আমার যত কল্পনাঃ (কল্পনা-০৬)

শামীম চৌধুরী ২৬ জুন ২০১৯, বুধবার, ১২:২৩:৫৩পূর্বাহ্ন গল্প ২৬ মন্তব্য

কল্পনা-৬

মধুচন্দ্রিমা শেষে বানু তার নিজ সংসারে জলিল শেখের ভালোবাসায় বেশ ব্যাস্ত দিন কাটাচ্ছে। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর যত্নাদি, নিজের বাবা-মায়ের খেয়াল রাখা রহিমের বউয়ের সাথে যোগাযোগ সবই নিয়মিত ধারায় করে যাচ্ছে। বানুর শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী তাদের এক মাত্র পুত্রবধুকে পেয়ে মেয়ের জায়গায় স্থান দিয়ে পিতা-কন্যার সম্পর্কটা আরো মজবুত করেছে। কিন্তু, ফারাহ তার শ্বশুড় বাড়িতে এ সম্পর্কটা কোনদিনই অর্জন করতে পারেনি। জলিল শেখ ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া করে বানুকে নিয়ে এখন ঢাকাতেই বসবাস করছে। সকাল বেলায় জলিল শেখ অফিসে আসার পর, বানুকে এই হৃদয়হীন ঢাকা শহরে একা একাই সময় কাটাতে হয়। ভয়ও পায় কোথাও যেতে বা পাশের বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলতে।

কারন শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার সময় কানে কানে বলে দিয়েছিলো, ঢাকায় যারা থাকে তারা যন্ত্রচালিত দানব থেকেও ব্যাস্ত ও মায়া-মমতাহীন।

কোন অবস্থাতেই যেন কোন অপরিচিত লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে না তুলে।

বলা তো যায় না?

সামান্য লোভের জন্য যেন, আমরা আমাদের একমাত্র আদরের আদুরী মেয়েটাকে না হারায়। ঢাকাতে আসার পর থেকেই জলিল শেখ ছাড়া বানু এক কদম বাড়ির বাহিরে যায় না। এমনিতেই গ্রামে বড় হওয়া মেয়ে। তার উপর ঢাকা শহরের চাকিচিক্যতা বানুর কাছে অসহনীয় ও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সবসময় মনে হয় অক্সিজেনের নলটা বানুর নাকে লাগানো রয়েছে। মাঝে মাঝে রাতে জলিলকে বলে আমার কাছে তোমাদের এই স্বর্গ নগরীর ঘর-বাড়ী ফার্মের মুরগীর খাঁচার মত লাগে। তারপরও আমাদের ভবিষ্যত জীবন সুন্দর করে গড়ার জন্য। ভবিষ্যতদের জন্য কষ্ট করতেই হবে। আমাদের সামান্য এই কষ্টে যেন আমাদের সন্তানরা থাকে ”দুধে ভাতে”- অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর জলিল শেখের সেলফোনে রহিমের ফোন কল বেজে উঠলো। এ প্রান্ত থেকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই অপর প্রান্তে রহিম বলে উঠলো

জলিল, সর্বনাশ হয়েছে..!!

ফারাহ মানে তোমার ভাবী সড়ক দূর্ঘটনায় হাসপাতালে।

বানুকে ফোনটা দাও?

কিছু বুঝার আগেই জলিল বানুকে ফোনটা দিয়ে বললো দাদা কল দিয়েছেন। তোমার সাথে কথা বলবে। বানু রহিমের কাছ থেকে শোনার সাথে সাথে আ ল্লা গো বলে এক চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফারাহ’র দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয়র সাথে ফাতেমাকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলো কুমিল্লায়। রহিম বারংবার বারন করা সত্বেও ফারাহ মানতে রাজি না। এক কথায় রহিমের ইচ্ছার  বিরুদ্ধেই ফারাহ বাড়ি থেকে বের হয়। কাঁচপুর ব্রীজে উঠার আগেই ফারাহদের মাইক্রোবাসটি উল্টে নীচে পড়ে যায়। আল্লাহর রহমতে ফাতেমা বেঁচে যায় কোন রকম আঘাত বা দূর্ঘটনা ছাড়াই। তবে ফাতেমা নিশ্চুপ ও ভীত- সন্ত্রস্ত। দুইজন স্পট ডেথ। ফারাহ’র অবস্থা সংকটাপন্ন। পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে ফারাহ’দের। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে ফারাহ। চিকিৎসা চলছে। জলিলও প্রস্তুতি নিচ্ছে বানুকে নিয়ে  হাসপাতালে যাবে। আমাকে কল দিয়ে রহিম বললো চাচা আামার সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। আমি শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ভাবলাম

কদ্দুস বয়াতীকে জানাবো কিনা?

ভাবী স্বাভাবিক থাকতে পারবেন কিনা?

পরে আমার বউ বললো আগে তুমি যেয়ে দেখে আসো।

প্রিয় পাঠকগণ,

আমি হাসপাতালে রওনা হচ্ছি।

আপনারা আমাদের বউ’মার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সুস্থ্যতা দান করেন।

আমীন।

(চলবে)

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ