গ্রামের বাড়ি মায়ের কাছে চলে আসি । আমি খুব ভাল আছি । এখন শেষ কটা দিন রয়েছে শুধু তোমাকে না পাওয়ার অপূর্ন্যতা ।

জান স্পর্শ আজ সকাল থেকে প্রচন্ড মাথাটা ব্যথা করছে । শরীরে শক্তিগুলো শেষের পথে । কলম ধরার শক্তিটুকু নেই । এখন শুধু একটা কথাই বলবো । আমার মতো তোমাকে আর কেউ এত ভালবাসবে না । তুমি বলতে আমার সব টুকুই পাগলামী । কারন তোমাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি . . . . .

দুচোখ দিয়ে টপ টপ পানি করে পানি পড়ছে ।খুব দ্রুত ডাইরির শেষ পাতাগুলো উল্টাচ্ছে স্পর্শ । কিন্তু সব পাতাগুলোই সাদা । এখন আকাশের তারাগুলোর দিকে চেয়ে শুধু আবিরের কথাগুলো মনে পড়ছে । একদিন বুঝবে কি ছিলাম তোমার , আর খুজবে , কিন্তু আমি থাকবো না কোথাও । এখন ও হয়তো প্রতিদিন স্পর্শ প্রতিদিন আকাশের দিক চেয়ে আবিরকে খোজে তারাগুলোতে . . . . (সমাপ্ত)

লিখাঃ ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ