জমিদারবাবু সর্বদা শৌখিন লোক। মস্তিষ্ক ভরা তাঁর কুটকৌশলে। তদ্রূপ বাড়ির কালো বিড়ালটাও ধূর্ত ও ফিজিক্যালি।
আকাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন।
রাঘব অনিবার্ণ প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে আছে আজ ভূত ধরে ছাড়বেই। কত প্ল্যানিং, প্লানিং করেও বিড়াল ধরা যাচ্ছেনা আর ভূত ধরা তো দূরের কথা। কালো বিড়াল লুকিয়ে আছে একটা বটগাছের মগডালে। তাকে তো খুঁজেই পাচ্ছে না কেউ। রাঘব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই বটগাছের উপর উঠে দেখবে আসলে ওটা ভূত কি না!
বিনু জানে রাঘব যা বলে তাই করে।
যেখানে তন্ত্রমন্ত্রের ইতিহাস আছে সেখানে তান্ত্রিক ও ভূতের আনাগোনাও আছে। আনন্দপুরে পূর্বে থেকেই ভূতপ্রেতের ইতিহাস ঐতিহ্য ভরপুর। বিশেষ করে জমিদার হরিবাবুর বাড়ি। বাড়িটা যে রহস্যে ডাকা রাঘব তা বুঝতে পেরেছিলো। তাই নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে পড়ে আছে ভূতের পেছনে। কিন্তু বেশ কয়েকটা দিন পার হয়ে গিয়েছে ভূতের দেখা নেই। বিনুও দেখতে চায় ভূত গুলো কেমন। কিন্তু রাত হলেই যে তার গলার জল শুকিয়ে যায় ভূতপ্রেতের ভয়ে।
রাঘব সকলের কথায় অবাধ্য হয়ে উঠে পড়লো  বটগাছের উপর। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পরও ভূত পাওয়া গেলো না। এত রাত্রি সবাই যারযার মতো করে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে দু একজন ব্যতীত।
লালমোহনের খবর নেই সে বাড়ি গিয়ে ঘোর নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পড়লো। কোন সাড়া শব্দ নেই।
হরিবাবু ভূতের যন্ত্রণায় কলি কালের দুর্গম সময় পার করছেন। বিছানার এপাশ ওপাশ জুড়ে কাতরাচ্ছেন আর চিৎকার করছেন। এসব আর আপন স্ত্রী হিন্দুবালা ও লালমোহনের কানে যাচ্ছে না।
নানা জনের নানা কথায় জমিদারবাড়ি ডুবতে বসেছে।
বিনু মনে মনে ভাবছে ভূত দেখা যায়না, ধরা যায়না, কথাও বলা যায়না তাহলে দিবারাত্রি কেন রাঘব ভূতের পেছনে ছুটছে! এমন কথার উত্তর আজও পর্যন্ত রাঘব দেয় নি।
মিটিমিটি তারা আর কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই আকাশে নেই। বিনু ও রাঘব দুজনি বাগানবাড়ি এসে নিজের ঘরে শুয়ে আছে। শীত ঝাঁকিয়ে পড়েছে পুরো পাড়া জুড়ে।
হঠাৎ করে আচমকা পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে রাঘব লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে।
জানালার একপাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দেখছে ভূত কি না অন্যকিছু। মাথান্যাড়া আর কালো চাদর দিয়ে মুখ মুড়িয়ে লিচু গাছের ডালে বসে লিচু পাড়ছে। লোকটা দেখতে বড্ড অদ্ভুত রকমের। হাত দুটি লম্বা। এক ডালে বসে অন্য ডালের লিচু পেড়ে বস্তায় রাখছে। রাঘব বিনুকে না বলে সে একা বসে দেখছে লোকটি কী করছে।
আনন্দপুরের পাশের গ্রামের নাম হচ্ছে কাঞ্চনপুর।
এ গ্রামে এক বিখ্যাত ডাকাতের বসবাস তার নাম পটল ডাকাত। দেখতে প্রায় সুঠাম দেহের অধিকারী ও গায়ের রঙ কালো। আশপাশ গ্রামের অনেক লোক তাকে চিনে।
ডাকাতি করা তার মস্তবড় একটা বিদ্যা। এ বিদ্যায় আজও সে হারে নি। এমন আদিবিদ্যায় তার সংসার চলে।
আজ হানা দিয়েছে জমিদার হরিবাবুর বাগানবাড়ির লিচুবাগানে। রাঘব বিনুকে ডেকে বলছে এই বিনু দেখ, দেখ ডাকাত এসেছে। আজ ডাকাত ধরতে হবে।
কিন্তু পটল ডাকাতকে কেউ ধরতে পারেনা।
বিনু ও রাঘব দুজনি ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করতে লাগলে। পটল ডাকাত লিচু গাছ থেকে লাফ দিয়ে লিচু নিয়ে পালিয়েছে।
পাড়ার লোকজন পটল ডাকাতের কথাশুনে কেউ আর বের হলো না। চারদিক জুড়ে ভোরের কুয়াশায় পুরো পাড়া ঢেকে আছে। বিনু ও রাঘবের ভূত ধরা,ভূত দেখা ও চোর ধরা তিনটাই কাজ ব্যর্থ। দুজনি ক্লান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।
লালমোহন হেসে বলছে তোমরা দুজন কালরাত্রি বেলা অনেক পরিশ্রম করেছো জমিদার জামাইবাবু তোমাদের জন্য অনেক মাইনা উপহার দিবেন বলে আমায় পাঠিয়েছেন। দুজনি সন্ধ্যাবেলা দেখা করতে যেও।
ইদানিং বিনু সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে।
কারণ জানতে চাইলে বলে পকেটে দিয়াশলাই আর সিগারেট থাকলে না কি ভূতপ্রেত তাকে এসে আর ধরবে না। এমন কথা শুনে রাঘব হাসছে আর বলছে এতো বুদ্ধি মাথায় কেমন করে রাখিসরে।
চল এবার জমিদারবাড়ি। জমিদার হরিবাবু ডাকছেন কেন। হয়তো ডাকাত তাড়িয়েছি এরজন্য মনে হয় কিছু টাকাপয়সা দিবেন। এ কথাশুনে বিনুর মন আনন্দে ভরপুর। তাছাড়া পূর্বে লালমোহন বাগানবাড়িতে এসে দুজনকে ভয় দেখিয়ে বলছে পটল ডাকাত সুযোগ পেলে তাদের উপর আক্রমণ করতে পারে। এ কথা শুনে দুজনি বিষণ্ণ। না জানি পটল ডাকাত খুন করে বসে। বিষণ্ণতা মাথায় নিয়ে রাঘব ও বিনু রওয়ানা দিলো জমিদারবাড়িতে। হরিবাবু কিছুটা সুস্থ হলেও ভালোমন্দ  খেতে পারছেন না। দিনদিন স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। হরিবাবু তাদেরকে দেখে পঞ্চমুখে প্রশংসা করতে লাগলেন। আর বলছেন তোমাদের জন্য আমার বাড়িটা রক্ষা পেলো পটল ডাকাতের হাত থেকে।
না হলে সবকিছু সাবাড় করে নিয়ে নিতো।
আপন স্ত্রী হিন্দুবালাকে ডেকে বললেন দুজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করে কিছু টাকাপয়সা হাতে দিয়ে দিতে।
হরিবাবু বিনুকে বলছেন দেখো বিনু তুমি চাইলে পুনরায় এ বাড়ির নাম ফিরিয়ে আনতে পারো। কেননা তোমার জন্য আজ আমার বাড়ির নাম ডুবতে বসেছে।
বিনু যথাজ্ঞা বলে সম্মতি প্রকাশ করলে হরিবাবুর মনে যেন এক স্বস্তি আসে।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ