আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-ছাব্বিশ)

 

আকরাম সাহেবের বয়স হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে একা চলাফেরা করতে পারেন না, অসুস্থ। ছেলেরা প্রায় সবাই বাবার কাছাকাছি থাকেন, মনোয়ারা চায় মৃত্যুর আগে মানুষটা প্রিয় মানুষদের কাছে থাকুক।

 

-আরমানের এক ছেলে, এক মেয়ে স্কুলে পড়া শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে।

-সায়মনের দুই মেয়ে ওরাও স্কুলে পড়ে।

- আরাফাতের এক ছেলে স্কুলে পড়ে।

-আরিফার দুই ছেলে নিয়ে জাপানে থাকে জামাই ডাক্তার।

-আরাফ বড় বোনের সাথেই জাপানে থাকে তবে ব্যবসা আলাদা, সাথে একটা মাল্টিমিডিয়া কম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত আছেন।

 

রিহানের জন্ম জাপানে তবে বাবা মা বাংলাদেশের নাগরিক, সেখানে পড়াশোড়া করতে গিয়েই আরাফ রিহানের বন্ধুত্ব।

আরাফ এখনো অপেক্ষা করে এই বুঝি পিচ্চি পিয়ার ফোন আসবে, বলবে ভালোবাসি। কিন্তু আরাফের মোবাইলে প্রতিদিন ব্যবসায়ীক, দেশ,বিদেশ থেকে কল আসে, আসেনা অপেক্ষমান থাকা প্রিয় মানুষটার কল।

 

-দু-বছরে রাহাত ব্যবসায় আরাফের ৫০% শেয়ার, আরাফের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আরাফকে গত বছর একদিন আজাদ ফোন দিয়েছিলো অফিসে থাকায় খুব বেশি সময় কথা বলা হয়নি।

প্রিয়ার কথা জানতে চাইছিলো বলছে প্রিয়া খুব ভালো ভাবে পড়াশোনা করতেছে, দাদুমনি ভালো আছেন।

 

রাহাত বর্তমানে এখন শহরের নামকরা একজন শিল্পপতি কি নেই আজ! গাড়ি,বাড়ি টাকা,সম্পদ, ধন দৌলত সবকিছুই আরাফের অবদান।

-প্রতি মাসের ১-৫ তারিখের মধ্যে লাভের অর্ধেক আরাফের নামে ঢাকার একাউন্টে রেখে দেন, আর কিছু অংশ আকরাম সাহেবের হাতে তুলে দেন।

 

-মনোয়ারা আকরাম সেই ৩০ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে যায় তাদের ছেলে মেয়েরা এভাবেই হৈ হুল্লুর করে সারা বাসা মাতিয়ে রাখতো। আজ অনেক বছর পর নাতি,নাতনিরা এবাবে সারাক্ষন চিৎকার,চেঁচামেছি, হৈ চৈ করে যাচ্ছে আকরামের একটুও বিরক্ত লাগে না। কারন বাড়ির দেওয়াল গুলো অনেক বছর ঘুমিয়ে ছিলো! এদের চিৎকারের আওয়াজে প্রাণ ফিরে ফেল।

 

প্রিয়া এস.এস.সি পরীক্ষার পর কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় নানা বাড়ি যায়। কিন্তু তিনদিনের বেশি থাকতে পারে না আজাদ মেয়েকে চোখে হারায়, দাদুমনি সারাক্ষন এক কথা বউমা প্রিয়াকে গিয়ে নিয়ে আস। বাসাটা খালি হয়ে গেছে কোন হৈ চৈ নেই, প্রিয়া না থাকলে ভালো লাগে না...

মিরাও মেয়েকেও ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। তবু মেয়েটারও একটা জীবন আছে পড়াশোনার জন্য কোথায় বেড়ানোর সুযোগ পায়নি। সারাক্ষন পড়া, স্কুল, প্রাইভেট, কোচিং, বাসা এর বাইরে কোন জগৎ আছে প্রিয়া সেটা জানেই না। মা হিসাবে মিরা চায় মেয়ের একটা আলাদা জগৎ তৈরি হোক, তাই সে প্রিয়াকে একা একা ঘুরতে পাঠায়। এখন প্রিয়া চারপাশ থেকে অনেক কিছু শিখছে বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা একদম নেই।

 

মিরার ফোন পেয়ে প্রিয়ার ছোট মামা পড়দিন ঢাকা মিরপুর ১নাম্বার থেকে বাস স্টেশনে আসে। প্রিয়া চারদিকে চেয়ে দেখল গাড়ি,আর বাড়ি নিঃশ্বাস নেবার মতো একটু খালি জায়গা নেই চারদিকে হৈ চৈ সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। ছোট মামা কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে ময়মনসিংহের বাসে তুলে দেয়, কিছুক্ষন বসতেই বাস ছেড়ে দেয়।

 

প্রিয়া ভাবতে থাকে এটা তো জীবন নয় শুধু যান্ত্রিকতা মামার বাসায় সবাই কাজে ব্যস্ত থাকে, ফ্রি সময় বলতে কিছু নেই।

 

কারো সাথে কারো তেমন কথা বলারও সময় হয় না সবাই ব্যস্ত, আত্নার সম্পর্ক,স্নেহ,মায়া,মমতা এগুলো এরা চিনে না।

অথচ আমাদের বাসায় সবাই কত ভালো,  ফ্রেন্ডলি আন্তরিকতার শেষ নেই।

 

প্রিয়া এদের নাম দিয়েছে রোবট মানব, বাবাও তো ভালো জব করে তাতে কি পরিবারে ঠিকই সময় দেন। অথচ মামারা সবাই সংসারে মাসের খরচ দিয়ে দেন, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, বাড়ির কাজ মামীরা করেন।

এটা প্রিয়া মানতে পারে না, মামাদের সংসারে নজর দেওয়া প্রয়োজন কারন সংসারটা দুজনের।

 

বাসটা হঠাৎ প্রিয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটাল, বাসটা থেমেছে যাত্রী তুলার জন্য, প্রিয়া সাইড হয়ে বসল। পাশের খালি জায়গা একজন বসতে পারবে, প্রিয়া বোরকা পড়া তাই লোকটা প্রিয়ার মুখ দেখার চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রিয়া লোকটাকে পাত্তা না দিয়ে রাস্তায় পাশে চেয়ে আছে, হঠাৎ ট্রাই,সুটকোট পড়া একটা লোক বাসে উঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

গুন্ডা ছেলে প্রিয়া অস্পষ্ট আওয়াজ বের হয়ে গেল, সাথে সাথে...

 

.....চলবে।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ