আমাদের নগরী (৩-১)

রুহুল ২৯ জানুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার, ১০:৩৮:২৩অপরাহ্ন বিবিধ ৩ মন্তব্য

চারদিকে ধুন্দুমার কান্ড শুরু হয়েছে। লোকজন হৈ চৈ করে ছুটে পালাচ্ছে। পালাচ্ছে না শুধু রাস্তার টোকাইগুলো। এরা খুব মজা পাচ্ছে। এদের মাঝে কয়েকজন জুতা কুড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ভাবখানা এমন যে এরা সাফ গেম খেলছে। এটা পূর্বনির্ধারিত। হুট করে লোকজন ছুটে পালাবে,তাদের মাঝে নির্দিস্ট কয়েকজন দৌড়াতে দৌড়াতে পায়ের জুতা খুলে ফেলে রেখে যাবে। আগের থেকে তৈরী হয়ে থাকা ছেড়া জামা গায়ে দেওয়া কয়েকজন কিশোর কিশোরী সে জুতা কুরাবে। তাদের থেকে বাছাই বিচার করে প্রথমজন কে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। তারপর রৌপ্যমুদ্রা ব্রোঞ্জ। গিনেজ বুকে নাম উঠলেও উঠতে পারে। কিন্তু আসল ঘটনা তা না। মন্ত্রীর গারিতে হামলা হয়েছে। মন্ত্রীর গারির চালক এস এস এফ এর বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নিমাই ভট্টাচার্য আহত হয়েছে। হামলাকারীরা ইট পাটকেল ছুড়ছিলো। নিমাই অস্ত্র হাতে গারি থেকে বের হয়ে উল্টা পাকড়াও করতে চেয়েছিলো। পারেনি বেচারা। দরজা খুলে বের হবার আগেইল তার মাথায় ইট লেগেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল নেওয়া হবে বোধহয়, ঢাকা মেডিকেলের এম্বুলেন্স এসেছে বিকট সাইরেন বাজিয়ে। ঘটনাস্থলে প্রচুর র্‍্যাব আর পুলিশ উপস্থিত হয়েছে। কিছু সাংবাদিক ও জড়ো হয়েছে। দুইটা গরম পানির গারি দু গারি ভর্তি মিলিটারি পুলিশ ও আছে। লোকজন এদের দাঙ্গা পুলিশ নামেই চেনে। এরা দাঙ্গা লাগায় না থামায় তা না জানলেও মানুষ এদের দেখে পালায়। কেনো পালায় তা জানেনা। পুলিশের বড়কর্তা তানভিরুল হাসান কে ঘিরে সাংবাদিক দের ভীড় জমেছে। তিনি মনে মনে এদের উপর ক্রমাগত অভিশাপ বর্ষনে করে যাচ্ছেন। সাংবাদিক তো না এরা সাংঘাতিক। অল্প কথায় গুছিয়ে জবাব দিতে না পারলেই হলো। বেশী কথা এরা টেলিকাষ্ট করবেনা। আর অল্পকথায় পরিস্কার না বুঝাতে পারলে অন্যার্থ করবে। তার মাঝে এমন সব প্রশ্ন যে অল্পকথায় উত্তর. দেওয়া ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার্। একটু দূরে দাড়িয়ে আছেন অমলেশ। তিনি ফেরিওয়ালা চা বিক্রেতার কাছ থেকে রং চা নিয়েছেন। আর তাতে বিস্কিট ডুবিয়ে বেশ আরাম করে খাচ্ছেন। দেখতে এমন মনে হলেও অমলেশ ভীতসন্ত্রস্ত। পকেটে রিবলভার। পুলিশ চেক করলেই ধরা খাবেন। তিনি এসেছিলেন মন্ত্রী কে গুলি করতে কিন্তু হুট করে যে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। এমন আজব পরিস্থিতির সম্মুখিন ও কোনোদিন হয়নি রাজীব। যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি আচ করে এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। স্যার কাপ টা দেন। চা ওয়ালার এমন কথায় ঘোর ভাংলো অমলেশ। কাপটা দিতে দিতেই রাস্তার ডান পার্শ থেকে এই এই আওয়াজ ভেসে এলো। পকেটে হাত ঢুকাতে ঢুকাতে সেদিকে ঘুরে তাকালো অমলেশ। কলিজার পানি শুকিয়ে যাবার দশা হলো তার। কয়েকজন র্‍্যাব অফিসার হাত ইশারায় ডাকছে তাকে। কেমন যেনো গা গুলালো অমলেশের্। তার প্রতিটা হার্টবিটের আওয়াজ. শুনতে পাচ্ছে সে। চা ওয়ালা সেদিকে যেতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল অমলেশ। ওরা তাহলে চা ওয়ালাকেই ডাকছিলো। পরক্ষণেই একটি বাস এসে দাড়াল। অমলেশ কিছু না ভেবেই বিদ্যুৎ গতিতে বাসে উঠল। বাসে উঠেই বাধলো বিপত্তি। বাসের সামনের কাচে কিছুই লেখা নেই। কোথা থেকে এসেছে কোথায় যাবে এই বাস তার ধারণা পাবার কোনো রাস্তা নেই। বাস কন্ডাকটার ভাড়া চাইতে এলে কি বলবে কত টাকা দেবে সে। আজ তো সূর্য দেবতা কে প্রণাম ঠিক মতই করেছিলো। তবে আজ এমন কেনো হচ্ছে। তার থেকে দু একটা স্টপেজ পেরিয়ে কোনো একটাতে নেমে গেলেই হলো। নামার সময় কন্ডাকটার বা হেলপারের হাতে ১০/৫ টাকা ধরিয়ে দিলেই হবে। এর মাঝেই মগবাজার গেটে আহেন , মগবাজার গেটে আহেন বলে চিল্লানোর শুরু করেছে হেলপার্। নেমে গেলো অমলেশ। উত্তর দিকে পাচ মিনিট হাটলেই তার বাসা। টং দোকান থেকে সিগেরেট জ্বালিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলো অমলেশ। বাসায় প্রবেশ করেই মেজাজ খারাপ হলো অমলেশের।

ব্যাটা শিবশংকর রামের মূর্তির সামনে উবু হয়ে বসে এসেছে। এই মূর্তিটা ফেলে দেওয়া উচিত। কষ্টিপাথরের মূর্তি। অনেকবার ফেলে দিতে গিয়েও ফেলা হয়নি তার। এটা অমলেশের চুড়ি করা জিনিস। এটার পাশে আরো একটা মূর্তি ছিলো রাধাকৃষ্ণের মূর্তি।কৃষ্ণের হাতে ছিলো বাশি,লীলাময়ী ভঙ্গিতে কৃষ্ণের ঘাড়ে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে রাধা। অপরুপ সুন্দর ছিলো মূর্তিটা , কিন্তু মন টানেনি অমলেশের। যেদিন মূর্তিটা চুরি করেছে সেদিন সুপারি খেতে গিয়েছিলো অমলেশ। এই মূর্তির গুনেই বেচেঁ যায় সে। সুপারিদাতা ছিলো রহমান পাশা। আর সুপারি ছিলো রহমান পাশার স্ত্রী নন্দিনী রায়। মুসলমান রহমান পাশা জাত ধর্ম ভুলে এই রমনীর প্রেমে পড়েন। শুধু প্রেমে পড়লে ঠিক ছিলো যদি সেটা সাধারণ হত। রহমান পাশা শুধু প্রেমেই পড়লেন না , এমন ভাবে পড়লেন যে তার হাত পা ভেঙ্গে ফেললেন। বিয়ে নামক এক অসুখের সমুদ্র বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। আর হারালেন পিতা প্রদত্ত স্বীকৃতি , মায়ের আদর আলিশান বাড়ি আর বিত্ত। নন্দিনী রায় মূর্তি পূজা, রহমান কে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা সহ ভিবিন্ন ভাবে পাশার জীবন দুর্বিষহ করে তুললেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই অমলেশ কে সুপারি দিলেন রহমান পাশা। সুপারি খেতে গিয়ে অমলেশ দেখলেন নন্দিনী রায় উবু হয়ে বসে আছেন। ব্যাগ থেকে ভোজালি টা বের করে কোপ দিলেন অমলেশ। ব্যাস কেল্লা ফতে। কোনো শব্দ ছাড়াই কার্য সমাধা। ফেরার সময় মূর্তি টা নিয়ে আসে সে। পুলিশ এটাকে ডাকাতি বলে চালিয়ে দেয়। কয়েকদিন বেশ হম্বিতম্বি করে। আদালতে রহমান পাশা সাক্ষি দেয় যে মূর্তি দাবি করে তার কাছে উড়ু ফোন এসেছিলো। হলুদ মিডিয়া মূর্তি নিয়ে প্রচার করে মনগড়া গল্প। পুলিশ খুন আর ডাকাতি ছেড়ে ব্যাস্ত হয়ে যায় মূর্তির পেছনে। এ মূর্তি কি করে ফেলে দেয় অমলেশ।

এই তৃতীয় পর্ব টি অনেক বড়। এখানে সংক্ষেপিত করা হলো। এর পরের টুকু আগামীকাল এই সময়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। 🙁

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ