হরন

রোকসানা খন্দকার রুকু ২১ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার, ০৮:২২:৫৯পূর্বাহ্ন রম্য ৮ মন্তব্য
  1. আমি তৌহিদ, আর্জেন্টিনার একনিষ্ঠ সাপোর্টার। আমার বউ ব্রাজিলের সাপোর্টার। বউ সারাক্ষণ মাষ্টারী করে, মানে আমাকে পড়ায় ( বাই দ্যা ওয়ে তিনি সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষকও)। তাই বলে ব্রাজিলের মাষ্টারী? নেইমারের এই ভালো, সেই ভালো, ওটা ; এটা! কান পেকে গেলেও কিছু করার নাই, সংসার টিকিয়ে রাখতে এবং সুখী হতে কম কথা বলা কিংবা চুপ থাকার বিকল্প নেই।

আমার চুপে, বউ ভেবেই নিয়েছিল আমি দল বদলে ফেলেছি। আমিও তাকে তোয়াক্কা না করে খেলার সময় দুটো টি- শার্ট  কিনে ফেললাম। আর বৌকে নির্দেশ দিলাম বাকিসব কাপড় গুছিয়ে ইস্ত্রি করে তুলে রাখতে। যথারীতি বৌ খুশি মনেই তাই করেছে। তখন বুঝতেও পারিনি বউ এমন শয়তানী পেটে নিয়ে সকাল বিকেল আমার কাছে চুমুর বায়না করে।

খেলার পুরো সময়টা জার্সি গায়ে অফিস করবো বলেই ঠিক করলাম। সরকারী চাকুরী বলে রক্ষা না হলে বেসরকারী চাকরিতে তো জার্সি গায়ে অফিস ইম্পসিবল ছিল। আামার যারা ইয়াং কলিগ তারা বসের এমন কান্ড দেখে বেজায় খুশি। এবং আমরা বাধ্যতামূলক একসাথে খেলাও দেখি। গোল হয়ে গেলেই জুনিয়র আশফাক শিশুর মতো এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমিও তাকে জড়িয়ে ভূলিয়ে দেই তার দশ বছরের বড় এবং আমি তার বস।

খেলা শেষ হয়েছে, আর্জেন্টিনা কাপও নিয়েছে। আমি ভেতরের খুশি বউ এর সামনে চেপে রেখেছি। কারন আমি রান্না পারিনা খেতে দেবে কে? আর এই শীতে বউ ছাড়া ঘুমও হবে না। খারাপও লাগছে কারন বউয়ের জন্য। কিন্তু বউ তার দল হারলো তবুও কান্নাকাটি নেই, নেইমারের মতো গড়াগড়ি নেই,  একেবারে শান্ত।

আমিও ভাবলাম, এখন তো পাগলামী বাদ দেয়া দরকার। শার্ট - প্যান্টে অফিস করতে হবে। যাই হোক আলমারী খুলে দেখা গেল কোন কারন ছাড়াই আমার শখের ব্লেজার, শার্ট-প্যান্ট একটাও নেই। বউয়ের কাছে জানতে চাইলাম, সে বলছে সে জানে না।

ও মাই গড,বউ এতো হিংসুটে। সবাইকে দিয়ে দিয়েছে। মনে পড়লো, বাসায় দুধ দিয়ে যায় তার গায়ে আমার পছন্দের আকাশী কালার শার্ট ছিল। তারমানে দুধ অলা, ডিমঅলা, মাছঅলা এদের সব দিয়ে দিয়েছে। ওকে কোন সমস্যা নাই, যতোই জ্বালাক দল বদল হবে না।

ওহ্ ঝাল, আজ তরকারীতে হলুদ নেই, সব মরিচ ঢেলে দিয়েছে।

- বউ কি রান্না করো? আমি তো ঝাল খেতে পারিনা।

- মরিচ তুমি কিনেছ, ঝাল বেশী আমি কি করবো। আমি তো তোমার মেসির বউ এর মতো পারফেক্ট বউ না! লাগলে ওরকম একটা নিয়ে আসো।

আমি মজা করে বললাম- বউ তো আনা যাবে না, গার্লফ্রেন্ড আনতে হবে। কারন ব্রাজিলরা তো গার্লফ্রেন্ড পালে, বউ না।

বউ খাবারের প্লেট কেড়ে নিয়ে চলে গেল। স্বামীর জন্য মায়াও নেই? নেইমারই সব? কি এক্টা অবস্থা! তবুও ভাই আর্জেন্টিনা ছাড়ুম না ❣️

 

মনে পড়ে গেল, বহুবছর আগে ক্রিকেট খেলা নিয়েও বউ এর চেয়েও সাংঘাতিক কান্ড ঘটিয়েছিল।

আমি ছাত্র অবস্থায়ই বিয়ে করি। রাজশাহীতে আমার ছোট বোন আর বউ এর ছোট দুই ভাই মিলে আমাদের সংসার। আমার বোন আর বড় শালা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছে। আমরা দুজনও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে  তাই এক সাথেই থাকা আরকি! আর একেবারে পুচকে শালা ক্লাস ফাইভে।

তো খেলা শুরু হওয়ার পর কে কোন দল এটা খেলা দেখতে বসলেই বোঝা যায়। প্রেমের সময় জানা হয়নি কিন্তু এখন জানলাম বউ পাকিস্তানের সাপোর্টার। আমি আর বড় শালা ভারত। দুঃখজনক হলো বোনও রাজাকার থুক্কু পাকিস্তান । বাকি থাকলো পুচকে জন। তিনি যে চোখ রাঙ্গায় তার দিকেই যায়।

বাসায় বেশ জমিয়ে খেলা দেখছিলাম। পাকিস্তানের অবস্থা খুব শোচনীয়। আমরা স্লোগান দিলাম- রাজাকারের চামড়া,,,,,  আমরা দুজনই সেই লাফালাফি।

বউ হঠাৎই  উঠে গিয়ে বটি নিয়ে এসে আমার হিটাচী টিভিটা ফালাফালা করলো। আমি দর্শক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু খেলা তো দেখতে হবে। আমিও নাছোর বান্দা। ক্রিকেট যেহেতু দীর্ঘসময়ের খেলা তাই রেডি হলাম হলের উদ্দেশ্য কিংবা বিনোদপুরে গিয়ে খেলা দেখব বলে।

বউ কোনভাবেই যেতে দেবে না। শুরু হলো ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে শার্টের বোতাম গেল, শার্ট গেল, গেঞ্জি ছিঁড়ে ফালাফালা হয়ে তাও গেল।

ভাবলাম, কিছুই যায় আসে না। এক শচীনের ছক্কার জন্য সব কোরবান করা যায়। বিনোদপুরে গিয়ে একটা কিছু কিনে নিয়ে পরেই খেলা দেখতে হবে।

তা আর হলো না। দরজার বাইরে পা বাড়াতেই বউ এবার হাত দিল নিচ বস্ত্রে, মানে লুঙ্গিতে। আমি লুঙ্গি প্রিয় মানুষ। রাজশাহীতে গরম বেশী তাই আন্ডারগার্মেন্টস ও পরিনি। এমন জঙ্গি হামলা থুক্কু লুঙ্গি হামলার খবর আগে থেকে জানা থাকলে সবচেয়ে টাইট জিন্সটা পরে থাকতাম।

অবশেষে আমি বউ এর সাথে লুঙ্গি ধস্তাধস্তিতে হেড়ে গিয়ে লুঙ্গি হারালাম। খেলা না হলে এ সময় আমিও শাহরুখ খানের মতো হাত মাথায় স্টেপ দিয়ে রানী মুখার্জির দিকে রোমান্সের জন্য এগিয়ে যেতাম। কিন্তু খেলা দেখতে হবে।

পাশের শালা মশাই এ অবস্থা দেখে দৌড়ে পগার পাড়। বোন এ অবস্থা দেখে লুকিয়ে পড়লো। ভাই এর জন্য হয়তো কাঁদছে।  বোনরা ভাইদের কষ্ট নিতে পারে না, যতোই সে পাকিস্তান হোক!

বউ লুঙ্গি নিয়ে গটগট করে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। আমার মাথায় তখনও খেলা। এই সুযোগে পালাতে হবে। পাশে পাওয়া খোকসার পাতায় ইজ্জত ঢেকে বোনকে ফিসফিসিয়ে ডাকলাম।

সে জানালা দিয়ে একটা আধাছেঁড়া হাফপ্যান্ট দিল। মনের আনন্দে সেটি পরে গিয়ে খেলা দেখলাম। সেবার ভারত জিতে গেল।

ভারত জিতে যাওয়ায় বউ ধর্মঘট ডাকলো। বউ মাস ছয়েক একটা চুমুও দিলনা। আমার তাতে বিশেষ কোন সমস্যা ছিল না। খেলা জেতার আনন্দে সামান্য চুমু তো কেয়া অর কুছভি ছোড়না কোয়ী বারী বাত নেহী হ্যায়,,,,

 

তবে হ্যাঁ,অবশ্যই ছাড়তে হয়েছে আর তা হলো, আর কোনদিনই ক্রিকেট খেলা এতো মজা করে দেখা হয়নি।

এবার ফুটবলে তো আর তা করা যায় না। তখন বয়স কম ছিল। আবেগ ছিল বেশী, বউ পাগল ছিলাম বেশী। এখন স্বাধীনতার সময় এসেছে। সেই নেইমার আর মেসিরা এক হবে, একসাথে খেলবেও,বউ অযথাই আমার সাথে ঝগড়া করছে।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম জার্সি গায়েই অফিস যাবো। লোকে জানতে চাইলে বলে দেব বউ ব্রাজিল। সবাই জানুক ব্রাজিল কেমন হিংসুটে আর হরণকারী!

 

কেঁদোনা দ্রৌপদী, তুমি একা বস্ত্র হারাওনি, এই তৌহিদরাও কারনে- অকারনে বস্ত্র হারায় 😀😜

 

ছবি- নেট

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ