ইরার ডাইরী – পর্ব-২

নীরা সাদীয়া ৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৫০:০৭অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

ইরা দোটানায় পড়ে গেলো। সে একবার ভাবছে শফিক সত্যিই হয়ত বদলে গেছে। আরেকবার ভাবছে এসবই ভুল। কারণ এমন মানুষ কখনোই বদলায় না। তাছাড়া একটা সময় শফিকের মুখে এসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত হয়ে গেছিলো। তাই এখন আর এসব বিশ্বাস করতে মন চায় না। সে ভাবতে শুরু করলো দশ বছর আগের কথা।

সদ্য এইচএসসি পাস করা সুন্দরী মেয়ে ইরা। পরীক্ষা শেষ হতেই নানা দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু হলো। এমনি করেই একদিন শফিকের বাড়ি থেকে প্রস্তাব এলো। ইরার মা ভেবেছিলেন অনার্স শেষ হলে বিয়ে দেবেন। কিন্তু বাবার জোড়াজুড়িতেই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে মা সম্মতি দিলেন। বেশ ধুমধাম করে প্রখ্যাত শিল্পপতি শফিক তুহিনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো ইরা আদিবার। কিন্তু বিয়ের পরও পড়াটা চালিয়ে যেতে লাগলো সে। অবশেষে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে কোর্টে প্র্যাক্টিস শুরু করলো। এই বিষয়ে শফিকের কখনও কোন দ্বিমত ছিলো না। কিন্তু কিছু দিন পরই ইরার চোখের সামনে সত্য ঘটনাগুলো সব গল্পের বইয়ের মত করে ধরা দিতে লাগলো। কোট কাচারীর এসব বিষয়ের সাথে জড়িত হবার পর অন্ধকার জগতের মানুষগুলোকে সে চিনতে থাকলো। কিন্তু সে কোনদিন ঘূনাক্ষরেও ভাবেনি এসব নামের মাঝে শফিকের নামটাও চলে আসবে। প্রথম যখন সে নামটা শুনেছিলো তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি। ভেবেছিলো, এটা অন্য কোন শফিক। কিন্তু পুরোটা জেনে দেখলো এটাই শফিক, 'শফিক গ্রুপ' এর মালিক শফিক! সেদিন বাড়ি ফিরে নিশ্চিত হবার জন্য সে সব কিছু জানতে চেয়েছিলো। শফিকের এলোমেলো যুক্তি তার কাছে ভালো লাগেনি। তবুও সে জোর করে সেদিনের বিষয়টাকে গিলে ফেলেছিল। দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে চেয়েছিলো। এদিকে তার সিনিয়রের কাছে একের পর এক এসব কেস আসতে লাগল এবং এসবের মাঝে দু একটা কেসে সরাসরি শফিকের নাম জড়িত ছিলো। কিন্তু প্রতিবারই টাকার জোরে এবং ক্ষমতার দাপটে এসব কেস ধামাচাপা পরে যেতো এবং বাদী পলাতক হিসেবে খাতায় নাম লেখাতো। এভাবেই চলছিলো দিনগুলি। প্রতিদিন বাসায় ফিরে একরাশ তীব্র ঘৃণা নিয়ে একই ছাদের তলায় একজন আসামী ও একজন আইনজীবী বাস করতো। শফিক যদি আগে এই পরিণতি টের পেত তাহলে কিছুতেই ইরাকে আইন বিষয়ে পড়তে দিতো না।

ইরা আর ভাবতে পারছে না কী দূর্বিষহ ছিলো শফিকের সাথে কাটানো প্রতিটি দিন। দেখতে দেখতে ভোরের সূর্য জানালর ফাঁক গলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সে দ্রুত উঠে নাশতা বানিয়ে খেতে বসলো টেবিলে। এমন সময় আবার মনে পড়লো, শফিক ঘুম থেকে উঠেছে কি? নাশতা খেয়েছে তো? আবার পরক্ষণেই ভাবলো, 'ও যা খুশি তা করুক। একটা অন্যায়কারীর কথা ভেবে দিনটাকে নষ্ট না করাই শ্রেয়।' নাশতা করে দ্রুত তৈরি হয়ে অফিসে গেল ইরা। এখন সে আর কোন সিনিয়রের নেতৃত্বে নেই। বরং সে নিজেই এখন সিনিয়র। তার কাছে শিখতে আসে বেশ কজন ছেলেমেয়ে। এদেরকে শেখাতে তার বরং ভালোই লাগে।

অফিসের বারান্দায় জুনিয়রদের নিয়ে বসে ছিলো ইরা। এমন সময় তাদের দিকে এগিয়ে এলো ওসমান নামের একটি যুবক। বয়স হবে পঁচিশ কি ছাব্বিশ। ছেলেটি এসেই ইরাকে সালাম জানালো। ইরা তাকে বসতে দিলো। এরপর তার মুখ থেকে ঘটনার যে বিবরণ শুনলো তার সারমর্ম হলো, ওসমান সখীপুর বস্তির একমাত্র শিক্ষিত ছেলে। তার ধারণা বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনটা লাগেনি। বরং ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছে। কিছু দিন যাবত এখানে শফিক গ্রুপের সাইনবোর্ড ঝুলছিলো যা তারা আগে কখনও দেখেনি। তারপর প্রায় প্রতি রাতেই তাদের ঘরের চালে কে যেন ঢিল ছুঁড়তো। কখনো তাদের ঘরের বেড়া কেটে নিয়ে যেতো। অদ্ভুত আওয়াজ করতো। বস্তিবাসীর ধারণা এসব নাকি জীন ভূতের আছড়। ওসমান এসব বিশ্বাস করেনি। তারপর একদিন মাঝরাতে দেখে আগুন! সব পুড়ে ছারখার। সব শুনে ইরা বেশ বুঝতে পারলো ঘটনা কী ঘটেছে। সে ঠিক করলো এই কেস সেই লড়বে।

পর্ব-২
চলবে...

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ