আমিতেই একাকার

রেজওয়ানা কবির ২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার, ০৭:১২:৩১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

সোনেলায় কিছুদিন থেকে নিয়মিত হতে পারছি না ব্যস্ততার কারনে। আজ অনেকদিনপর জিসান ভাইয়ের ভ্রমণ কাহিনী পড়ে মনে হল আমারও তো কিছু এলোমেলো ভ্রমণ কাহিনী আছে, তো লিখে ফেলি,এই ভেবেই মনের গিরগিটিকে কিছুক্ষনের জন্য দূরে ফেলে শুরু করলাম আজকের লেখা,,,,,,
তবে তার আগে আমার সম্পর্কে দু একটা লাইন বলতেই হবে,সেটা হল আমি মানুষটা বাইরে থেকে দেখতে এতটা স্ট্রং যে বেশিরভাগ মানুষই ভাবে খুব মুডি একজন। কিন্তু আসলে তা না,আমি এমন যে ভিতর ভিতর প্রচন্ড নরম প্রকৃতির আর বড্ড বেশি অগোছালো,আনমনা, উদাস, আর আবেগী। তবে এই গুনটা খুব দারুন আমার, সেটা হল আমার কষ্টগুলো এমনভাবে দমন করি যে খুব কাছের মানুষেরাই বোঝে না যে আমি ভালো নেই,কেননা আমার মুখে একটা হাসি সর্বদা লেগে থাকে, এইজন্যই বোঝে না কেউ যে হাসিটা অরজিনাল না আর্টিফিসিয়াল???? এইটাই আমার রহস্য ❤️❤️❤️

অনেক বকবক করলাম এবার আসি কিছু ঘটনায়,,,,,,,
বয়স তখন ৫/৬ প্রতিদিন আম্মু বা দাদী স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডী করে দেয়, তো সেদিন তাদের খুঁজে না পেয়ে আমি নিজেই রেডী হব, তাই স্কুল ড্রেস বাদ দিয়ে আমার পছন্দের নতুন টি শার্ট আর স্কার্ট পরে স্কুলে গিয়েছি। স্কুলে সব সিনিয়র ভাই আপুরা আমাকে ডেকে আমার গাল টিপে শুধু মুচকি হাসি দিচ্ছিল।প্রথমে ভেবেছি আমার ড্রেসটা সুন্দর আর আনকমন কারন আমার বড় দাদু লন্ডন থেকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু একটুপর আমার স্যার এসে পিঠে চাপড়ায় বলল পেত্তানির বাচ্চা জামার সব বোতাম উল্টো,আর জামার পিছনে লেখা হাক মি"।। আসলে জামাটার উল্টো সাইডে পরলেই এই লেখাটি ভেসে উঠেছিল। ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে এস। সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যাই।

আমি কলেজে পড়ি তখন রংপুর ক্যান্টে, কোন এক অকেশনের দিন আমি ফ্রেন্ডদের সাথে কলেজ কামাই করে নির্ঝর পার্কে গিয়েছি বান্ধুবীকে পাহারা দেয়ার জন্য,সেখানে স্যান্ডেল রেখে ভিতরে যেতে হয়। ফেরার সময় অন্যের স্যান্ডেল পরে চলে এসেছি তাও আবার সেই স্যান্ডেল দুইটা দুই জোড়ার,মানে দুইটাই আলাদা।

আমি ভার্সিটিতে সবে ভর্তি হয়েছি, আমি চশমা খুঁজছি প্রায় ২ ঘন্টা ধরে, কোনভাবেই পাচ্ছিলাম না, আমার বান্ধুবী আমার মাথায় চশমা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। এই ঘটনা এখনো প্রায় ঘটে।
আমি তখন জব করি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডে। সেই সুবাদে আমরা সবাই ট্রেনে ট্রেনিং এর জন্য সিলেট যাবো। তাই প্রিপারেশন অনুযায়ী আজাদের সাথে অনেক নতুন ড্রেস কিনলাম। সিলেটে রওনার পথে আমি জানালার পাশে বসেছিলাম, সবাই অনেক মজা করছিলাম। ট্রেন কোন এক স্টেশনে থামল, আমি নোকিয়া লুমিয়া ১ মাস হল কিনেছিলাম। হঠাৎ, মুহিব ভাই আমার হাত থেকে ফোনটা জানালা দিয়ে কেড়ে নিল,আমি ভাইয়া বলে চিল্লাছিলাম, তারপর ভাইয়া বলল, আরে ফোন এখানে এভাবে ইউজ করিস না, কেউ নিয়ে নেবে বলে ফোনটা ফেরত দিল। আমি অতটা পাত্তা না দিয়ে আবার ফোন চাপছিলাম, সেটাই হল মহাকাল,,,, কিছুক্ষনপর কেউ একজন আমার হাত থেকে ফোনটা আবার কেড়ে নিল, আমি আবার ভাইয়া বলে চিল্লালাম,ভাবলাম ভাইয়া আবার মজা করছে। কিন্তু ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মানে কি হল???? শুধু দেখলাম কেউ একজন মুহূর্তে আমার হাত টাচ করল, ফোনটা নিল আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকল, আমি স্পষ্ট ছেলেটাকে ফোন হাতে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম কিন্তু ততক্ষনে ট্রেন দ্রুত গতিতে চলেই যাচ্ছে 😭😭😭😭
খুব কাঁদছিলাম, আর নিজের উপর রাগ হচ্ছিল খুব, আমার আরেক কলিগ ল্যাবনী আপুরও অপ্প নতুন ফোন অন্য বগি থেকে সেদিনই নিয়েছিল একইভাবে। এইটা শুনে মনকে একটু শান্তনা দিলাম। কত হিংংসুটে আমি🤪🤪।

যাইহোক টুর থেকে অনেক কেনাকাটা করলাম, মজা করে ঢাকায় ফিরছিলাম। তো ঢাকায় ফেরার সময় হবে ভোরবেলা তাই সবাই সবার গার্ডিয়ান কে ফোন দিলাম। আমরা তিনজন একই রোডের তাই আমরা মহাখালী নেমে একটা সি এন জি নিলাম। দুজনকে নামানোর পরেই আমি নামব শেষে। তাই আজাদ কে ফোন দিলাম, ও দাঁড়িয়ে আছে মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ডে। আমি ওকে দেখে সি এন জি কে টাকা দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম, প্রথম ওকে ছাড়া অনেকদিন থাকা তাই। যাইহোক আমার কোলে একটা ব্যাগ ছিল সেটা নিয়েই নেমে পরলাম তারপর রিকশা নিয়ে চলে গেলাম বাসায়। বাসায় ঢোকার পর দেখি আমার হ্যান্ডব্যাগ, লাগেজ কিছু নাই, শুধু কোলে চা পাতা কিনে ছিলাম শুধু সেই ব্যাগ। হায়রে আমার শখের জামাকাপড়, সাজগোজের জিনিস, আরও কত কি??????😭😭😭😭😭টাকা কিচ্ছু নাই😭
এই হচ্ছে আমি,,,,,,,

তখন জব করি সাজেদা ফাউন্ডেশনে। অফিসের মাঝখানে ফার্মগেট সোনালী ব্যাংকে ব্যাংক ড্রাফট করতে গিয়েছি সাথে আমার সব মুল সার্টিফিকেট ছিল। সেখানেই সার্টিফিকেটের ফাইল রেখে অফিস চলে গিয়েছি আবার। কাজ করতে করতে ৭ টা প্রায়, বাসায় যাব,ব্যাগ গুছাচ্ছি,হঠাৎ দেখি ফাইল নাই,ভয়ে আতংকে ভরপুর হয়ে খুঁজতে গেলাম অনেক জায়গায়, সবখানে ঢুকতেও অনেক বাঁধা পেলাম। সবার শেষে গেলাম সেই ব্যাংকে। ব্যাংকে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু লোকজন আমাকে দেখেই বলল, আপনিই রেজওয়ানা কবির?এভাবে কেউ মুল সার্টিফিকেট ফেলে যায়? আপনাকে কত কল দিলাম নাম্বার অফ। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ফাইল হাতে নিয়ে আল্লাহ কে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলাম। তারা যে নাম্বারে ফোন দিয়েছিল শেষ ডিজিটটা 4 টাকে  9 ধরেছিল তাই। এই আমার আরেকরুপী খামখেয়ালীপনা।

আরেকবার সাজেদা ফাউন্ডেশনের ট্রেনিং এর জন্য সাভার গিয়েছিলাম, ট্রেনিং শেষে বাসায় এসে দেখি কাপড়ের ব্যাগ নাই, মাথা নষ্ট কি করি? পিসি ভাই সেই হোটেলে কল দিয়ে পরে সেই ব্যাগ কুরিয়ারে পাই। আমার শিক্ষাই হয় না আসলে।।।

একবার ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম আসছিলাম, আসার কিছুদিন আগে ভাসুর স্যামসাং জে৭ কিনে দিয়েছে, সেই নতুন ফোন নিয়ে আজাদ আমি ভাইয়া আসছিলাম কুড়িগ্রাম। যখন থেকে হেডফোন বের হয়েছে তখন থেকে আমার অভ্যাস গাড়িতে উঠেই হেডফোন কানে দেয়া। এখনো সেই অভ্যাস চলছে, সেদিন ও তাই করেছিলাম, গান শুনতে শুনতে কুড়িগ্রাম পৌছে গেলাম। খলিলগঞ্জে নামলাম, আজাদ ব্যাগ নিয়ে ব্যস্ত। নেমে রিকশায় ওঠার পর দেখলাম আমার ফোন নাই। আজাদকে বলার সাথে সাথে সে গাড়ির পিছনে ছুটতে লাগল,যেহেতু এলাকার গাড়ি তাই ভেবেছিলাম পাবো ফোনটা,কিন্তু না পেলাম না ৬/৭ মিনিটের ব্যাবধানে আর পেলাম না, নাম্বার বন্ধ।

এরপর মাঝে আমার আরও অগোছালো কাহিনী আছে যেগুলো পরে একসময় লিখব।
এখন লিখছি ১৫ দিন আগের ঘটনা, আমার পার্স কোথায় ফেলেছি জানি না, স্যালারি উঠানোর জন্য ব্যাংকে যাব, সেই পার্সে আমার চেকবই, টাকা, কাগজপত্র,আমার পছন্দের সোনার আংটিসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু কোথায় হারিয়েছি, কবে হারিয়েছি আমি নিজেও জানি না। শুধু এইটা জানি আমি বড্ড বেশি আনমনা, বেখেয়ালী। তবু্ও আজাদ কিছুই বলে না, একটা হাসি দিয়ে বলে যা হারাবার তা হারাবেই। আরেকটা কথা প্রায় ১৫ টা ফোন আমার এখন পর্যন্ত ইউজ করা, তার মধ্যে হারিয়েছেই ৬ টা, কিছু আঁছাড় খেয়েছে আর কিছু এমনি নষ্ট। এখনকার ফোনটা আব্বু গত রমজান মাসে কিনে দিয়েছে। তাই এইটা একটু বেশি যত্ন করি, আর ফোনটা এখন পর্যন্ত আপাতত ভালো আছে। তবে ফোনটা হাত থেকে পরলেই আমার অবচেতন মনই একটা কথা মুখ দিয়েই বের হয় কথাটা হল,ও মাই গড,আমার দামী মোবাইল 🤪🤪🤪আর মনে পরে থ্রি ইডিয়েটস মুভির একটা ডায়ালগ,মেরে ১০ রুপিয়া ঘড়ি হা হা হা🤪🤪🤪🤪

এই হল, এলেোমেলো আমি, তবে যতযাইহোক এভাবে আমার আমিতেই একাকার হয়ে  হাসিটা মুখে এখনো লেগে রাখি । এটাই আমার রহস্য❤️❤️❤️।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ