১.

একজন গেস্ট এর জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছি। পাশের টেবিলে দেখতে পেলাম তরুন বয়সী একজন অস্থিরচিত্তের মানুষ ফোনে কথা বলছে।
- ডলিপু প্লিজ প্লিজ, জেরিনপু আর ম্যাক্সিপুকেও সাথে নিয়ে আসো। আমি টেবিল বুকিং দিয়েছি, কফিশপটা কিন্তু জোস!

তরুনটি বার বার যাদের আসতে বলছে, বুঝলাম তাদের একজনের নাম ডলি অন্যজন জেরিন এবং ম্যাক্সি। নিশ্চই পরিবারের আপন কেউ হবে, না হলে এতো আদর করে বাংলিশ নামে ডাকার কথা নয়।

রাস্তায়, বাসে, ট্রেন কিংবা নির্ঝঞ্ঝাট জায়গায় অন্য অপরিচিত হোমোসেপিয়ানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা আমার পুরনো বাজে(!) অভ্যেস। প্রত্যেক মানুষের নিজের অজ্ঞাতসারে করা নানাবিধ অদ্ভুত আচরন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে কিন্তু!

এরকম আমাকেও হয়তো কেউ লক্ষ্য করছে চুপি চুপি!
একথা মনে হতেই আড়চোখে চারপাশে তাকালাম- নাহ, কিছু তফাতে দু'তিনজন আছে; তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত।

কফিশপে একা একা কারও জন্যে অপেক্ষা করার যে মানসিক যন্ত্রনা তা হতে মুক্তি পাবার একটাই চিন্তা মাথায় আসলো - সে তরুণকে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করা।

কিছুটা আগ্রহী দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে লক্ষ্য করলাম। আরে! এ যে দেখছি শায়ন আহমেদ। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া লেখক, বই প্রকাশের রমরমা ব্যবসায় অলিগলির বই বিপণিতে তার এক দুইটা বই পাওয়া যেতে পারে। ফেসবুকে একজন পাঠককে অটোগ্রাফ দেয়ার ছবি দেখেছিলাম তার। বেশ জনপ্রিয় একজন ফেসবুক সেলিব্রিটি।
আমিও তার ফলোয়ার। মানে রিকুয়েস্ট দিয়েছিলাম, এক্সেপ্ট না করে ঝুলিয়ে রেখেছে। ফলোয়ার বাড়ানোর ফেসবুকীয় কৌশলগুলির অন্যতম কূটকৌশল এটি।

ভাবলাম সামনাসামনি যখন পেয়েছি, একটু বাজিয়ে দেখলে মন্দ হয়না! ভরা কলসি নাকি ফাঁকা কলসি তা প্রতীয়মান হয়ে যাবে।
এগিয়ে গেলাম তার দিকে।

হ্যালো ভাইয়া।
হাই, আপনি?
ভাইয়া আমি আপনার ফেসবুক ফলোয়ার।
ও আচ্ছা। বলার ধরনে একধরনের কবি লেখক ভাব! এই মেকী গাম্ভীর্য আমায় অস্বস্তিতে ফেলে দিলো।
হয়তো ভাবছে - ধুর! কোত্থেকে আসে এসব উটকো ঝামেলা।

কেমন আছেন?
বললাম- ভালো আছি ভাইয়া।
বসুন না?

যার জন্য অপেক্ষা করছি সে আসতে আরো কিছুক্ষণ লাগবে। ভাবলাম যাক একটু গল্প করি, কথা বলি। একজন সেলিব্রিটির কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে। হয়তো এই জ্ঞান দিয়ে আমিও এভাবে একদিন সেলিব্রিটি হলেও হতে পারি।

কথা শুরু করলাম এভাবে-
ভাইয়া আপনি কিন্তু ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয়। আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে।সারাদিন আপনার সব পোস্টেই আমার উপস্থিতি পাবেন। দেখে থাকবেন নিশ্চয়?
হ্যা হ্যা দেখিতো।
মনে মনে হাসলাম। আমার রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রেখেছে সে, তার কোন পোস্টেই আমি লাইক দেইনা। তবে মাঝেমধ্যে খোঁচামূলক কমেন্ট করি কিন্তু!
তার বলার ধরন দেখে বুঝলাম আমার মন রাখার জন্য বলছে এসব।

বললো- আসলে আমিতো ফেসবুকে খুব বেশিক্ষণ থাকিনা, এই শুধু সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটু লগইন করে গুড মর্নিং পোষ্ট জানিয়ে সারারাতের অপেক্ষমান নোটিফিকেশন চেক করেই বের হয়ে আসি।

জিজ্ঞাসা করলাম- কিন্তু তারপর?
তারপর আর কি! সকালেই ক্যাম্পাসে যেতে হয়, স্যাররা খুব কড়া। একটু লেট হলেই প্যাঁদানি খেতে হয়। উফ! বিরক্তিকর।

নাস্তার টেবিলে খুব তাড়াহুড়ো থাকায় মা আদর করে মুখে তুলে খাইয়ে দেয় আর এই ফাঁকে আমি একটু শুধু লগইন করে আমার গুড মর্নিং জানানো পোস্টে আসা কমেন্টসগুলির রিপ্লাই দেই।
বুঝতেইতো পারছেন এটা ভদ্রতা। না হলে, ফ্রেন্ডস ফলোয়াররা ভাববে আমার মুড বেড়ে গেছে। সবাই সেলিব্রিটি ভাবে কিনা!

বললাম- ও আচ্ছা, তাতো বটেই। কিন্তু তারপর সারাদিন ক্লাস আর ক্যাম্পাস করতে গিয়ে নিশ্চই আর ফেসবুকে ঢোকা হয়ে উঠেনা??
- না তা নয়, বাসা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে যেতে যেতে একটু ফেসবুকে আসতেই হয়।

কেন? কারন কি বলবেন?

- বাসে বসে থেকে কি আর করা, বিরক্তিকর প্যাঁ পুঁ, জ্যাম। তার থেকে হেডফোনে গান শুনতে শুনতে জাস্ট আজকে কোন কোন ফ্রেন্ডের বার্থডে তাদের উইশ করি।

বাহ! খুব ভালো। তাই করা উচিত।
নিশ্চয় কস্ট হয়? আপনার এত্ত বড় ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে উইশ করা চাট্টিখানি কথা নয়। সাধু! সাধু!

আসলে মিথ্যে বলবো না। সবাইকে উইশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমার ফেসবুক বন্ধু তালিকায় কিছু মেয়ে আছে যারা আমাকে খুব আদর স্নেহ করে। নিজের বোনটাও বাসায় এত্তগুলা আদর দেয়না। তুমি, তুই, ভাইয়া করে ডাকা সেসব মেয়েদের উইশ না করলেই নয়।
এই যেমন আজকে রিনাপু, বিথিপু, ডলিপু, টুসি, জেরিন এদের উইশ করছি। আমারে কত্ত আদর করে তারা। আমিও তাদের সেই আদর, পোষ্ট লাইকের মত ব্যাক না দিলে আমারে পোক মারবে। একটু কমবেশি হলে কমেন্টস এ যেখানে সেখানে তারা জিভ বের করা ইমো দিয়ে দেয়। হাজার হোক এতো এতো ফলোয়ারের মাঝে সেটা ইজ্জতের ব্যাপার!

২.

বললাম- হ্যা তাতো বটেই। কিন্তু এরপর?

- আর কি, এসব করতে করতে কখন যে বাস ক্যাম্পাসে চলে আসে দেখতেই পাইনা। বুঝতেইতো পারছেন চোখ সবসময় মোবাইল স্ক্রিনেই থাকে। এই এতটুকু কাজই শুধু ফেসবুকে করি, আমার এত সময় কোথায় বলেন?

- হুম বুঝলাম। কিন্তু ক্লাসে নিশ্চই লগইন করেননা? পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটবে তাহলে।

- আরে সেটাইতো সমস্যা। কিন্তু আমি এডজাস্ট করে নেই।

আমিতো জানি এই হয়! মেকি আশ্চর্য ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
মানে কি? ক্লাসেও ফেসবুক?

- আর বলবেন না। ইউনিভার্সিটির দুটো গ্রুপের এডমিন প্যানেলের সদস্য আমি। আরো বেশ কিছু গ্রুপের একটিভ সদস্য। স্যারের লেকচার শুনতে শুনতেই সেই গ্রুপের জন্য আপডেট পোস্ট দিতে হয়। তা না হলে গ্রুপের অনেকেই সমস্যায় পড়ে যাবে তাই আরকি।

- কি বলেন? যেমন?
- এই যেমন ক্যাম্পাসে যারা আসেনি তারা কিংবা আজ ক্লাস শেষে আমরা কোথায় মিট করবো এসবের খবরতো গ্রুপেই নিতে হয়।

- ও আচ্ছা আচ্ছা। তাতো করতেই হবে। নাহলে যে এডমিন প্যানেলের বদনাম হবে।

সন্তুষ্টির হাসি হেসে বললো- এইতো বুঝতে পেরেছেন।

কি যে বলেন, আমি বুঝবো না? আপনাদের মত এডমিন আছে বলেইতো প্রতিদিন তিন চারটা গ্রুপ আমাদের মত সাধারন ফেসবুকারদের অপ্রয়োজনে এড করে তাদের গ্রুপে। এ এক বিশাল পেইন ভাই। লিভ নিলেও আবার করে।

শিক্ষকের মত লেকচার দেয়ার ভঙ্গিতে সে বলে উঠলো- আসলে আমরা যারা গ্রুপ হোল্ড করি তারা সবাই এক একটা কমিউনিটি। আর কমিউনিটিতে আপনাদের অবদান না থাকলে সেখানে আবার মেজোরিটি বজায় থাকে না। যত বেশি সদস্য তত বড় কমিউনিটি। এতটুকু মধুর যন্ত্রনা একটু না হয় সহ্য করলেন ভাই।

- আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। কিন্তু আপনার ফেসবুক লগইনের বাকি গল্প?

কি বলেন, গল্প? নাহ, তা কি করে হয়!

আমিতো সামান্য সময়ের জন্যেই আসি ফেসবুকে। এটা কিছুতেই গল্প হতে পারেনা। এই নিজের সময়টা কিচ্ছুক্ষণ ভালো কাটে তাই আরকি।

ও আচ্ছা, তাই বলুন। তাহলে ফেসবুকে লগইন করতে আপনি ভালোবাসেন তাইনা?

- এক আধটু সবাই বাসে, আমিও বাসি। এতে দোষের কিছু আছে কি?

মাইন্ড করলো নাকি? খোঁচা দিলাম বুঝতে পেরেছে?
নাহ্ তা নেই, স্যরি।
- ইটস ওকে।

৩.

আজকে তোমারে পাইছি! এই ভেবে জিজ্ঞেস করলাম- আচ্ছা ক্লান্ত হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার পর কি আবারো লগইন করেন?

- নাহ! খুব বেশিক্ষন নয়, জাস্ট একটা ছবি আপলোড দিতে যেটুকু সময় লাগে ততক্ষন।

বললাম - ছবি? কেমন ছবি যদি বলতেন?

- আবার লেকচার শুরু। এই যেমন ক্যাম্পাস মাস্তি, কখনো সারকাজম, কিংবা উস্কো খুস্কো সেলফি এসবই আরকি। খুবই ক্লান্ত থাকিতো, আর মোবাইলের চার্জও তখন ফিফটি পার্সেন্টের নীচে চলে আসে। তাই পাওয়ার ব্যাংক লাগিয়ে চার্জিং এর ঐ অতটুকু সময়।

বললাম- ও আচ্ছা।

আসলে এই ধরনের সেলিব্রিটিরা নিজের সম্পর্কে বলতেই বেশি ভালোবাসে। ফাঁকা কলসি, টিকটক করে বাজে। অন্যের কথা শোনার সময় কই তাদের?

দেই আর একটু খোঁচা। মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা তাতে।
- বাসায় ফেরার পরে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসেন নিশ্চই? আরতো তখন লগইন করা হয়না তাইনা?

- না না তা নয়। আসলে সন্ধ্যার পরে পড়ুয়া ক্লাসমেটরা তাদের পড়াশুনার টুকিটাকি শেয়ার করে কেউ কেউ পোষ্ট দেয়, কিংবা যারা ক্লাসে আসেনি তারা কে কোথায় কি করেছে সারাদিন এসব শেয়ার করে। সেসব দেখার জন্যে একটুক্ষনের জন্যে লগইন করতে হয় আরকি!

এভাবে খাওয়ার সময় চলে আসে। মা ইয়াম্মি কিছু রান্না করলে সেসব খাবারের ছবি ফ্রেন্ডসদের সাথে একটুতো শেয়ার করতেই হয় তাইনা? - বলে উঠলো সে।

আমি বিজ্ঞের মত উপর নীচে মাথা নাড়ালাম। হুম তাতো বটেই, কিন্তু খাবারের পরে? তখনো কি লগইন করেন ফেসবুকে?

- নাহ্ সেই যে ইয়াম্মি খাবারের ছবি দেয়ার সময় লগইন করেছি আরতো লগআউট করিনা। এর ফাঁকে মুভি দেখি আর পোষ্টে আসা সারাদিনের কমেন্টসের জবাব দেই।

আসলে আমিতো মুভিটাই দেখি। মাঝেমধ্যে শুধু জাস্ট ফেসবুকের ওয়ালে অন্যদের পোস্টে চোখ বুলাই, লাইক কমেন্টস করি। তাও সবার পোস্টে না। আমার মত সেলিব্রিটি যারা শুধু তাদের পোষ্টে।

- তাই নাকি?
- হুম।
কম লাইক পরা পোস্টে লাইক বা কমেন্টস করা আসলে আমার ফেসবুকীও পার্সোনালিটির সাথে যায়না। বুঝতেই পারছেন হাজার হোক আমি একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি।

বললাম- তাতো বটেই। কিন্তু এরপর?

- এরপর আর কি! এসব করতে করতেই চোখে ঘুম চলে আসে। বিছানায় এসে খুব সামান্য সময়ের জন্য আবার একটু লগইন করে শুভ রাত্রি জানিয়ে একটা পোস্ট দেই। কারন ঘুমের সময় নস্ট করে ফেসবুকে থাকা আমার মোটেই পছন্দ নয়। কিন্তু ঐ বজ্জাত আপুগুলোর সাথে একটু হাই হ্যালো আর আমার কিছু লুল ফলোয়ারের কমেন্টসের জবাব দিতেই হয়। না হলে ওরা আমাকে দাম্ভিক ভাববে যে!

বললাম, নাহ্ তাতো করতেই হবে। হাজার হোক আপনার ফেসবুক পাংখা(ফ্যান) তারা। আর ঘুমাতে এসে আদরের আপুদের সাথে একটু লুলামী করলে ফ্রেস মাইন্ড নিয়ে ঘুমানো যায় কিন্তু!

- বাহ্ দারুন কথা বললেনতো! কালকেই এটা নিয়ে একটা পোষ্ট দেব। শিরোনাম হবে- "ফ্রেস মাইন্ড লুল আমি"!!
আইডিয়া দিয়ে হেল্প করলেন বলে কার্টেসিতে আপনার নাম দেব কেমন? আর আপনি কিন্তু বড্ড রসিক!

একটু হাসলাম। মিচকা হাসি উপহার দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম- ফ্রেস মাইন্ড তো বুঝলাম, কিন্তু লুল আমি?
- বুঝলেননা?
- নাহ্।
পুরো শব্দটা হচ্ছে ফ্রেস মাইন্ড লুলামী।
আসলে LOL (Lots Of Love) এর বাংলিশ হচ্ছে লুল , তার সাথে আমি শব্দটি হচ্ছি আমি নিজেই। এই হলো লুল আমি।
হাঃ হাঃ হাঃ...
লক্ষ্য করলাম, অট্টহাসিতে জিহ্বাটা যেন লকলকিয়ে উঠলো তার।

৪.

বললাম, কি আশ্চর্য! কি সমৃদ্ধ জ্ঞান আপনার! এই জন্যেইতো আপনি সেলিব্রিটি লেখক।
- কি যে বলেন!
- হুম ভাইয়া, কিন্তু আপনার মতো সেলিব্রিটির পোষ্টে আমার নামে কার্টেসী ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে। আমিতো জানতাম আপনারা মানুষের আইডিয়া চুরি করে নিজেই গল্প লিখে পোষ্ট করেন। তবে ধন্যবাদ পাওনা রইলো।

অতি অনাবশ্যকীয় কথার তোড়ে আমার নির্লজ্জ ট্যাংরা মাছের খোঁচাটা সে ধরতেই পারলোনা।
মনে মনে বলি- তোমাকে যে নারকেল তেলে ভেজে কড়কড়া করাচ্ছি তা যদি বুঝতে!

বললাম- ভাইয়া, একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম সারাক্ষন আপনার মেসেঞ্জার টোন বেজেই চলেছে। তার মানে কেউ চ্যাটে আছে তাইনা?
আর আপনি কোনো রিপ্লাই দিচ্ছেন না।

- কি আর বলবো! আপনি অনেক বিজ্ঞ মানুষ মনে হচ্ছে। কথা কানাকানি করা নিশ্চিত আপনার ধাঁচে নেই।

আমি এই সামান্য তেলে কিঞ্চিত লজ্জা পেলাম। তার আমাকে আরও কিছু শোনানোর আছে বলেই এসব বলছে।

সে বলে উঠলো - ফেসবুকে একজনের সাথে আমার রিলেশন চলছে। খুব গভীর প্রণয় যাকে বলে। যদিও এর আগে আরও তিনটা রিলেশনশিপ ব্রেকআপ হয়েছে কিন্তু এটা সিরিয়াস। আসলে সারাদিন ফেসবুকে ততটা থাকা হয়না কিন্তু ম্যাসেঞ্জারের রিপ্লাই দিতেই হয়। আমি আর ব্রেকআপ চাইনা ফেসবুক লাইফে। একজন পার্টনার না হলে যে বন্ধুদের কাছে প্রেস্টিজ থাকেনা।
- হুম তাতো বটেই।

আসলে সুন্দরী পার্টনার এখন ফেসবুকীয় ফ্যাশন। বিভিন্ন গ্রুপে মেয়েদের রিকুয়েস্ট দেয়া, পরবর্তীতে ফ্লার্টিং করা আপনাদের চিরাচরিত অভ্যাস। মনের এই তীব্র ক্ষোভটি তাকে বুঝতে দিলামনা।

বড্ড চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে।
অভদ্র সেলিব্রিটি, কঞ্জুস। এক কাপ চা অফার করলোনা?

ধুর! এসব ক্যাঁচক্যাঁচানি অসহ্য লাগছে। যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।

বললাম- আচ্ছা তাহলে আজ আসি। পরে দেখা হবে কেমন?

- কেন এত তাড়া কিসের? খুব জরুরী না হলে বসুননা? এখানে ডলিপু আর জেরিনাপু আসবে এখনি। আজ ওদের জন্মদিনের কেক কাটা হবে এখানেই। আমিই ইনভাইটেশন দিলাম আপনাকে। আজ থেকে আপনি আমার বেস্ট ফলোয়ার। আমার সব পোস্টেই আপনি লাইক কমেন্ট করেন।

- ও! তাই বুঝি? ফেসবুকীয় লুতুপুতু আপুদের জন্মদিনের পার্টি বলে আপনি ফেসবুক গার্লফ্রেন্ডের ম্যাসেজ রিপ্লে করছেন না?

- আরে রিপ্লাই দিলেই কেন ফোন ধরছিনা, কোথায় আছি, কেন আছি? এসব জানতে চাইবে। দেখা যাবে ডলিপুর সাথে কেক কেটে সেলফি তোলার সময় মুড অফ হয়ে ছবিগুলোই ভালো আসবেনা। সময়টাই মাটি হবে তখন।

বাহ! কি অদ্ভুত যুক্তি!

- হুম বুঝলাম।

ওকে ভালো থাকবেন, আমার গেস্ট এসে গেছে। সেও আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আসলে তার বোনের অপারেশনের জন্য রক্ত ডোনেট করতে যাব এখনি। তাই সময় হবেনা আজ। ভালো থাকবেন।

- আপনিও ভালো থাকবেন। আর আমার লুল পোস্টে লাইক কমেন্টস করে উৎসাহ দেবেন সবসময় কেমন? হাঃ হাঃ হাঃ...
আবারও তার জিহ্বাটা লকলকিয়ে উঠলো। গা রি রি করে এমন হাসিতে।

তার চওড়া মুখের হাসি দেখে মনে মনে প্রার্থনা করলাম- মুখে যদি দুই তিনটা মশা ঢুকে যদি গান করতো!

রক্ত দেয়ার জন্য ক্লিনিকের বেডে শুয়ে আছি। পাশে রক্তের ছোট্ট ব্যাগটি পূরণ হচ্ছে আমার রক্তে। হয়তো বাঁঁচবে একটি জীবন। এটাইবা কম কিসে? ভার্চুয়াল দশজন বন্ধুর মিথ্যে ভালোবাসা আর লুলামী করার চেয়ে সত্যিকারের একজন মানুষকে সেবা করা অনেক আনন্দের, অনেক মহত্বের।

ব্রেকআপ হলেই লুলামী শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যে মানুষটিকে রক্ত দান করছি সে অপরিচিত হলেও আমার কথা হয়তো মনে রাখবে সারাজীবন। এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা।

রাবারের তুলতুলে ছোট্ট বলটি হাতের মুঠোয় ধরে পাম্প করছি আর ভাবছি- হায়রে ভার্চুয়াল সেলিব্রিটি! সবাই কি শিক্ষা নেবে তোমাদের কাছ থেকে? দরকার নেই, তোমাকে ফলো করার। আমি কখনোই লুল হতে চাইনা।

--------

** রম্য গল্প কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক হয় এবং শিক্ষণীয় অনেক কিছু থাকে। কাউকে আঘাত দেয়া লেখকের উদ্দেশ্য নয়। তাই শিক্ষাটাই গ্রহন করা বাঞ্ছনীয়।

** গল্পের চরিত্রের নামগুলি কাকতালীয়। কারো সাথে মিলে গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদ।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ