মাই হিরো নং ৪

ইমন ১৮ জানুয়ারি ২০১৬, সোমবার, ০৮:৩৫:৩০অপরাহ্ন বিবিধ ২২ মন্তব্য

বারবার ব্যাকস্পেস দিচ্ছি। কিভাবে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারতেছিনা। যার কথা বলবো তাকে পাড়ায় সবাই 'হইলদা' বলে ডাকত।
আমাদের সাহা কাকা। শত্রু ছিলনা তার কেও। পাড়ার সবাই কেই উনি সমান চোখে দেখতেন। তাই আমাদের মত বনেদি পরিবারেরা তাকে হইলদা বলে ডাকত। আমাদের নরসিংদীতে যারা সবার মন জোগিয়ে চলতো তাকে সবাই হইলদা বলে। সাহা কাকার সামনের মাড়িতে দাঁত ছিলনা। কিন্তু কি অদ্ভুত ভাবে যেন উনি গরুর হাড় চিবিয়ে খেতেন।

সবার মন জোগিয়ে চলার কারণে সাহা কাকা আমার হিরো না!
সাহা কাকা আমার হিরো এই কারণে যে,
উনি দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে আমাদের মসজিদে নামাজ পড়েছেন। পৃথিবীর কোন দেশে এমন নজির আছে কিনা আমি জানিনা।
আমাদের সাহা কাকা এই দীর্ঘ ৬০ বছর শুধু নামাযই পড়েননি, সেই সঙ্গে মসজিদে নিয়মিত দিয়েছেন আযান।
রোযার মাস ছাড়া আমাদের এলাকার মসজিদে তেমন মুসল্লি হতনা। কিন্তু সাহা কাকা, মঞ্জিল কাকা,উসমান ভাই এই তিন ত্রয়ী পাচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন।
আমার বুঝার বয়স থেকে দেখে আসছি, পাঁচ ওয়াক্ত সাহা কাকা আযান দিচ্ছে । মসজিদে ঈমাম সাহেব ছিলনা তা না। কিন্তু তারপরেও সাহা কাকা আযান দিতেন।
সাহা কাকার হিরো হয়ে যাওয়ার জন্য এই জিনিষটাই যথেষ্ট আমার কাছে।

আমাদের গ্রামের মসজিদ পাকা করার জন্য আমার দাদা শহর থেকে ইট আনেন। কিন্তু গ্রামের মাঝখানে একটা খালের মত ছিল। তাই ইটের গাড়ি মসজিদের কাছে আসতে পারতনা।
আমাদের সাহা কাকা সেই দীর্ঘ পথ ইট কাধে করে নিয়ে আসতেন।

আমাদের সাহা কাকা, প্রতিটি রমজানে এত্তেকাফে বসতেন। গ্রামের মানুষের দান-খয়রাতের আশায় না। গ্রামের মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য।
আমাদের সাহা কাকা, প্রতিটা ভোরে ডাকতেন " ঘুম হইতে নামায ভাল"......

দীর্ঘ ৬০ বছর একজন মানুষ অপার্থিব, আমাদের অতি জ্ঞানীদের মতে অবাস্তব, অসত্য আল্লাহকে ভালবেসে নামায পড়েছেন।
এতগুলা বছর নামায পড়ে কিছুই কিন্তু পাননি তিনি। যা পেয়েছেন সেটা হচ্ছে, " কাউকে ভালবাসার তৃপ্তি"। আমরা যেমনঃ জিএফ বা বিএফ থাকায় অনেক তৃপ্তি পাই, তাদের মুখে 'ভালবাসি' কথাটা শুনে তৃপ্তি পাই। তেমনি আমাদের সাহা কাকা নিবিষ্ট মনে,একাগ্রচিত্তে একটা না দেখা সত্তাকে ভালবেসে গেছেন। কি অদ্ভূত নিষ্ঠা। আমরা পারি এমন করে জলজ্যান্ত মানুষকে সামনে পেয়েও ভালবাসতে!!
একজন মানুষ সততার সাথে সেই কাজটা কি অবলীলায় করে গেলেন।
প্রজন্ম, ভালবাসতে হয় কিভাবে তার জলন্ত প্রমাণ আমাদের সাহা কাকা।

যেদিন সাহা কাকা আযান না দিত আমরা সাহা কাকার বাড়ি চলে যেতাম এই ভেবে যে সাহা কাকার কিছু হল কিনা।
গত ১২ ডিসেম্বর আমাদের সাহা কাকা আমাদের এই ভয়টাকে সত্যি করে পর পারে চলে গেছেন।

আমার কানে এখনো বাজে সাহা কাকার সূর " কি মিয়া ঢাহা গিয়া ভূইল্যা গেছগা...।"
ভুলি নাই সাহা কাকা। এই মিথ্যে গাল-গল্পের শহরে হয়ত পচে-গলে নর্দমায় মিশে যাব কিন্তু আপনার আযান ভুলবনা।
শুধু আপনার দীর্ঘ ৬০ বছরের সাধণার জন্য ধর্ম সত্যি হক,খুদা সত্যি হক,বেহেশত সত্যি হক!
সাহা কাকার জন্য দোয়া করবেন।
আমদের সাহা কাকা, মিশিয়ে দিয়ে গেছেন তার ঘাম আমাদের মসজিদের প্রতিটি দেয়ালে, প্রতিটি ইঞ্চিতে।.........
[[বিঃদ্রঃ মুখ খুলে হাসা ব্যাক্তিটি সাহা কাকা। ]]

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress