আমার প্রতিবেশী “লু”

রিমি রুম্মান ১৫ জুলাই ২০১৫, বুধবার, ০১:০৬:৫৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য

আমি যখন মেইন গেটে কোড নাম্বার চাপি বাইরে যাবো বলে, ঠিক সেই সময় বাইরে থেকে নাম্বার চেপে গেটটি খুলে দেয় প্রতিবেশী মিস্টার লু। আসা যাওয়ার পথে গেট খোলার এমন কাটাকাটি আমাদের মাঝে মাঝেই হয়। আমরা একে ওপরকে ক্রস করে যাবার সময় ইশারায় হাই, হ্যালো, কুশল বিনিময় করি। প্রচণ্ড শীতের সময়টাতে আমি যখন হেভি জ্যাকেট, কান টুপি, বুট জুতা আর হাতমুজা পরে বাইরে যাই, সেই সময় বাড়ির সামনের চওড়া ফুটপাতে মিস্টার লু আর ক'জন সঙ্গী সাথী নিয়ে হালকা পোশাকে ব্যায়াম করায় ব্যস্ত। আমায় দেখলে চেঁচিয়ে বলে, "তোমার ঠাণ্ডা বেশি, শিয়ালের মাংস খেলে ঠাণ্ডা লাগে না। দেখো না আমি কত হালকা পোশাক পরেছি।" আমি ইয়াক্‌ ইয়াক্‌ করতে করতে হেঁটে যাই...

 

লু মধ্যবয়স পেরিয়েছে অনেক আগেই। তবুও চঞ্চল, চটপটে। তাঁর হেঁটে যাওয়া দেখলে দূর হতে যে কারো মনে হবে সে হয়তো ওয়াকম্যানে গান শুনতে শুনতে মিউজিকের তালে তালে ড্যান্স করছে। কিন্তু আদতে তা নয়। স্বভাবসুলভ গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে মৃদু হেলে দুলে হাঁটে সে।

 

সপ্তাহের পাঁচদিন কাজ শেষে চেক নিয়েই বাসে চেপে রওয়ানা দেয় আটলান্টিক সিটি'র উদ্দেশ্যে। দু'দিন ক্যাশিনোতে থাকে, জুয়া খেলে। ক্যাশিনোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো বলতে গেলে ফ্রি সার্ভিস দেয়। কখনো হোটেল, মোটেল সুবিধা দেয়। এতে লু'র মত অনেকেই আকৃষ্ট হয়। দু'দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার রাতেই ফিরে আসে। ঈষৎ নিদ্রালু ফোলা ফোলা চোখের লু' কে দেখলেই বুঝা যায়, গত দু'দিনের জুয়া'য় সে হেরেছে কি জিতেছে।

 

আজ দুপুরে ঝুম বৃষ্টির সময়টাতে আমি যখন বিশালাকৃতির ছাতাটি মাথায় চেপে বাইরে যাচ্ছিলাম, দেখি লনের একপাশে ধীর স্থির মিস্টার লু। উচ্ছ্বাসে হেলে দুলে হেঁটে যাওয়া নেই। হৈচৈ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে, সেদিকে তোয়াক্কা নেই। কাছাকাছি হতেই বলি, চমৎকার বৃষ্টি হচ্ছে। লু ছোট বিষণ্ণ চোখ জোড়া তুলে তাকায়। চায়নিজদের চোখ এতো ছোট "ফুলস্টপ" টাইপের যে, সেগুলো'র ভাষা বুঝা কঠিন। কিন্তু সব সময়ের হাসি-খুশি, উদ্যমী লু'কে ঠিকই বুঝতে পেরেছি আজ। আমি বলি, "লু, মুলত ক্যাশিনো থেকে কেউ-ই জিতে আসে না।" লু আমার কথায় সায় দেয়। বলে, " ক্যাশিনো ক্যাশিনো করেই নাকি ওর জীবনে কিছু করা হয়নি... এমন ভুল আর করবে না... আর ভুলেও ওপথ মাড়াবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। বেচারা সারা সপ্তাহের মাইনে খুইয়ে এসেছে এবার। জানি, সামনের সপ্তাহে সে আবারো যাবে। নেশা এমন এক জিনিষ যা কাউকে ছেড়ে যেতে চায় না। বরং আরও বেশি করে জেঁকে ধরে।

 

## পরিশ্রম করে মানুষ যে অর্থ আয় করে, সেটাই তাঁর নিজস্ব। অন্য কোন উপায়ে আয়কৃত অর্থ কখনই তাঁর নিজের নয়। যেভাবে আসে... সেভাবেই ফিরে যায়।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ