ঘোর অমাবস্যা,
তারমধ্যে ঘড়ির কাটায় বারোটা বেজে পনেরো মিনিট।
লালমোহন শালুক কাপড় পরে তৈরি হচ্ছে বাগানবাড়ির অশ্বত্থ গাছের নিচে বসে তার জামাইবাবুকে নিয়ে প্লানচেটের মাধ্যমে ভূতপ্রেতের আবাহন করতে।
চারদিক জুড়ে অন্ধকার নেই আকাশে তারারত্নের আনাগোনা। পুরো শহর ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন।
হরিবাবু ভিন্ন রঙের রঙ দিয়ে আবাহনী দাগ টানছেন।  লালমোহন প্লানচেটের আবাহনী শুদ্ধতার মন্ত্র দিয়ে পবিত্র করছে। অশ্বত্থ গাছের চারপাশ জুড়ে আছে পাঁচটি মোমবাতি। এমন এক আলো আঁধারি রহস্যছায়ায় খেলা করছে ভূতপ্রেতের অশরী আত্মা।
ভূতপ্রেতের আবাহনী দাগের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ দিকে। যাতে করে ভূতপ্রেতের অশরী আত্মা এ পথ দিয়ে ভেতরে আসতে পারে।
ছোট চতুষ্কোণ কাষ্ঠাসনবিশেষ জলচৌকির উপর প্লানচেট রেখে হরিবাবু ও লালমোহন একমনে স্মরণ করতে লাগলেন ভূতপ্রেতদেরকে।
আচমকাই থরথর করে কেঁপে উঠল জলচৌকি। আবাহনীতে নিশ্চয় ভূতপ্রেতের আগমন ঘটেছে।
চতুষ্কোণ কাষ্ঠাসনবিশেষ জলচৌকি খটখট করে ভয়ানক শব্দ করতে লাগলো। এমন শব্দে লালমোহনের চোখমুখ একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছে না জানি কখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
জলচৌকির পাশে রাখা কাগজ কলম।
খসখস শব্দে ভরে উঠতে লাগল কাগজের পাতা।
একে একে ভূতপ্রেতেরা প্রশ্ন করতে লাগলো,
কী চাস? কেন আমাদেরকে আবাহন করেছিস?
হরিবাবু প্লানচেটের সামনে রাখা কাগজে লিখছেন তোমরা আমার বাড়ি হতে চলে যাও,
তোমাদের উপদ্রবে আমার বাড়িকে জমিদারবাড়ি না বলে ভূতবাড়ি বলে লোকজন,
আমি নাকি তোমাদের সর্দার তাই সকলে আজকাল আমায় ভূতের সর্দার বলে ডাকে!
অদৃশ্য আবাহনী ক্রিয়া বিনু ও রাঘব লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। আনন্দপুরে এসে এমন অদ্ভুত কাণ্ড দেখতে পেলো দুজন, অবাক হয়ে আছে হরিবাবু ও লালমোহনের কাণ্ডকারখানা দেখে।
রাঘবের মনে প্রথম থেকে একটা ধারণা ছিলো হরিবাবু সত্যিই একজন ভূতপ্রেতের সর্দার। গভীর রাত্রি অদ্ভুত অদৃশ্য আবাহনী ক্রিয়া দেখে বিনুর হাত পা কাঁপছে।
রাঘব ছোটবেলা তার দাদুর মুখে শুনেছে প্লানচেটের মাধ্যমে পূর্বপুরুষের আত্মার খোঁজখবর নেওয়া হয়ে থাকে। প্লানচেটের আবাহনী দ্বারা জানা যায়
পূর্বপুরুষগণের আত্মার শান্তিকামনা হয়েছে কী,
তাঁদের স্বর্গলাভ হয়েছে কী, তাঁদেরকে পরজন্ম হয়েছে কিনা। এসব কিছু জানা হয়ে থাকে।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে হরিবাবু ও লালমোহন পূর্বপুরুষের আত্মার আবাহন না করে ভূতপ্রেতের আত্মার আবাহন করছেন!
হরিবাবুর এমন অদ্ভুত প্রশ্নে ভূতপ্রেতের অশরী আত্মা রাগান্বিত হয়ে স্টিমরোলার চালাচ্ছে তাদের উপর। লালমোহন ভয়ে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
এই প্রেতচর্চার আবাহনী আসরে আজ দুজনের প্রথম আবাহনী ক্রিয়া।
ভূতপ্রেতের এমন কাণ্ড দেখে হরিবাবু জলচৌকি উল্টে দিয়ে আবাহনী দাগ মুছে জল ছিটিয়ে দিলেন।
যাতে করে ভূতপ্রেতের অশরী আত্মা আর যেন ভয়ানক না হয়ে উঠে।
প্লানচেটের আবাহনী প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে হরিবাবু ও লালমোহন দুজনি বাড়ি ফিরতে লাগলেন।
দুজনের প্রচণ্ড জ্বর এসেছে।
এ যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
আবাহনী ক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর বিনু ও রাঘব দুজনি বাগানবাড়ি চলে গিয়েছে। আর তাদের মনের মধ্যে জাগছে ভিন্ন রকমের ধারণা।
হিন্দুবালা জানেননা তাঁর আপন পতি হরিবাবু ও আদরের একমাত্র ভাই লালমোহন গভীর রাত্রিতে অশ্বত্থ গাছের নিচে বসে বসে ভূতচর্চা করছে।
জানলে হয় তো উপায় থাকতো না জমিদারবাবুর।
বিনু ও রাঘব ভূত দেখুক আর নাই দেখুক তাদের মনে কিছুটা বিশ্বাস জেগেছে। ভূত আছে যা প্লানচেটের আবাহনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছে।
অমাবস্যার রাত কত যে ভয়ংকর। বাগানবাড়ির এক ঘর জুড়ে বইয়ের লাইব্রেরি। বইগুলো অধিকাংশ ভূতপ্রেতের ও রহস্যময় তান্ত্রিক সাধুদের তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে লেখা।
লালমোহন ও হরিবাবু দুজনের ঘাঁড়ে ভূতের বসবাস। জমিদার নাকি নানারকম ভূত নিয়ে লেখাপড়া করছেন তা কেউ জানেনা।
জমিদার হরিবাবু যে ভূতের সর্দার তাতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু ভূতের দেখা আজও অবধি পাননি তিনি।
তবে ভূতের সাথে যা কথোপকথন হয়েছে তা অদৃশ্যরূপে।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ