অচিন গাছ।

রিতু জাহান ২২ মে ২০১৭, সোমবার, ০৯:৪২:২১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২০ মন্তব্য


ইতিহাস ও প্রাচীন সব জিনিস আমার খুবই প্রিয়। এক কথায় এসব প্রাচীন সব কিছুতেই আমার দুর্বলতা । আর তার সাথে যদি জড়িয়ে থাকে অলৌকিক কিছু তবে তা খুবই ভাল লাগে। বর্তমানে বরের পোষ্টিং সূত্রে কুড়িগ্রামে আছি। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার টগরাইহাঁট জয়দেব হায়াৎ নামক স্থানে এই গাছটি আছে। এই গাছটি কবে থেকে এখানে আছে তা কেউ বলতেই পারে না। বিগত বেশ কয়েক প্রজন্ম থেকেই এই গাছটি এখানে। এই গাছের নামও কেউ বলতে পারে না। এই গাছের বিভিন্ন ডালের পাতায় আছে ভিন্নতা। কথিত আছে, কোনো এক কালে, এখানকার এক লোক ভারতের কামরুকামাক্ষা অর্থাৎ যেখানে মন্ত্র টন্ত্র যপ করা হয় বেশি সেখানে যায় দেখতে। সেখানে সে দেখতে পায় যে,ওখানে পুরুষ লোকের সংখ্যা খুবই কম। তার কারণ হলো, পাশের জঙ্গল থেকে নির্দিষ্ট একটি তিথিতে সিংহের গর্জন ভেসে আসত এবং সেই গর্জন যখন পুরুষের কানে যেতো তখন সে পুরুষের লিঙ্গচ্ছেদ হয়ে যেতো। তাই সেই সব তিথিতে ঐ স্থানের নারীরা তাদের পুরুষদের একটি গর্ত করে তার ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে জোরে জোরে ঢাক বাজাত, যার যা আছে তা দিয়ে জোরে শব্দ করতো, জোরে জোরে গীত গাইতো যাতে সেই সিংহের শব্দ তাদের কানে না পৌছায়। তবুও ওখানকার পুরুষের সংখ্যা একেবারে কমেই যেতে লাগলো। এই লোক যখন ওখানে গেলো সেখানকার নারীরা তাকে আর ফিরে আসতে দিতে চাইছিল না। কিন্তু তিনি সেখানে থাকতেও চাচ্ছিল না। যতবারই সে পালিয়ে আসতে চায় গোলকধাঁধার মায়ার জালে আটকা পড়ে। একদিন সে ঋষি মতো এক লোকের কাছে গিয়ে অনুনয় বিনয় করে বলে তার দুঃখের কথা। সে দেশে ফিরে আসতে চায়। ঋষি তাকে পরামর্শ দেয়, পাশের জঙ্গলে গিয়ে এই বিশেষ গাছটিকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলতে হবে সে কোথায় যেতে চায়। লোকটি রাতের আঁধারে জঙ্গলে গিয়ে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে তার ইচ্ছের কথা বলে, গাছটি তাকে চোখের পলকেই এনে এখানে ফেলে দেয়। গাছটিও থেকে যায় তখন থেকে এখানে।

আমি দুই বাচ্চাসহ গাছটি দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানকার মানুষের মুখে শুনলাম এসব কাহিনী। একটা ঢিবির মতো জায়গার উপরে গাছটি। শোনা যায় আগে আরো উঁচু ছিল এই ঢিবিটি। এই গাছটির চারদিকে বাঁধাই করা। যাকে বলে ইট সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে রাখা। তবে এই বেদির উপরে ওঠাও কিন্তু সম্পূর্ণ নিষেধ। আমি জানতাম না, তাই জুতা পরেই বেদির উপরে উঠে গাছের পাতা ধরে দেখতে চাইলাম। গাছের কিছু পাতা পাইকোড় গাছের মতো। এখানে ছবি তোলাও নিষেধ। গাছের পাতা ছেড়াও সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। কথিত আছে, কেউ একজন এই গাছের পাতা ছিঁড়েছিল পর মুহূর্তে সে প্রচন্ড জ্বরে ভুগে পরদিনই মারা যায়। এমনি আরো কিছু কথিত কাহিনী আছে।  এই গাছের পাশেই আছে কয়েকটা মন্দির ও দানবাক্স। এখানে বিশ্বাস মতে মনে মনে কেউ কিছু মানত করে টাকা ফেললে তার মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। তবে ইচ্ছে হতে হবে সৎ।

যাই হোক,আমরা মনে মনে বিস্ময় হয়ে এসব বিশ্বাসে বিপুল শক্তিতেও আলাদা স্বাদ গ্রহণ করি। এগুলো আমাদের অন্তর্দৃষ্টির এক বিশ্বাসও হয়ত। আমরা ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যতো প্রকৃতিক স্থাপনা দেখেছি তার সবই এই বিশ্বাসমতে সৃষ্টি। আমরা আমাদের জানার ইচ্ছেতে জ্ঞান বলে এমন কিছু দীপ্তিময় কাহিনী রচনা করি, যা সহস্র সহস্র বছর ধরে নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। অতীতের এসব শত শত প্রাণময় ছবিতে আমাদের হৃদয় পূর্ণ হয়। তবে এসব কিছুকে অতীতের জীর্ণ কুসংস্কার বলে উপেক্ষা করাটাও আমাদের ভুল। এসবের উপরেই আমাদের সংস্কৃতি জড়িত।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ