রাতের খাবারের সময় আমরা অতিথিদের আপ্যায়ন করছিলাম। পাতে এটা সেটা তুলে দিচ্ছিলাম বউ, শাশুড়ি মিলে। সুন্দর পারিবারিক আবহ। ভদ্রলোক খানিক আবেগপ্রবন হয়ে বললেন, উনিশ বছর যাবত তিনি তাঁর মা'কে দেখেননি। মা এখনো বেঁচে আছেন। বৈধ কাগজ পত্র সংক্রান্ত সমস্যা তাঁর। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কথাগুলো বলার সময় চোখজোড়া ছলছল করছিলো। অতঃপর মাথা নিচু করে নিরবে খাবার শেষ করলেন। নৈঃশব্দ্যে ছেয়ে থাকলো খাবার টেবিলের চারিপাশ কিছুটা সময়...
সকালে ছেলেকে নিয়ে কোচিং যাবার সময় প্রতিবেশী মেয়েটি আমার সাথে যায়। তাঁরা একই কোচিং এ পড়ে। ছেলেমেয়েদের নামিয়ে দিয়ে আমরা দুই মা একাকী ফিরবার সময় কখনো গল্প করি। কখনোবা গান শুনি। গাড়িতে গান বাজছে__ কতদিন দেখি না মায়ের মুখ...। নিরবতা ভেঙ্গে দু'চোখ মুছতে মুছতে তিনি বললেন, তাঁর বারো বছরের একমাত্র মেয়েটির জন্মের পরপর কিছু শারীরিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বিধায় ফ্লাই করা, দীর্ঘ ভ্রমন করা নিষেধ করেছে ডাক্তার। বারো বছরেরও অধিক সময় তিনি তাঁর মাকে দেখেননি। অতঃপর বাকিটা পথ আমাদের আর কোন কথা হয়নি। গাড়ির ভেতরটা অদ্ভুত এক বিষণ্ণ নৈঃশব্দ্যে ছেয়ে ছিল...
"মা'কে দেখিনা অনেকদিন হয়" __ কথটি বলার সময় সন্তানদের পৃথিবী থম্কে থাকে কেন ? কেন ভেতরে বাইরে নৈঃশব্দ্যে ছেয়ে থাকে ?
যারা বাবা-মা'য়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে___ তাঁরা কতোই না ভাগ্যবান, তাই না ?
৩০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ইচ্ছে করলেই পৃথিবীর যে কোন স্থানে বসবাস করতে পারি আমি,আমার পরিবার।
কেবল মাত্র মা এর স্নেহের কারনে সব চিন্তা বাদ দিয়ে মায়ের কাছে থাকি
এখনো মায়ের আচলে খাবার পরে হাত মুছি আমি
এর চেয়ে বড় সুখ আর শান্তি কি আছে?
আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান।
লেখাটি পড়ে এখন আবার এটি মনে হল।
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
বাস্তবতার কারনে মা’কে ছেড়ে দূরে থাকতে হয় অনেককেই। তাঁরা নিরুপায়। আপনি ভাগ্যবান। আপনার মা’কে সালাম।
অলিভার
সত্যিই ভাগ্যবান আমরা, যারা পরিবার, আপনজন এবং বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে রয়েছি।
শুভ কামনা 🙂
রিমি রুম্মান
ভাল থাকবেন পরিবারের সকলকে নিয়ে। সম্পর্কগুলোর যত্ন নিয়ে। শুভকামনা।
আজিম
আমার স্ত্রীর বড়ভাই নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। তিনিও এমনকি তাঁর মায়ের মৃত্যুর সময়ও কাগজপত্রের ঝামেলার কারনে দেশে আসতে পারেননি।
বড়ই কষ্টের এসমস্ত।
রিমি রুম্মান
কাগজপত্র থাকার পরও অনেকে বাবা-মা’র অসুখের সময়টাতেও অনেকে দেশে যেতে পারে না। কোন না কোন কারন সামনে এসে দাঁড়ায়। বাস্তবতা বড় নির্মম। ভাল থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
এই একটি জায়গা যার বিকল্প হয়নি,হবেও না।
যারা কাছে থাকেন তারা অবশ্যই ভাগ্যবান।
রিমি রুম্মান
ভাগ্যবানরা সবাই কিন্তু সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নশীল হয় না। ভাল থাকুক সকলের বাবা-মা। ভাল থাকুন আপনিও।
অরণ্য
যখন থেকে আমার জন্মদিন জানি বা ঐ দিনে একটু হৈ চৈ করি, তখন থেকে আমি আমার কোন জন্মদিনে আমার মাকে পাইনি। এবার পেলাম সারাটা দিনই মা’র সাথে ছিলাম। আমার মা’র কাছে জন্মদিন মানে “ও! ঠিক আছে বাবা। দেখে শুনে চলিস।” এবার মা আমাকে একটা শার্ট দিয়েছে অফিসে পরে যাবার জন্য। দারুন মজা শার্টটা পরে, যেন মা আমার সাথেই আছে। বলছে “বাবা, মাথা গরম করবি না। সব চাকরিই এরকম বাবা।” নিজেকে খুব লাকি মনে হয় এবং হচ্ছে।
রিমি রুম্মান
মায়েদের মনে কত অজানা শঙ্কা সন্তানদের নিয়ে। মা’কে আগলে রাখুন, যেমনটি তিনি আপনাকে আগলে রেখেছিলেন শিশু বয়সে। যেমনটি আগলে রাখছেন এখনো পর্যন্ত।
স্বপ্ন
বাবা মা এর সাথে থাকা যেন স্বর্গের মাঝে থাকা।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। এমন স্বর্গ ক’জনার ভাগ্যে জুটে ?
খেয়ালী মেয়ে
হুমমম আমরা যারা এখনো বাবা মায়ের কাছাকাছি আছি তারা অনেক ভাগ্যবান–
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন বাবা-মা’কে নিয়ে। অনেক অনেক ভাল।
ব্লগার সজীব
ভালোবাসি বাব মা কে।ভালো লাগলো আপু আপনার লেখা।
রিমি রুম্মান
আমার ছোট্ট অনুভুতি। ভাল লাগে জেনে ভাল লাগলো আমারও। ভাল থাকুক আপনার বাবা-মা। ভাল থাকুন আপনিও।
সীমান্ত উন্মাদ
আমার দুনিয়া একটাই আমার বাবা এবং মা। এই দুইজন আমার পাশে তো আমি পৃথীবির শাহেনশাহ আর যদি কখনো একটু দূরে ও যায় তবে আমি ফকির।
আপনার অনুভূতির প্রকাশে অনেক অনেক ভালোলাগা রেখে গেলাম আপু। শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।
রিমি রুম্মান
আপনার বাবা-মা ও লাকি। কেননা এমন করে ক’জন সন্তান বলতে পারে তাঁদের বাবা-মা’কে নিয়ে ?
শুন্য শুন্যালয়
বড্ড অসহায় বোধ করি এমন লেখা পড়ে। কিছু মন্তব্যের ভাষা পাইনা। একটাই প্রশ্ন মনে আসে, সবকিছু ছেড়ে কেন এসেছি? নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছি কোন আনন্দ পাবার আশায়!!
রিমি রুম্মান
আমরা ইচ্ছে করে আসিনি। নিয়তি, বাস্তবতা আমাদের নিয়ে এসেছে। মা নামের একটি মাত্র অক্ষর মানুষকে কতটা আবেগপ্রবন করে তুলে অজান্তেই। ভাল থাকবেন। শুভকামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
আকাশটা কি বিষণ্ণ! এমন সময়গুলো বড়ো একাকী করে দেয়।
ইচ্ছে করে যদি চলে যেতে পারতাম দেশে বাপি-মামনির কাছে।
আপনার লেখা পড়লে মন জানি আরোও কেমন করে!
রিমি রুম্মান
আমার বাবা-মা বেঁচে নেই। শাশুড়ি এক যুগেরও অধিক সময় এই বিদেশ বিভূঁইয়ে আমাদের কাছে। এটিও কি কম ভাগ্য আমাদের ? সৃষ্টিকর্তাকে অনিঃশেষ ধন্যবাদ।
ইমন
হুম 🙂
রিমি রুম্মান
হুম, ভাল থাকুন। শুভকামনা জানবেন।
লীলাবতী
আপনার এমন লেখা পড়ে আদ্রতায় ছেয়ে যায় মন।
রিমি রুম্মান
আমাদের জীবনে বাবা-মা যে কি, কতটা … সেটা যার নেই সে যে ভাবে উপলব্দি করবে, অন্যরা সেভাবে করবে না হয়তো। তবে এটা নিশ্চিত জানি, তাঁদের আমরা সবাইই কত টা -ই না ভালবাসি।
মরুভূমির জলদস্যু
যারা বাবা-মা’য়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে তারা ঐ বিষয়টা বুঝতে পারে না।
রিমি রুম্মান
খুব কম মানুষই বুঝতে পারেন । সেই কম মানুষের মধ্যে এই সোনেলাতেই পেয়েছি বেশ ক’জনকে। ভাল থাকুন। শুভকামনা।
জিসান শা ইকরাম
এই ধরনের লেখায় আপনাকে সোনেলার তরফ হতে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদানের সুপারিশ করলাম।
রিমি রুম্মান
আমার মা প্রচুর পড়তেন। কখনো নিউজ পেপার। কখন অন্য কিছু। আমার লেখাগুলো যদি পড়ার সুযোগ পেতেন, কতই না ভাল হত। এখন যেমন শাশুড়ি পড়েন। আবেগপ্রবন হয়ে পরেন। পুরনো স্মৃতিচারণ করেন। চোখ মুছেন। বাবা-মা’কে নিয়ে লেখাগুলো কতটা গভীর থেকে উঠে আসে সে কথা আর না-ই বলি…