নিশিত রাত্রি বিনুর হতকান্ড দেখে রাঘব আর সইতে পারছে না। রাস্তার পাশের জঙ্গল হতে একে একে ধেয়ে আসছে ভয়ংকর অদ্ভুতরকমের শব্দ।

দুজনের হাতে নেই টর্চলাইট।

ভূতেরা এখনি চাইলে তাদেরকে নিঃসন্দেহে ধরতে পারে। রাঘব তার দাদুর কাছ হতে ভূত ধরার যে মন্ত্র শিখেছিল তা অনেকাংশ ভুলে গিয়েছি।

যদিও খানিটা মন্ত্র মুখস্থ আছে তা দিয়ে কোনমতেই ভূতকে ধরা যাবেনা। তাই রাঘব মন্ত্রপূত দ্বারা ভূতকে বশ করতে পারছে না। রাঘবের মনের এমন ভাবনা ভূত আগে থেকে সব জানতে পারে।

হরিবাবু হঠাৎ খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে বিনু ও রাঘব দুজনি বাগানবাড়িতে নেই।

এ কথা শুনে হরিবাবু চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন!

না জানি আজ কি উপায় হয়।

এতো রাত্রি দুজনের কোন খোঁজ খবর নেই।

হরিবাবু আর দেরি না করে আপন গিন্নী হিন্দুবালার একমাত্র ভ্রাতা লালমোহনকে পাঠালেন বিনু ও রাঘবের খুঁজ নিতে।

হঠাৎ আকাশ ভেঙ্গে পড়লো জমিদার হরিবাবুর মাথায়!

লালমোহনকে পাঠিয়ে বেশ চিন্তিত।

মাঝেমধ্যে সে যখনতখন ভবঘুরে হয়ে কোথায় থেকে কোথায় বেরিয়ে পড়ে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

লালমোহন ভুলক্রমে কোথাও হারিয়ে গেলে আপন গিন্নী হিন্দুবালার অনেক কথা শুনতে হবে তারও যে কোন হিসাব নেই।

এক কথায় হরিবাবু মস্ত বড়ো চিন্তার ফাঁদে পড়লেন। লালমোহনকে অনেকবার হারিয়েছেন।

জামাইবাবু ও শ্যালক দুজনি রসাত্মক লোক বটে। লালমোহন সারাক্ষণ হরিবাবুকে জামাইবাবু জামাইবাবু বলেই বেড়ায় আর পেটে তেল মর্দন করে দিনটা কাটায় লালমোহন।

হরিবাবু কোষ্ঠকাঠিন্যতে দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে পীড়িত।

প্রতিদিন পেটে তেল মর্দন ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই। ডাক্তার নীলমণি ঘটক আর আপন গিন্নী হিন্দুবালার ভ্রাতা,হরিবাবুর সুখেদুঃখের শ্যালক লালমোহন ছাড়া হরিবাবুকে বিশেষ পথ্য দেওয়ার উপায় কারো ছিলো না।

এসব নিয়ে আপন গিন্নী হিন্দুবালা কখনো তেমন একটা মাথা ঘামাতেন না।

হরিবাবুর বয়স অনেক হলেও ভোজনপটু ছিলেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এক সাবাড়ে পনেরো থেকে কুড়িকতক রুটির সাথে খাসির মাংস দিয়ে পেট ভরে নিতেন। এসব খাবার দেখে লালমোহনের বড্ড আফসোস হতো যদি জামাইবাবুর মতো সে উদর ভরে খেতে পারতো।

লালমোহনের এমন পাকা চোখ দেখে হরিবাবু বলতেন শুনো হে শ্যালক আমার এমনিতে কোষ্ঠকাঠিন্য, ঠিকমতো করে ঘরবার করতে পারি না।

তোমার রোজ রোজকার এমন চোখ ফুড়ানোতে যেন আমার পেটের কোন দুর্গতি না হয়ে পড়ে আগে বলে দিলুম।

জামাইবাবু এমন করে বলবেন না বলে দিলুম।

এসব বদভ্যাস আমার নেই।

না হলে তো বেশ শ্যালাবাবু তুমি যে আস্তা একটা হতচ্ছাড়া। লালমোহন বলছে শুনে রাখেন জামাইবাবু কথায় কথায় হতচ্ছাড়া বললে দিদিকে সব বলে দিবো বলছি।

ওহে হতচ্ছাড়া হারামজাদা শ্যালক আমার একটু ফুর্তি আমোদ,তামাসা বুঝো না শালা অকালকুষ্মাণ্ড।

কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে জামাইবাবু ও শ্যালকের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো।

আবার সহজে ঝগড়া মিটিয়ে যেতো। জয় সবসময় ছিলো লালমোহনের। হরিবাবু আপন গিন্নী হিন্দুবালাকে  বড্ড ভয় পেতেন।

একবার হরিবাবু লালমোহনকে সাথে নিয়ে মাঠে যান জায়গাজমি তদারকি করতে। গ্রামটি আনন্দপুর হতে সামান্য দূর হলেও পদব্রজে যেতে হয়,কিছু জায়গা নৌকাযোগ করে।

তখন ছিলো চৈত্রের বিদগ্ধ রৌদ্র হাঁটতে হাঁটতে দুজনি ক্লান্ত। হরিবাবু সম্মুখপানে এগিয়ে চলছেন।

হঠাৎ করে লালমোহন হরিবাবুর পেছন থেকে উদাও হয়ে মাঠের একপাশের আমবাগানে গিয়ে কচি আম একে একে পাড়তে লাগলো।

বাড়ির গৃহস্থ দেখে তাকে গাছ হতে নামিয়ে আমগাছের গোঁড়ায় বেঁধে রেখেছে।

হঠাৎ করে পেছনপানে থাকিয়ে হরিবাবু দেখেন শ্যালক লালমোহন নেই।

পড়লেন বেশ ভারি চিন্তায়।

এদিক ওদিক খুঁজতে না পেয়ে পেছন পথে ফিরতে লাগলেন হঠাৎ লালমোহনের কান্না শুনতে পেয়ে হরিবাবু মনেমনে ভাবছেন আপন শ্যালক আজ আম চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।

জমিদার বাড়ি থেকেও হতচ্ছাড়া শ্যালকের চুরিটা যায়নি আজও।

আর এ বলে নিজের কপালে থাপ্পড় দিয়ে বলছেন এ হতচ্ছাড়া হারামজাদা কুলদ্রোহী একে একে আমার ইজ্জত ডুবিয়ে এবার আমার জমিদারী নাম ডোবাতে বসেছে।

আর নয় অনেক হয়েছে এইবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বাড়ি পাঠাতে পারবেন না!

কেননা হরিবাবু আপন গিন্নীকে ভাত কাপড়ে দিয়ে যেমন সারাজীবন রাখবেন বলে কথা দিয়েছেন।

তেমনি আপন গিন্নী হিন্দুবালার কথায় সম্মতি প্রকাশ করে শ্যালক লালমোহনকে নিজ বাড়িতে রাখবেন বলে কথা দিয়েছেন হরিবাবু।

অবশেষে আম চুর আপন শ্যালক লালমোহনকে দু একটা চড় থাপ্পড় দিয়ে হরিবাবুর কাছে হস্তান্তর করেছে বাড়ির গৃহস্থ।

জামাইবাবু ও শ্যালক দুজনি বাড়ি ফিরলেও সকল দোষ চেপে দেয় লালমোহন হরিবাবুর উপর।

এ নিয়ে দ্বিতীয় কথা বলার উপায় নেই হরিবাবুর।

রাত্রি অনেক,

চারদিকে দেখে লালমোহন বাড়ি ফিরে এসে বলছে জামাইবাবু জামাইবাবু শুনছেন বিনু ও রাঘব কে কোথাও খুঁজে পাইনি।

আসলে লালমোহনের এসব ডাহা মিথ্যা কথা। সে বিনু ও রাঘবের খুঁজ করেনি।

বিনু ও রাঘব দুজনি একে অন্যের হাত ধরে ভূতের ভয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে দেখতে পায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ তা দেখে বিনু ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কোন উপায় না দেখে রাঘব বিনুকে কাঁধে করে নিয়ে আসে বাগানবাড়ি। ভোর প্রায় হয়ে গিয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি বিনুর।

জ্ঞান না ফিরলেও বিনুর নাড়ির গতিমতি ঠিকঠাক আছে।

হরিবাবু খবর পেয়েই তাড়াতাড়ি চলে আসলেন বাগানবাড়িতে।

কানের মধ্যে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে হরিবাবু রাঘবকে বললেন সবঠিকঠাক আছে। ওকে ভূতে ধরেছে!

এ কী জমিদার মশাই আপনি বললেন আপনার পাড়ায় কোন ভূতটুত নেই। আজ বলছেন আপনি বিনুকে ভূতে ধরছে তাহলে আপনি ভূতের সর্দার?

এ কথা শুনে রাঘবের সাথে জমিদার হরিবাবুর ঝগড়া বেঁধে গেলো।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ