সহযাত্রী

ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির ১৯ মার্চ ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০১:৪৫:৪৯পূর্বাহ্ন গল্প ১০ মন্তব্য

সহযাত্রী

অনেক দিন পর আমার শরীরের রক্তকনা গুলো হিম শীতল হয়ে জমাট বাধলো । মানুষের জীবনে বাস্তবতা যে কি গুরুত্ববহন করে তা আজ জানাতে পারলাম । সময়ের সাথে স্বপ্নগুলো চোখের পলকে কিভাবে মিশে যায় । আমি যেন তার রাজসাক্ষী ।

**

মনটা অনেক খারাপ । কিন্তু সব সময়ের মত না । অল্প সময়ে একজনের মানুষের সাথে পরিচয় হয় । যে মানুষটার সাথে ৫ দিন পাশাপাশি বেড এ কাটিয়েছি । সে মিষ্টি মানুষটা প্রচন্ড মিস করছি ।
*
*
এই তো কয়েক মাস আগে আমি সুস্থ একজন মানুষের তালিকায় ছিলাম । হঠাৎ করে নিজেকে ধীরে ধীরে অসুস্থ অনুভব করতে থাকি ।অসুস্থ হওয়ার পর মানষিক দিক থেকে ভেঙ্গে পরে ছিলাম । অনেক ডাক্তার দেখালাম কিন্তু কেউ রোগটা ধরতে পারেনি । অবশেষে এপোলো হসপিটালে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর ডাক্তার আমার বাবাকে বলল ব্রেইন ক্যানসার । ভালো হওয়ার চান্স ৫০% । খবরটা ফেসবুকে ছড়িয়ে পরতেই অনেকের অনেক কথা , মন্তব্য ও কেউ কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল । প্রথম প্রথম সবাই খোজ খবর নিত । কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই ভুলে গেছে ।

**

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাই । মাউন্ট এলিজাবেথ এ এডমিট করা হয় । আমার বেড এর পাশে একজনকে আবিষ্কার করলাম । ছেলে সব সময় চুপচাপ থাকতো । মাঝে মাঝে দু একজন এসে তার সাথে দেখা করে যেত । একদিন না যেতেই তার সাথে বন্ধুত্ব করে ফেললাম । প্রতিদিন সারারাত জেগে কথা বলতাম জিসান ভাইয়ের সাথে । ছেলেটার নাম জিসান । একবছর হলো এম.বি .এ করে চাকুরী নামক সোনার হরিনের পেছনে ছুট ছিলেন । অবশেষে বাইংহাউজের খুব ভালো বেতনের একটা চাকুরী পেয়েছিলেন । কিন্তু ডাক্টার এর একটি রিপোটের্র জিসান ভাই জীবনের সব কিছু পাল্টে যায় ।
*
*
পর দিন ডাক্টার এর দেয়া টেষ্টগুলো করিয়ে যখন বেডে ফিরছিলাম । বেডে ঢুকতেই দেখলা পরীর মত একটা সুন্দরী মেয়ে জিসান ভাই এর হাত ধরে কান্না করছে । আমিতো অবাক !
আমি বেডে ঢুকতেই মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল । আমি নির্বাক হয়ে জিসান ভাই এর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
লোকটার চোখে যেন ভালোবাসা এক জ্বলন্ত প্রদিপ দেখতে পেয়েছিলাম ।

**

দুই দিনের মাথা আমাদের সর্ম্পক আরো এগিয়ে যায় । তার সর্ম্পকে কিছু জানতে চেষ্ঠা করি । কিন্তু পারি না।
*
*
একদিন রাতে জিসান ভাই বলল আবির চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি । আমি বললাম কিভাবে সম্ভব । আপনার তো শরীর প্রচন্ড খারাপ । জিসান ভাই বলল যাবি কিনা বল ?
আমি কোন কথা না বলে জিসান ভাইয়ের পথ অনুসরন করতে লাগলাম । জিসান ভাই রিসিপসনে কি যেন বলল তাতেই কাজ হল । নিচে নেমে একটা দোকানে বসে কফি খেলাম । কফি খেতে খেতে জিসান ভাই বলল জানিস আবির মেয়েটা না আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে । আজ প্রায় ৬ বছর ধরে আমাদের রিলেশন । বন্ধুদের দেখছি গালফেন্ড এর সাথে কথা কাটাকাটি , ব্রেকআপ হয় । কিন্তু আমাদের মাঝে তা আজ পযর্ন্ত হয়নি । ভেবে ছিলাম কিছু দিনের মধ্যে ছোট্ট একটা বাসা নিবো তারপর মেয়েটাকে বিয়ে করবো । আমাদের ছোট একটা পরিবার হবে । মনে হয় আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে ।

**

জিসান ভাইয়ের কথাগুলো শুনে খুব কান্না পাচ্ছিল । মনে মনে বলছিলাম আল্লাহ তুমি আমাকে নিয়ে যাও কিন্তু জিসান ভাইকে সুস্থ করে দাও । তারপর হসপিটালে ফিরে যাই । বাকি দু দিন জিসান ভাই সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেছিলাম । আমাকেও ডাক্তার বললেন কেমোথেরাপি দিলে ভালো হয়ে যাবো । তাই ফিরে আসতে হয়েছিল । আসার আগে জিসান ভাই আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল । জিসান ভাইকে কথা দিয়েছিলাম । আবার আসলে তার সাথে দেখা করবো ।

**

ঈদের আগে ব্যবসার কাজে সিঙ্গাপুর গিয়ে ছিলাম । জিসান ভাই এর কথা মনে হতেই তার সাথে দেখা করতে ছুটে গিয়ে ছিলাম । কিন্তু মানুষটাকে আর খুজে পাইনি । হসপিটালে খোজ করে জানতে পারি জিসান ভাই হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে । মানুষটার স্বপ্ন ভরা চোখ দুটো এখনো আমার দু চোখের ভাসে । যেন মনে হয় এই তো সেদিন একই পথের সহযাত্রী ছিলাম . . . .

(উৎসর্গঃ জিসান ভাইকে )

লিখাঃ ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ