রাজু আর মীম দুই ভাই বোন । রাজু ছেলেবেলা থেকেই একটু ডানপিঠে । পড়াশোনায় মনোযোগ নেই । মন পড়ে থাকে সবসময়ই খেলার মাঠে । একই ক্লাসে বারবার ফেল করে সে লজ্জায় স্কুলে যায় না । সারাদিন খেলা আর সন্ধ্যায় ওর নামে হাজার টা নালিশ আসে । রাজুর বাবা একা একা ছোট ব্যাবসা সামলাতে হিমসিম খেয়ে যান । তারপর আবার প্রতিদিন এই নালিশ শুনতে তাঁর আর ভালো লাগেনা । একদিন রাগ করে ছেলেকে ঢাকা পাঠিয়ে দেন । ঢাকায় এসে রাজু মহা আনন্দে আছে । কাউকে জবাবদিহী করতে হয় না সম্পূর্ণ স্বাধীন । শুধু ছোট বোন আর মায়ের কথা মনে হলে একটু খারাপ লাগে ।

রাজু পড়াশোনায় খারাপ হলেও মীম পড়ালেখায় অনেক ভাল । রাজুর বাবা মনে করেন ছেলেকে পড়াশুনা করাতে পারেননি তাঁতে কি মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করবেন ।

কয়েক বছর.....................

আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে মীম এ প্লাস পেয়েছে । বাবার আনন্দ দেখে কে এলাকার সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়েছেন । মীম মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে ।

কয়েক মাস পর ..........................

ঘর ভর্তি মানুষ । মাঝেমাঝে রাজু আর ওর মায়ের কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । ঠিক ধরেছেন । রাজুর বাবা আর নেই । বাবার নিথর দেহের পাশে বসে রাজু প্রথম আবিষ্কার করল বাবার প্রতি ভালবাসা । যে লোকটাকে জীবিত অবস্থায় কোন দিন ভালবাসতে ইচ্ছে হয়নি আজ তাকেই বেশী ভালবাসতে মন চাইছে ।

পিছনের ঘটনা ......

মীম এসএসসি পাশ করার পর । কলেজে যাওয়ার পথে কয়েকটা বখাটে যুবক ওকে বিরক্ত করত । এর মাঝে কলেজের একটা ছেলের সাথে তাঁর ভাল সম্পর্ক সৃষ্টি হয় । ছেলেটার ভয়ে মীমকে আর কেউ বিরক্ত করত না । এরপর একদিন মীম ছেলেটির হাত ধরে পালিয়ে যায় । তাঁর আর কোন খবর পাওয়া যায় নি । পরে জানা যায় ঐ বখাটে ছেলেরা মীমের প্রেমিকের ভাড়া করা লোক ছিল । ছেলেটি একটা বড় রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত তাই ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি । এই ঘটনার দুইদিন পরই রাজুর বাবা হার্ট এট্যাকে মারা যান । বোধকরি এতবড় মানুষিক আঘাত তাঁর সহ্য হয়নি ।

এরপর দু বছর গেল রাজু বিয়ে করেছে । একটা ছেলেও আছে । রাজুর সাথে তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক ভাল না । ঢাকায় একটা কাজে রাজু আসে । অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয় । সেই পুরনো আড্ডায় যায় রাজু ।

দোস্ত নতুন একটা মাল এসেছে সালা পুরা একের মাল । চল আজ রাতে যাই ।

না রে এখন আর ঐসব ভাল লাগে না ।

এই দেখছিস সালায় কি কয় । ওর নাকি এসব ভাল লাগে না । শুনলাম বিয়ে করেছিস । বউ আছে তো নাকি ..........
রাজুর পৌরুষে আঘাত লাগে । চল যাব ।

এই তো বাপের বেটার মত কথা ।

নতুন একটা মেয়ে , রাজুর চোখ চকচক করে ওঠে ।

বন্ধু তাহলে ঠিকঠাক মত কাজ শুরু কর । আমরা গেলাম । গুড নাইট ।

মেয়েটা খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । রাজু আস্তে আস্তে খাটের দিকে এগিয়ে যায় । এসব মেয়েদের এত লজ্জা থাকার কথা না , যা হোক সমস্যা নেই নতুন তো তাই মনে হয় ।

এই যে এত ঢং করার কি আছে ঘোমটা টা সরাও তোমার চাঁদ মুখ খানা দেখি ।

ভাইয়া ............

মীম তুই এখানে !!!!!!!???

আমার স্বামী আমাকে এখানে বিক্রি করে দিয়ে গেছে ।

রাজুর মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল । নিজের প্রতি এতটা ঘৃণা সে কোনদিন ও বোধ করেনি । এক মূহুর্তে রুম থেকে বেরিয়ে রাজু মাতালের মত টলতে লাগল ।

পরদিন রাজুকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাওয়া যায় ।মৃত্যু কিভাবে হয়েছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । হয় আত্মহত্যা নয়তো সড়ক দূর্ঘটনা ।

রাজুর এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর জন্য তবে কে দায়ী ?
সে নিজে , পরিবার নাকি আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা ??

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ