আবর্তন

নীরা সাদীয়া ১৫ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ০৬:২৪:১৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

একটা সময় আমি পরীক্ষা দিতাম, শিক্ষকরা গার্ড দিতেন, এখন আমি গার্ড দেই, ছাত্ররা পরীক্ষা দেয়। আমি তাদের খাতা সই করি, নীরবে পরীক্ষা দিতে বলি। সবার দিকে নজর রাখি যেন হলে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে। তারা হলের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে, "ম্যাডাম আসি?...ম্যাডাম আসবো?" এসবই একসময় আমি করেছি,আমরা করেছি...

আমার কাছে মনে হয় জীবনটা একটা বৃত্তের মত। সবকিছুই ঘুরেফিরে আসে, ফের ঘুরতে থাকে। আজ আপনার পৌষ মাস তো অপেক্ষায় আছে মাঘ মাস। আজ মেঘ তো কাল রোদ্দুর, ঝলমলে আকাশ। আলো ছায়ার এই খেলায় কখন যে জীবন ফুরিয়ে যায়, টেরই পাই না।

ছোট্ট এই জীবনে কত কথা, কত ব্যাথা, কত গল্প আর হাসি কান্না! আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষের জীবন একেকটা জীবন্ত উপন্যাস। এই উপন্যাসের ভবিষ্যত মানুষটি নিজেও জানে না। গল্পের চরিত্ররা জানে না, কী হতে চলেছে। জানেন শুধু লেখক, তিনি নিরলসভাবে লিখে যান আপন খেয়ালে।

একটা জীবনে অনেক কিছু পাওয়া হলেও একটা না পাওয়া আপনাকে আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কিন্তু ঐ একটা জিনিস আমাদের অধরাই থাকে। প্রতিনিয়ত ঐ সুখটা ছাড়াই আমরা সুখে আছি এমন অভিনয় করে যেতে হয়। ভেতরের দীর্ঘশ্বাস নিজেকেও জানতে দেয়া হয় না, জেনে চুপ থাকে কেবল ভেতরেরও ভেতরে খুব গভীরে আরেকটা সত্তা। সেই সত্তারও একটা ধারন ক্ষমতা আছে। যখন তা আর নিতে পারেনা , তখন বাড়তিটুকু পাঠিয়ে দেয় "আশা" নামক আরেক সত্তার কাছে। আশা কেবল আশায় আশায় রাখে...মন নিজেও জানে এই আশা সত্যি হবার নয়। তবুও মানুষ বাঁচে, আশায় বুক বাঁধে...

জীবন সীমিত, কি হবে মানুষে মানুষে অন্তর্দ্বন্দ রেখে? উঁহু, আমি বলি ভিন্ন কথা! জীবন সীমিত। তাই যা কিছু তোমায় আঘাত করে তা কেটে বাদ দাও আর আনন্দে বাঁচো। কার জন্যে করবে বিলাপ? কে তোমায় শোনাবে আশার বানী? নিজের সুখী হবার মন্ত্র অন্যের হাতে নেই, আছে নিজের ভেতরে, একান্তে, গহীনে, খুব গভীরে ...

গ্রহনে চাঁদ, সূয্যি ঢাকা পরলেও আবার গ্রহণ শেষ হলে আগের মতই দীপ্তি ছড়ায়। গ্রহণ যেমন সূর্য বা চাঁদের আলো নেভাতে পারে না, তেমনি হাতে গুনা কতিপয় লোকে সত্যিকার অর্থে কারো ক্ষতি করতে পারে না। বরং তারা ক্ষতি করতে গিয়ে আরও উপকার করে বসে নিজের অজান্তে!

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ