আমার যত কল্পনাঃ (কল্পনা-০৭)

শামীম চৌধুরী ১ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ০১:১১:৩৭পূর্বাহ্ন গল্প ২১ মন্তব্য

কল্পনা-০৭

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে ফারাহ। দূর্ঘটনার মাত্রা এতটাই মারাত্মক ছিলো যে,ফারাহ’র বাঁ হাতটা কেঁটে ফেলতে হয়েছে। ফারাহ’র বাবার বাসা থেকে তার মা-বোনরা ছুটে এসেছিলো হাসপাতালে। মেয়েকে দেখেও গিয়েছে। ফারহা’র সাথে সেই রাতে একজন সঙ্গী থাকার খুবই প্রয়োজন ছিলো । অবশেষে বানু সেই রাতে হাসপাতালে থেকে যায় ভাবীর কাছে।

জলিল শেখ বানুকে রেখে চলে আসে আমার বাসায়। পরের দিন গ্রামে যাবে শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে আনতে। কদ্দুস বয়াতী নিজে না এসে রহিমের মা’কে বলেন তুমি জামাই বাবা’জির সাথে চলে যাও। আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। আমি জর্জকে বলে দিবো সে যেন তোমার থাকার ব্যাবস্থা করে। কোন অবস্থাতে যেন রহিমের বাসায় না থাকো। ফারাহ’র আচরনে দাদা এতটাই মনঃক্ষুন্ন যে,নেহায়েৎ কর্তব্য পালন করাটাকেই যথেষ্ট মনে করছেন। ভাবীতো মা’। তাই মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারে না রহিমের বাবার সামনে।

রহিম ফাতেমাকে দিয়ে যায় আমার বাসায়। বলে যায় চাচা, শ্বশুড়বাড়ির লোকজনদের বলেছিলাম ফারাহ’র সাথে রাতে হাসপাতালে থাকতে। আমার শ্বাশুড়ি বললেন,সাবাহ’র বিয়ে, কারোই দম ফেলানোর সময় নেই। সবাই ব্যাস্ত। তুমি বাবা তোমার মা’কে একটু বলো, কয়েকটাদিন তার বউমা’র কাছে এসে থাকুক। তখন জলিলকে বলি বাবা-মাকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য। ফাতেমার জন্য ফারাহ’র সুস্থ্যতা ও তার পাশে আমাকে থাকতেই হবে চাচা। ফারাহ’র কিছু হলে ফাতুর যে কি হবে চাচা? বলেই হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলো।

দিনের বেলায় বানু হাসপাতালে থাকে। সন্ধ্যার সময় জলিল শেখ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে হাসপাতাল থেকে বানুকে নিয়ে যায়। রাতে রহিম মা’কে হাসাপাতালে নিয়ে আসে। দিন-রাত হাসপাতালেই থাকেন বউ আর শ্বাশুড়ি। আসার সময় বানু মা’কে একটি এয়ারটাইড বক্সে কিছু শুকনা খাবার দেয় । বাথরুম থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ ফারাহ’র জন্য নিজ হাতে করে যাচ্ছে বানু আর রাহিমের মা’ জননী। আমি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করেছি কোন ক্লান্তি ও অসহ্যতার ছাপ নেই দুজনের চোখে-মুখে। উনাদের সেবা যত্ন আবারো মনে করিয়ে দেয়

”মানুষ মানুষের জন্যে”।

বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। বাঁ হাতটা কাঁটার পর পঁচন ধরে। বানু নিজ হাতে রোজ সেই ব্যান্ডিজ খুলে পরিস্কার করে। অথচ তার মা’-বোনরা নাকে কাপড় গুঁজে ফারাহ’র সাথে দু’চারটি কথা বলেই চলে যায়। দিনে দিনে ফারাহ’র এখন অনুশোচনা হচ্ছে । সে বুঝতে পারছে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন কতই না আপন করে নিতে চেয়েছিলো তাকে। দুই একদিন পর পর ফারাহ’র মা,ভাই,বোন ও ভাবী আসে। কেউই তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে না তুমি সুস্থ্য হয়ে উঠছো বা উঠবে।

অথচ রহিমের মা’ প্রতি রাতে ফারাহ’র মাথা উনার কোলে নিয়ে চুলে হাত ‍বুলিয়ে বলে

বউ’মা আমি আছি না।

দেখবা কোন অালাই-বালাই তোমারে ছুঁইতেই পারবো না।
ভাবী ঢাকায় আসার পর ফাতেমাকে আমি বানুর বাসায় রেখে আসি। সারাদিন ভাবী ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। অথচ এই ভাবী তার নাতনী ফাতুকে একটু আদর করার জন্য,বুকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু ভাগ্য আজ কত সুপ্রসন্ন। চাহিদার আগেই সে ভাগ্য নিজে এসে আজ ধরা দিয়েছে রহিমের মা’র কাছে।

ফজরের নামাজ শেষে ফারাহ’কে দেখ-ভাল করে মাত্র চোখ লেগেছে রহিমের মা’র। উনি বলতেই পারবেন না কখন যে ঘুমে কাতর হয়ে শুয়ে পড়েছেন। হঠাৎ উনি পায়ের উপর শীতল ঠান্ডা অনুভব করায় চাদরটা আরেক পা দিয়ে টেনে আনতে গেলে ফারাহ’র মুখে পা লেগে যায়। তাকিয়ে দেখেন ফারাহ উনার দু’পা ধরে অঝোরে কাঁদছে। চোখের পানি পায়ের উপর পড়াতে ফ্যানের বাতাসে শীতল ঠান্ডা লেগেছে। রহিমের মা’ উঠেই বউ’মাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে

মাগো কি অইছে তোমার? তুমি এমুন করতাছো কে?

ফারাহ কোন জবাব না দিয়ে শুধু এইটুকু বললো,

মা’ আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমা না করলে আল্লাহ আামকে ক্ষমা করবেন না।
আমি পাপী মা’।
আল্লাহ আমাকে পাপের শাস্তি দিচ্ছেন।
এই প্রথম কদ্দুস বয়াতীর সহধর্মিনী তার পুত্রবধুর কন্ঠে মা’ ডাক শুনলেন।

(ছবিঃ প্রতীকি)
(চলবে)

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ