আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-পনেরো)

সুরাইয়া নার্গিস ১৭ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ১০:৩৩:২৪পূর্বাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব - পনেরো)

-জানিয়ে দিবেন বাকি সব কাজ আমার।
হি হি হি হি হি হাসির আওয়াজ আরাফ নিজেকে স্বার্থক মনে করলো।
-ইসস! শীলাকে ম্যানেস করতে পারলাম।
-যাইহোক পাগলীটার মুখে হাসি ফুটল। অন্তত বিয়ের আগ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক থাকলেই হলো বিয়েটা যাতে ভালো ভাবে হয়। শীলার আমাকে দেওয়া দ্বায়ীত্ব পালন করতে পারি, আল্লাহ্ সহায় হোন মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো।

-আরাফ!
-বলো শীলা।
-তুমি খুব ভালো মানুষ যে মেয়ে তোমাকে স্বামী হিসাবে পাবে সে সুখি হবে।
-তাই.!
-হুম।
-দোয়া করো আমার জন্য।
ট্রেন আসার আওয়াজ শোনল আরাফ।
-শীলা আমি স্টেশনে। পরে কথা বলবো এখন রাখছি।
আচ্ছা।
দোয়া রইল সাবধানে যেও বলেই থামল শীলা।
শীলা আরো কিছুক্ষন কথা বলতে চাইছিলো কিন্তু আরাফ সেই সুযোগ দিল না। ট্রেন চলে আসছে বলেই ফোনের লাইনটা কেটে দিয়ে ট্রেনে উঠে চুপচাপ সিটে বসে থাকে আরাফ। ট্রেনটি ছাড়তে আরো ৫ মিনিট দেরি আছে, দু' একজন করে যাত্রী আসা শুরু করেছে। জানালার পশে বসে আরাফ উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আংশিক আকাশের দিকে। মন থেকে স্থির সিদ্ধান্ত নেয় সে, প্রিয়া রাজি হলে আজাদ আঙ্কেলের কাছে বাবাকে দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে!
হঠাৎ শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে উঠল সামনে ঝুঁকে আবার স্থির হল দেহ। এটা যে ইঞ্জিনের ধাক্কা, ইঞ্জিন এসে যুক্ত হয়েছে বগীগুলোর সাথে বুঝতে একটু সময় নিল আরাফ।

মনোয়ারার শরীর মন আজ কোনটাই ভালো নেই তাই বাইরে বেরুয় না। নিজের রুমেই শুয়ে আছে জানালার ভারী পর্দাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বাইরের রোদের আলো রুমে উঁকি দিচ্ছে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ায় চোখ তুলে তাকাল। রহিমা! দরজা টেনে ভিতরে ঢুকল, মেয়েটা সব কাজ এক হাতে করে। রহিমা মনোয়াররা মাথায় চুলে বিলি কাটছিলো মনোয়ারা রহিমার হাতের স্পর্শে আরাম বোধ করলো মনোয়ারা বলে উঠল কি রে মা কিছু বলবি.? খালাম্মা আপনি চা খাবেন। আমি চা করে দেই.?
একটু আগেই তো সকালের খাবার খেলাম এখন আবার চা লাগবে তুই বিশ্রাম কর আরার তো দুপুরের রান্নার সময় হয়ে যাবে। রহিমা মনোয়ারাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, মায়ের জন্য মেয়ে চা করে আনবে তাতে আবার কষ্ট কিসের..?
মনোয়ারা মুচকি হাসল আচ্ছা যা চা করে নিয়ে আয় মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, মাথা ব্যাথা করছে মানে আজ সকালে প্রেশারের ঔষধ খাওনি.? আবার টেনশন করছো বলেই ঘরে ঢুকল আকরাম সাহেব। চা খাবে..? রহিমা দিলে খাব হা হা হা হা। রহিমা দু-কাপ চা দিবি তোর আঙ্কেলের জন্যও দিস আচ্ছা খালামা বলেই হাসলো রহিমা।

আকরাম আঙ্কেল আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে নিজের বাপ,মা মারা যাওয়ার পর আরেকটা বিয়ে করলো। তারপর রহিমাকে বাড়ি ছাড়া করলো, নানাবাড়িতে আশ্রয় পেল কিন্তু মামীর অত্যাচারে সেই সুখ সইল না।
আকরাম সাহেবের বাড়িতে কাজ করে এই তিন বছরে বাপ একবার খোঁজও নিল না বেঁচে আছি না মরে গেছি ভাবতে চোখে পানি আসলো। রহিমার।আচলে মুখ ঢেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল।

মনোয়ারা, আরাফকে ওর রুমে দেখলাম না! কোথায় গিয়েছে তুমি জানো বলেই আকরাম সাহেব বিছানায় মনোয়ারার পাশে বসল।
হ্যাঁ বললো ময়মননিংহে যাবে।
হঠাৎ কেন কিছু বলছে.?
না, বলছে ফিরে এসে সব জানাবে।
ওহ্।
আজাদের কথা তোমার মনে আছে.? হ্যাঁ আরমানের বন্ধু তোমার ছাত্র খুব ভালো মানুষ আমাদের ময়মনসিংহের বাসার কাজে অনেক সাহায্য করছে।
ঠিক বলছো আজাদ না থাকলে জায়গাটা দখল নিতেই পারতাম না। অনেক লোক লাগছিলো পিচনে জায়গাটা দখল নেওয়ার জন্য কিন্তু আজাদের সৎ সাহস বুদ্ধিমত্তার গুনে জায়গাটা আমরা পেলাম বললেন আকরাম সাহেব।
খালাম্মা চা রেডি বলেই রহিমা চা দিলে চলে গেল, মনোয়ারা চা'য়ে মুখ চুমুক দিতে দিতে বললো প্রিয়া কে.? কেন আজাদের মেয়ে খুব সুন্দর হয়েছে ঠিক মায়ের মতো, মিরাকে তো তুমি দেখেছো.?
হুম আরমানের বিয়েতে আসছিলো ভদ্রমহিলাকে দেখছিলাম বেশ লম্বা,গায়ের রং দুধে আলতা,খুব অমায়িক ব্যবহার সবার নজর কেড়েছিলো সেদিন।

হুম, প্রিয়া মায়ের চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে টানা টানা চোখ,লম্বা চুল, গায়ের রংটা তোমার মতো গোলাপী। মনোয়ারা যেন লজ্জা পেল কি যে বলো না, আমার কি সেই আগের সুন্দর আছে বয়স হয়েছে না।

এক ঘন্টা বিরতিহীন ভাবে ট্রেন চলছে। কখন কোন স্টেশন পেরোচ্ছে সেদিকে আরাফের খেয়াল নেই। বিভিন্ন রকম অসংলগ্ন ভাবনা তার হৃদয়কে অক্টোপাসের মত ঘিরে ধরেছে সামনের স্টেশনে তিন মিনিটের জন্য থামল ট্রেনটি আরাফ আকাশের দিকে চেয়ে রইল বাইরে পছন্ড খড়া রোদ দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার সপ্তাহের ছুটির দিন বলে আজাদ সাহেব বাড়ির আঙিনা পরিস্কার করছেন বাড়ির পিচনের লেবুবাগানের কাজ করে আগাছা পরিস্কার করেন। প্রিয়াও বাবার আসে পাশে মোড়া পেতে বসে থাকে আব্বু দেখেছো লেবু গাছে কি সুন্দর ফুল ধরেছে বলে আঙ্গুলে ইশারা করলো বারান্দায় ইজিচেয়ারে প্রিয়ার দাদুমনি বসে আছেন বাবা মেয়ের কান্ড দেখছেন আর মিটি মিটি করে হাসছেন মিরাও প্রিয়ার কথা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসল শুক্রবার মসজিদে আজান দিয়েছে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে নামাজে যাও আর প্রিয়া লেবু গাছে নিয়মিত পানি দিলে লেবুর ফুল ঝরে পড়বে না অনেক লেবু হবে।
প্রিয়া খুশি হয়ে বললো তাহলে লেবু গাছের দ্বায়ীত্ব আমি নিলাম নিয়মিত পানি দিব বলেই পানি আনতে বার্থরুমে চলে গেল।
আজাদ কাজ শেষ করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল..!
কিছু কিছু মুখ আছে যাদের দেখলে আপন মনে হয়। মনে হয় হাজার বছরের পরিচিত তেমনি একটা মুখ হল প্রিয়া না জানি প্রিয়া এখন দেখতে কেমন হয়েছে। প্রায় ৩ বছর পর আজ আরাফ প্রিয়ার মুখামুখি হবে আচ্ছা প্রিয়া কি আমাকে দেখে আড়ালে থাকবে নাকি আমার যাওয়ার খবর শুনে দেখতে আসবে সামনে খোলা চুলে দাঁড়াবে, কপালে লাল টিপ থাকবে আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখব। ট্রেন ততক্ষনে ময়মনসিংহে পৌঁচ্ছে গেল লোকজন ঠেলাঠেলি করে নামতে শুরু করছে আরাফ সাইড দিয়ে ট্রেন থেকে নামল আরাফ।
মোবাইল বের করল আরাফ দুপুর- ২.০০ বাজে ট্রেন আসতেই যাত্রী পাবার আশায় স্টেশনে অট্রো,রিক্সা সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যাকে পাচ্ছে তাকেই বলছে, কোথায় যাবেন..? আরাফ সামনে থাকা রিক্সায় উঠে বসল চলেন মামা লোকটা একটু বয়স্ক তাই আস্তে আস্তে যাচ্ছে বাবার ফোন আরাফ তুমি কোথায়.? এইত- আব্বু প্রিয়াদের...

.....চলবে।
সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ