অর্থহীন

শুন্য শুন্যালয় ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ০৪:৩১:৪১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

বিশালাকার বাসের ভেতর যখন দেখলাম আমি একমাত্র যাত্রী, হুট করে শরীরের ভেতর একটা কালো পর্দার মতো পড়তে দেখলাম। সময়টা দিনের বেলা হলেও অবশ অনুভুতিটা সরছিল না।
ধর্ষনের খবর এখন আর আগ্রহ নিয়ে কেউ পড়েনা, কোনই নতুনত্ব নেই। মেমোরিতে এতো নাম জায়গা দেবার মতো আর কোন স্পেসও নেই। কয়টা মেয়ের নাম মনে রাখা যাবে? বাসের ভেতর এলকোহলিক মাতালদের থাবার ভেতর যন্ত্রণাকাতর সেই দূর্ভাগা মেয়েটার জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছিলো। আচ্ছা মেয়েটা কী বলেছিল শেষ মূহুর্তে? তোমরা আমার সাথে যা ইচ্ছে করো, আমাকে ধর্ষন করেছ, ধর্ষনের ভিডিও করেছ, চাইলে সেই ভিডিও আপলোড করে দাও এখুনি, তবু আমাকে তোমরা খুন করোনা, এমনটা বলেছিল কী? বলেছিল কী? দেখো তোমাদের কথা আমি কাউকে জানাবো না, তোমাদের পুলিশে ধরিয়ে দেবোনা, তবুও তোমরা আমাকে মেরে ফেলোনা? তোমাদের এই কদর্য স্মৃতিটা আমি মেমোরি থেকে মুছে দেব, আমাকে এই পৃথিবীর সুন্দর থেকে সরিয়ে দিওনা। আমাকে হত্যা করোনা?
আমার পিচ্চি বুবুটা সেদিন বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরলো একা বাসে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম ঈদের এই সময়ে ঢাকা ফিরতে দেরী হবেনা তো? আমার ভয়টা হয়তো বুঝতে দেইনি ওকে। আমি জানি ওর মোবাইলে ডাটা নেই, তবুও বললাম ফিরেই যেন আমাকে মোবাইলে মেসেজ করে। বুবুর মতো এমনি করেই কী সেই মেয়েটার ফিরে অফিস করবার তাড়া ছিলো পরদিন? নাকি ঘরের একান্ত বিছানাটায় সারাদিন গড়িয়ে নেবার ইচ্ছে ছিলো?
রাত আর দিনের পার্থক্যে প্রকৃতি পাল্টায়, মানুষ পাল্টায়। তবু কিছুটা সাহস নিয়ে এখানে চলতে পারি। এখানে অন্যায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নয়। এখানে আমাদের দেশের মতো কয়েদীদেরকে অন্যায়ভাবে পেটানোর নিয়ম নেই, মারতে মারতে জেলখানায় হত্যার ঘটনা নেই, ক্রসফায়ার নেই। তবু আইন আছে। কী সেই আইন যার কারনে এখানে আমাদের দেশের মতো যথাচ্চার নেই? শিশু, তরুনি, বৃদ্ধা কেউ ধর্ষনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা দেশে এতো এতো শাস্তির ধরন থাকতেও। সে দেশের ৮০% মানুষ যখন মানবতার জন্য কাঁদে, তখন আমি ভাবি একটি মৃত্যুর কথা। একটি মৃত্যু কিংবা হাজার মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য কী আসলে? সেই হতভাগী ঘৃণা আর যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যু বরণ করা ব্যক্তির কাছে!!

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ