শীতের সকাল।
ঘণ্টাখানিক পর বিনুর জ্ঞান ফিরেছে।
চারদিক জুড়ে ঘন কুয়াশা।
দিঘীর পাড়ের বকুলগাছের ডালে বসেবসে বিনু নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজছে। আর পানকৌড়িদের সাঁতার দেখতে দেখতে বেলা কাটিয়ে দিচ্ছে অনেকটা।
কখনো দু একটা ঢিল ছুড়ে মেরে তাড়িয়ে দেয় পানকৌড়িদের।
রাঘব বারান্দা সামনের শিউলিতলায় বসে হরিবাবুর ভূতময় ছবি আঁকছে। ছবির চোখমুখ জুড়ে ভূতের প্রতিচ্ছবি।
রাঘবের আঁকা ছবিতে হরিবাবুকে দেখতে প্রায় ভূতপ্রেতের মতো লাগছে। বিনু এমন ছবি দেখতে পেরে অবাক হয়ে রাঘবকে বলছে এ তো হরিবাবু ভূত!
ঠিকি বলেছিস বিনু। আজ হরিবাবুর সাথে একটা কাণ্ড করেই ছাড়বো। হরিবাবু বাড়িতে এতসব ভূতপ্রেত পালিয়ে রেখেছেন তার একটারও পাত্তা দেন না।
হরিবাবুর চোখে আঙ্গুল দিতে হলে প্রথমে হরিবাবুর আপন শ্যালক লালমোহনকে বশে আনতে হবে।
যেমন করে কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়।
রাঘব ও বিনু দুজনি মিলে ছবিখানা একটা ফ্রেমে বেঁধে রেখেছে। লালমোহন বাগানবাড়ি আসলে তাকে আগে ভালো ভালো খাবার খাওয়াইয়ে নেবো।
লালমোহন আসার পর বিনু ও রাঘব তাকে বুঝিয়ে বলে এ ছবিটা হরিবাবুর ঘরের মধ্যে রাখার জন্য। লালমোহন সম্মতি প্রকাশ করে।
জমিদার বাড়ির খাসকামরায় রোজই তিন চারটে নালিশের বৈঠক বসে। এসব নিয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকেন।
অন্যদিনের ন্যায় আজও নালিশিতে বসলেন হরিবাবু।
প্রথম নালিশ হরিবাবুর বাড়ির বিড়ালকে নিয়ে!
বিড়ালের গায়ের রঙ কালো, চোখ ইয়া বড়ো বড়ো, দেখতে প্রায় ভূতের মতো।
বিড়ালটি রোজ গ্রামের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই রান্নাঘরে প্রবেশ করে চুপেচুপে মাছের ভাজি গলাধঃকরণ করে। এ বিড়ালটির জন্য গ্রামের লোকজন সবাই অতিষ্ঠ।
জমিদার হরিবাবু আপন শ্যালক লালমোহনের পর এবার প্রথমবারের মতো বিড়ালের বিচারে করতে বসলেন।
গিন্নীকে ডেকে বলছেন হরিবাবু ওগো শুনছো ?
কী হলো গো, বলো?
আমাদের কালোবিড়ালটা কোথায়?
জানিনা, কখন কোথায় যায় তার খবর কী আমি রাখি?
শুনো গো গিন্নী শুনো,
আজ হতে বিড়ালটাকে বেঁধে রেখো।
কী?  কী?
কানেই যে শুনো না বলছি বিড়ালটাকে বেঁধে রাখতে।
হিন্দুবালা বলছে বাড়িতে ঢের কাজ তারমধ্য আমি বিড়াল বেঁধে রাখবো তা পারবো না আমি।
ও গো গিন্নী,
কথায় কথায় মুখের উপর না না করো না বলছি।
তোমার কী যাবে আর আসবে গিন্নী!
তোমার আদরের ভাই লালমোহন মাঝেমধ্যে একেকটা কাণ্ড করে বসে তাঁর মধ্যে আজ বাড়ির কালোবিড়াল আরেকটা কাণ্ড করে বসেছে।
তোমার আদরের সোহাগী ভাই শেষপর্যন্ত বাড়ির কালো বিড়ালকে চুরিবিদ্যা করতে শিখিয়েছে।
শুনেন,
আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলো না বলে দিলুম।
হয়েছে হয়েছে গো গিন্নী।
মুখেমুখে এতো কথা তোমাকে মানায় না। আমার আর কিন্তুু সহ্য হচ্ছে না গো গিন্নী।
কখন জানি গলায় কলসি বেঁধে ডুবে মরি!
এদিকে লালমোহন চুপেচাপে হরিবাবুর ভূতময় ছবি বিছানার একপাশে রেখে দিয়েছে।
খাসকামরায় একে একে বিচার শেষ হলে হরিবাবুর কালোবিড়ালকে বেঁধে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয় আপন শ্যালক লালমোহনের উপর।
এ কথা হিন্দুবালা জানলে উপায় থাকবেনা হরিবাবুর।
দুপুর হলে হরিবাবু লালমোহনকে ডেকে বলেন আজ বাজার হতে ভালো ভালো মাছ কিনে আনতে।
আর লালমোহনকে বলছেন আজ হতে বাড়ির কালো বিড়ালটি ভালোভাবে বেঁধে রাখার জন্য।
এ কথা শুনে লালমোহনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। জামাইবাবু শুনেন আমি বাজারে গিয়ে ভালো ভালো চেয়ে মাছ আনতে পারবো,
কিন্তু বিড়াল বেঁধে রাখতে পারবো না।
হরিবাবু ধমক দিয়ে বললেন শালা অকালকুষ্মাণ্ড বিড়ালটাকে চুরিবিদ্যা শিখিয়েছিস আবার বলছিস বেঁধে রাখতে পারবেনা।
শালা আমার হতচ্ছাড়া।
লালমোহন এসব কথা তার আপন দিদি হিন্দুবালাকে বললে হরিবাবু সাথে তুমুলঝগড়া বেঁধে যায় হিন্দুবালার সাথে।
হরিবাবু তাঁর আপন গিন্নীকে বলছেন ওগো গিন্নী সবকিছুতেই তুমি চেঁচিয়ে উঠো কেন?
উঠবো না বুঝি।
আমার আদরের একমাত্র ভাইয়ের প্রতি অত্যাচার তা কখনো মেনে নেওয়া যায়না।
কিভাবে মেনে নিবে গো গিন্নী।
সারাটা জীবন আপন কান্না কেঁদেই গেলে গো আমার কান্না কবে কাঁদবে তুমি?

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ