আমার যত কল্পনাঃ (কল্পনা-০৮)

শামীম চৌধুরী ৪ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০১:১৯:৪১পূর্বাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য
কল্পনা-৮

রহিম হাসপাতাল থেকে ফারাহকে বাসায় নিয়ে এসেছে। সবাই এখন রহিমের বাসায় ফারাহ’কে ঘিরে। বানু ও রাহিমের মা’কে ফারাহ নিজ উদ্দোগে তার বাসায় নিয়ে আসে। কদ্দুস বয়াতীর কথা স্মরন হওয়ায় রহিমের মা অরাজি ছিলো ছেলের বাসায় যেতে। কিন্তু ফারাহ’র অনুরোধ,আকুতি-মিনতি ও শ্রদ্ধাভরা ভালোবাসায় মলিন হয়ে রহিমের বাসায় আসতে বাধ্য হলো বানু ও তার মা’। জলিল শেখ ফাতেমাকে নিয়ে চলে যায় রাহিমের বাসায়।

দাদা আমাকে কল দিয়ে বিস্তারিত সব শুনে বললেন-
”জর্জ মিয়া তুই একটু খেয়াল রাখিস তোর ভাবীর।
আর বউ’মারে কইস হে যেন হের মায়ের বাড়ির কাওরে আইন্না রাহে।
আমার শরীরডাও ভালা না। বানুও আইবার চাইতাসে বাড়িতে জামাই বাবা’জীরে লইয়া। যত তাড়াতাড়ি পারোস তোর ভাবীরে বাড়িত পাঠাইয়া দে”।

ফারাহ’র মা-বোনেরাও দেখতে এসেছে। ফারাহ মায়ের বাড়ির লোকদের খুব একটা সময় না দিয়ে সার্বক্ষনিক শ্বাশুড়িকে নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো। এ ফাঁকে বানু সবার জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজনটাও নিজ দায়িত্বে করে নিলো। বানু সবাইকে একসাথে খাবারের জন্য ডাকছে। মেয়ের বাসায় বানু’র কর্তৃত্ব ও ফারাহ’র শ্বাশুড়িপ্রীতি খুব একটা ভালো চোখে দেখছেন না ফারাহ’র মা’।
রাহিমের মা’ নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে হাত ধরে বললেন আহেন বিয়াইন দুপুরে খাইবেন। কোন উত্তর না দিয়ে সোজা চলে গেলেন সারাহ’কে  সাথে নিয়ে নিজ বাসায়। রহিম শুধু বায়েস্কোপের পর্দায় সব দেখছে। মা’র এমন আচরনে কোন আক্ষেপ বা ভ্রক্ষেপ নেই ফারাহ’র। ভাবীকে দেখলাম নিজ হাতে ফারাহকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। বানু তার আদুরী ফাতুকে খাওয়াচ্ছে। রহিম ও জলিল শেখ পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। আমাকে দেখে সবাই বলে উঠলো জর্জ চাচা জলদি ওয়াশ ‍রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেন। আমারও পেটে ক্ষুদা ছিলো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওদের সাথে ভাত,আলুভর্তা, ডিম ভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুরে খেয়ে ‍তৃপ্তির ঢেঁকুর দিয়ে বললাম ”আলহামদুলিল্লাহ” ।

ফারাহ’র চোখে-মুখে ফুঁটে উঠেছে কেমন যেন একটা অপরাধী অপরাধীর ছাঁপ। ফারাহ অসহায়ের মত শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না। মাঝে মাঝে শুধু বলে উঠে মাগো, আামকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমাকে আপনার বানুর স্থানে জায়গা দিন।
ভাবীর সোজা সাপ্টা একটাই উত্তর তুইতো আমার বড় মাইয়া’ই।
পাগলী কুনখানকার। অহন একটু ঘুমা।

ভাবীকে বললাম দাদা তোমাকে বাড়ি যেতে বলেছেন।
কবে যাচ্ছো বাড়িতে?
বানু নাকি জামাই বাবা’জীকে নিয়ে বাড়িতে যাবে?
দাদার শরীরও তেমন ভালো যাচ্ছে না। তুমি দাদার সাথে কথা বলে নিও। আমার কথা শুনে ফারাহ চোখ খুলে উঠে বসলো। বললো চাচা, মা’ আর কোনদিন বাড়িতে যাবেন না। এখানে আমার সাথেই থাকবেন। বাবাকে আমি নিজে যেয়ে নিয়ে আসবো। ফাতেমার বাবাকে বলবো বড় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে বা পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে। আমরা সবাই বানু সহ এক সাথে থাকবো। চাচা আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির শেষ সময়টুকু যেন আরাম-আয়াসে কাটাতে পারেন সেই দোয়াটাই করবেন।
ফারাহ’র কথাগুলি শুনে ভাবীর চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। বউমা’কে দেখলাম ওড়না দিয়ে এক হাতে সেই চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
ভাবী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন-
“হে আল্লাহ তুমি মহান”।
(চলবে)
0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ