প্রথম এদেশে এসে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠি অস্থায়ীভাবে। বাড়তি রুম না থাকায় আমি ঘুমাই ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে, সবাই ঘুমিয়ে গেলে। আবার সবাই উঠবার আগেই উঠে পড়ি বিছানা পত্র গুছিয়ে, যাতে পরিবারটির কোন সমস্যা না হয় কিংবা আমায় অনাবশ্যক ঝামেলা মনে না করে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই এর ব্যতিক্রম হয়ে যেতো। অনেক রাত অবধি গৃহকত্রী'র সাথে সেলাইয়ের কাজ করলে খুব ভোরে কেমন করে উঠি ! একদিন তিনি রেগে গেলেন। বললেন, "এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে তো সমস্যা"। অসহায় আমি সমস্তদিন-রাত্রি লজ্জায় হেট হয়ে থাকি। অনুতাপে নিজেই নিজেকে ভৎসনা করি... কেন আজ ঘুম ভাঙতে বেলা হয়ে গেলো ! নতুন জায়গা, নতুন মানুষজন... যেন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া ! প্রতিটি মুহূর্তই চৈত্রের খরার মতই নিঃশব্দে পোড়ায়, আমায় ! প্রচণ্ড গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার, তবুও ফ্যান কিংবা এসি টাচ করিনা সংকোচে। কিন্তু আচ্মকা এক সন্ধ্যায় গৃহকত্রী রেগে গেলেন। এসি অন কেন ! আমি রাজ্যের বিস্ময়ে চেয়ে থাকি। যদিও আমি তা করিনি, তবুও লজ্জায় সংকোচে আড়ষ্ট হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে থাকি...
অনেক বছর বাদে, এখন___
কাছের-দুরের আত্মীয়-অনাত্মীয়...যারা স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে এদেশে আসেন, তারা স্বল্পকালীন আমার বাড়ীতে আশ্রয় নেন। মোটামুটি চলার মতো একটি জব পেলে বাসা ঠিক করে চলেও যান। রুম সংকটের কারনে, সেই স্বল্পকালীন সময়ে আমার ড্রয়িংরুমটিই তাদের একমাত্র ভরসা। খুব ভোরে আলো না জ্বেলে, আধো অন্ধকারে ছেলেকে খাইয়ে, রেডি করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই সন্তর্পণে। ফিরে এসে নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করি, তাদের যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায়। এসি, ফ্যান কিংবা হিট ঠিকঠাক ভাবে চলছে কিনা দেখি। কোন কারনে কেউ সংকোচ বোধ করছে কিনা... লজ্জিত হচ্ছে কিনা__ ভাবনায় থাকি।
আমি যে তাহাদের মাঝে আমারেই খুঁজি ...
কারো জন্যে কিছু করবার সুযোগ বারেবারে আসেনা
এটা আমরা ক'জন বুঝি ?
২৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক আপু।
এই মানবতাবধ কয় জনের উপলধ্বী হয়, বলুন।
আত্তার অন্তস্থল থেকে স্যালুট আপনাকে।
রিমি রুম্মান
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
জীবনের অভিজ্ঞতায় পুড়ে আপনি সোনা হয়েছেন।
সবাই হয় না।
রিমি রুম্মান
কম বেশি এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। তবে না থাকলেই ভাল।
মরুভূমির জলদস্যু
লেখাটা গভীর থেকে বেরিয়ে আসা এক তৃপ্তি আর অতৃপ্তির আবেশ।
জানতে ইচ্ছে করছে আপনি কোথায় গিয়ে প্রথম এই অভিজ্ঞা অজর্ন করেছিলেন?
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক এসে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তবে ব্যপার না। মানুষ সবাই তো আর একরকম হয় না। ভাল থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
স্যাল্যুট আপনাকে
সবাই এক নন।
রিমি রুম্মান
অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
শুন্য শুন্যালয়
খারাপ লাগলো শুনে। এরকম মানুষের সংখ্যা কমই মনে হয় আমার কাছে, কারন যারা দেশের বাইরে যান তারা সবাই কম বেশি বাসস্থান, জব এসমস্ত মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যায়।
আপনার সেদিন গুলোর কথা ভেবে আমি নিজেই লজ্জিত বোধ করছি।
কারো জন্যে কিছু করবার সুযোগ বারেবারে আসেনা
এটা আমরা ক’জন বুঝি ? সত্যিই তাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
রিমি রুম্মান
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সব সময়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এটাই মানবতার নির্দশন।ভালো লাগল এক জন অন্ততঃ দূর পরবাসে থেকেও মাটির কথা বলেন।
রিমি রুম্মান
দূর পরবাসে যারা থাকেন, তাদের মাটির টানটা বেশিই থাকে। ভাল থাকুন।
সাইদ মিলটন
প্রতিটি মানুষের ই কিছুদিন হলেও পরদেশে থাকা উচিৎ 🙂 অন্তত মানুষ চেনা যায় 🙂 লেখা নিয়ে কিছুই বলার নাই
রিমি রুম্মান
এমন অভিজ্ঞতা দেশেও আছে অনেকের। বিশেষ করে মফস্বল কিংবা গ্রাম থেকে যারা ঢাকায় আসেন…
হিলিয়াম এইচ ই
স্যালুট আপনাকে। আপনার মতো মানুষ খুব কমই আছে।
রিমি রুম্মান
ধন্যবাদ আপনাকে। বেশীরভাগ মানুষই প্রবাসে একে অন্যকে সহযোগিতা করে থাকেন।
ব্লগার সজীব
আপনার ব্যবহার অন্তর স্পর্শ করলো আপু।
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা রইলো।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আপনার লেখা প্রেরনা যোগাবে অনেককে ।
রিমি রুম্মান
ধন্যবাদ আপনাকে।
লীলাবতী
প্রান ছুঁয়ে গেলো আপু।
রিমি রুম্মান
জীবনের ছোটখাটো এলেবেলে ঘটনাগুলো সবার সাথে শেয়ার করি, এখান থেকে যদি কিছু শেখা হয় আমাদের। ভাল থাকুন।
নুসরাত মৌরিন
অনেক ভাল লাগলো আপু।দুঃসময়ে আসলে মানুষ চেনা যায়,আর অন্যের বিপদে নিজেকে মানুষ বলে প্রমান দেয়া যায়…।
শুভকামনা রইল।
রিমি রুম্মান
মানুষ সবাই তো আর এক হয়না। কিছু মানুষ শেখায়। কিছু মানুষ শিখি। ভাল থাকুন সবসময়।