অদ্ভূতুরে//

বন্যা লিপি ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৮:৩৩:০৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১২ মন্তব্য

ছোট খালার ছেলের বিয়ে। হলুদের আগে আমাকে বলা হলো "তুই পায়েস আর পুডিং করে দিবি" বললাম,রামপুরা থেকে বহন করে আনতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হবে পারবোনা।হলুদের আগের রাতে আপনার বাসায় থেকেই করে দেবো। খালা তাতেই খুশি। কিচেনে একাই ছিলাম।বেশ অনেকটা সময়। বাসা ভর্তি আত্নীয় স্বজন।আমার মা সহ বড় খালার ছেলে, মেয়ে, ছেলের বউ এবং ছোট খালার ননদের ছেলে মেয়ে।বড় খালার ছেলের বউও আছে। বড় খালার মেয়ে নিশু আমার সমবয়সী।"কিরে... তুই একা একা ভূতের মতো কাজ করছিস্? " আমার সমস্যা আছে। একমনে কাজে থাকলে হঠাৎ কেউ কথা বলে উঠলে চমকে উঠি।হাতে থাকা জিনিস পত্র পরে যায়। পায়েসের গুড়োদুধ গোলাচ্ছিলাম।ছলকে পড়লো খানিকটা।নিশু ভাবলো এ আমার ঢং। পাত্তা দিলাম না।খেজুড়ে আলাপ জুড়ে দিলো। মুকুল(ছোট খালার ননদ) এসে দেখে গেলো এবং আমার কাজের ধরন দেখে এটা সেটা প্রশ্ন করে সন্তষ্টি না পেয়ে চলে গেলো।গুটুর গুটুরের এক পর্যায়ে হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে স্টোর রুম,সার্ভেন্ট বাথরুম, ওয়াশিং মেশিন রাখা আলাদা রুমের দিকে পেছন ফিরে তাকালাম। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই দেখি, নিশুও সেদিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবো ভেবে না পেয়ে নিশুকে বললাম ------মনে হলোনা কেউ দৌঁড়ে এসে উঁকি দিয়েই সরে গ্যালো? নিশুঃ তাইলে তুইও দ্যাখোস্ এরকম? " কয় কি?  মনে মনে ভাবলাম, কাহিনী এখানে এগোতে দেয়া যাবেনা। আগে কাজ শেষ করে নেই। ভয়ে বুকের ধুকপুকানী শুরু হতে ভুল করলোনা। হাত কাঁপা শুরু আগেও এ ফ্লাটের ঘটে যাওয়া অদ্ভূতের কাহিনী মনে পড়ে গেলো।ছোট খালার একমাত্র ছেলে শাওনের সাথেই ঘটেছিলো অদ্ভূতুরে কাহিনী।২০০৬০ স্কোয়ারফিটের  ফ্লাটের রুম গুলো একটা আরেকটা থেকে দূরত্বের তুলনায় বড় বেশি দূর মনে হয়।একেকটা দরজা বন্ধ হবার পরে একেকটা আলাদা জগতের মতো।শাওনের ঘরটা একেবারে একটা কর্নারে, তার পাশের ঘরটাই দুই বোনের।আর তারো পরে ছোটখালা খালু'র।বাসায় একটা সার্বক্ষনিক। উঠতি বয়সী যুবতি মেয়ে নিয়োগ দিয়েছেন তখন মাত্র পনেরো দিনের মতো হয়েছে।কিচেনের মেঝেতে অনায়াসে দরজা লক্ করে রাতে ঘুমে বিভোর থাকে হাত পা ছড়িয়ে নিজের মতো করে।

এর আগে দু'রাত ঘুম ভেঙে বাসার সবাইকে জাগিয়ে তুলেছে শাওন ভয় পেয়ে। ঘুম ভেঙে গ্যাছে কাজের মেয়েটার ডাকে।চোখ খোলার পরে ভেতর থেকে লক্ করা দরজা হা করা খোলা দেখতে পেয়েছে। যে যার ঘর শোবার আগে লক্ করে ঘুমাতে যাবার নিজ থেকে না খুললে কে খুলবে এসে? প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। কয়েকদিনের ব্যাবধানে শাওন আবারো মধ্যরাতে চিৎকার করে যখন সবাইকে ডাকছিলো। ওর কন্ঠস্বর এরুম থেকে ও রুমে পৌঁছায়নি একটুও। মোবাইল ফোনের সাহায্যে খালুকে ডেকে তুললেন। দু'বোন,মা,বাবা সবাই শাওনের ঘরে এসে দেখে, ঘামে ভিজে গ্যাছে পুরো শরীর।চোখ দুটো ঠিকরে বের হতে চাইছে যেনো। কাঁপছে থরথর করে। কি হয়েছে জানতে চাইতেই, বাসার কাজের মেয়েটার খোঁজ করলো শাওন।----এত রাতে ও আমার ঘরে কেন আসছিলো? ওকে জিজ্ঞেস করো তো?

খালা অবাক। খোঁজ করতে গিয়ে কিচেনে গিয়ে দেখলেন লক্ তো ঠিকই আছে! নিজ হাতে চাবি নিয়ে লক্ খুলে মেয়েটাকে ডেকে তুলে প্রশ্ন করা হলে, আগা মাথা কিছুই মেয়েটি বুঝতে পারছেনা বললো।কোনো ভাবেই সম্ভব ছিলো না, মেয়েটার কিচেনের দু'দিকের দরজার লক্ খুলে বাইরে বেরোবার।তাহলে? শাওনের বর্ননায় , হঠাৎ মাথায় হাতের ষ্পর্শে এবং কানের কাছে মেয়েটার কন্ঠস্বরে ঘুম ভেঙে জেগে গিয়েছিলো। চোক খুলে তাকাতেই দরজা দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যেতেও দেখেছে শাওন।প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে কিছুক্ষন গলা দিয়ে আওয়াজ তুলতে পারেনি। বোধ ফিরতেই সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে ডাক দিয়েছিলো রিংকি,হৃদি,আম্মা, আব্বা করে। কারো কান পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছায়নি।

খালার বড় মেয়েটার সাথেও প্রায়ই ঘটেছে কিছু ব্যাখ্যাহীন ঘটনা। মনে পড়লো বলে আমি ভয়ে কাঠ। নিশুর নিজস্ব বর্ননা শোনার পর বললাম, তোর অনেক সাহস রে নিশু!!!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ