" কেমন আছো ? "

চমকে উঠলাম। খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর। এ কণ্ঠস্বর ভুলা এ জীবনে আমার পক্ষে সম্ভব না। এই কণ্ঠস্বরের মালিকের সাথেই তো কথা বলে কত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম। এই মেয়েকে নিয়ে একসময় কত স্বপ্নই না দেখেছিলাম !

প্রশ্নটা খুবই কমন ছিল। আগে দিনে অন্তত দশবার করতো। কিন্তু এখন এই কথাটাই অনেক অপ্রত্যাশিত। প্রায় ৬ মাস পরে ওর সাথে আমার আবার দেখা হলো। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যার সাথে দিনে ২-৩ ঘন্টা কথা হতো তার সাথে টানা ৬ মাস কোন যোগাযোগই ছিল না ...... !

" ভালো আছি। তুমি ? " - ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিলাম।
নাহ মেয়েটা আগের মতই আছে। ছয়মাসে একটুও বদলায়নি।

" ভালো আছি। "
এক মূহুর্ত নীরবতা। কেউই আমরা কথা খুঁজে পাচ্ছি না। ভাবতে হাসি পাচ্ছে আমার। এই মেয়ের সাথে আগে কথা বলতে গেলে কথা শেষ হতো না। কোন কিছু শেষ হলে কিভাবে কিভাবে যেন আবার কথা শুরু হয়ে যেতো। আর এখন ! আমরা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছি দুটো মূর্তির মত ! সময় আসলে মানুষকে অনেক বদলে দেয়, মানুষের সম্পর্কটাকে বদলে দেয়। অনেক বেশিই বদলে দেয়।

" আর কিছু বলবে না ? "
দীর্ঘক্ষণ পরে আবার মুখ খুললো। ওর এই এক স্বভাব। বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না।

- কি বলবো ?

- আগে তো কথা শেষ হতো না।

- সেটা অতীতে। এখন আর অতীত নেই।

- তাই বুঝি ? অতীতের কিছুই কি মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে না ?

- ফেলে কিন্তু সময়ের কারণে প্রভাবের মাত্রা কমতে থাকে।

- তাই বলে এত ঘনিষ্ঠ মানুষগুলোও কথা খুঁজে পাবে না ?

- সময় আসলে মানুষকে অনেক বদলে দেয়, মানুষের সম্পর্কটাকে বদলে দেয়।
একটু আগে ভাবা কথাটা মুখ দিয়ে বলে ফেললাম।
আবার এক মূহুর্তের নীরবতা ...

" তো এখানে কি মনে করে ? " অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ আর নীরবতা কাটাতে প্রশ্নটা করলাম।

- এমনি। ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে আসছি।

- ভালোই তো। মলটা নতুন হয়েছে। কেমন লাগছে ঘুরে দেখতে ?

- দারুণ।
আর কোন কথা না পেয়ে আবার চুপ হয়ে গেলাম। ফলাফলঃ আরো একবার দীর্ঘক্ষণের নীরবতা। দুজনেই অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু কথাগুলো কেন জানি গলার মধ্যে এসে আটকে যাচ্ছে। বলা আর হচ্ছে না। মন চাচ্ছে বলি কিন্তু মগজ তীব্র শক্তি দিয়ে বাধা দিয়েই যাচ্ছে।

" আচ্ছা যাই তাহলে। এনজয় ইয়োরসেলফ। "
বলেই ও ঘুরে গেলো। কিছু বলার পাচ্ছি না। এতদিন পরে দেখা। কত কথা ছিল ওকে বলার। কিন্তু পারছি না।

ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আমার ভেতরে। দুই প্রতিপক্ষ হলো আমার মন আর মগজ। হটাতই কেন জানি ভয়াবহ একটা ঝটকা দিয়ে মনের জোরটা প্রতিষ্ঠিত হলো। সাথে সাথেই বলে ফেললাম এতদিনের না জানতে চাওয়া কথাটা ...
" কেন তুমি ছেড়ে গেছিলে আমায় ? "

প্রশ্নটা শুনে থমকে দাঁড়ালো ও।
ফিরে তাকিয়ে বললো, " উত্তরটা আমার নিজেরও সঠিকভাবে জানা নেই। "

উত্তর শুনে এবার রাগ হলো। বেশ কঠিন স্বরেই জিজ্ঞেস করলাম,
" সঠিকভাবে জানোই না কেন তিন বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিলে ? তিল তিল করে সাজানো দুনিয়াটা ধ্বংস করে দিলে ? "

আবার এক মূহুর্তের নীরবতা ... কেন জানি বারবার এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ওর চোখে পানির ধারা বইছে কেবল। আর আমি হতভম্বের মত দেখেই চলেছি। ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে জেনেছিলাম ওর নাকি মনে হয়েছিল আমার সাথে সে মানায় নিতে পারবে না ভেবেই সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে আসলে পুরাটাই ওর কোন ভুল ধারণা ছিল ...

হটাত কি হলো আমার কে জানে ...
আলতো করে ওর হাতটা ধরে বললাম,
" আবার কি আমরা নতুন করে শুরু করতে পারি না সব কিছু ভুলে গিয়ে ? "

চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো ও। বললো,
" কেন তুমি আমার মত একটা ফালতু মেয়ের সাথে আবার জড়াবে ? আবার হয়তো কোন কারণ ছাড়াই কষ্ট দিয়ে চলে যাবো তোমার থেকে। তোমার ভালোবাসার মূল্য আমি কোনদিন দিতে পারবো না। আমার ওই যোগ্যতাই নেই। " - এতটুকু বলেই ভীষণভাবে কাঁদতে শুরু করলো।

- ট্রাস্ট মি। সময় অনেক গতিশীল। অতীতকে গতির তোরে কই যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে টেরও পাবে না। আমরা সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করবো। আবার জোড়া দিবো আমাদের ভাঙ্গা স্বপ্নগুলো।

চোখে পানি নিয়ে মেয়েটা আমার দুইহাত তুলে ধরে বললো,
" তুমি এরকম কেন ? এতকিছুর পরেও তুমি কেন আমায় ক্ষমা করবে ? যাদের জন্য তোমাকে ভুল বুঝে এসেছি আজ তারা সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। স্বার্থপর কয়েকটা ফ্রেন্ডের জন্য তোমাকে কতই না কষ্ট দিয়ে গেছি ? আর তুমি ? আর কতবার ক্ষমা করবে আমায় ? "

একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, " ভালোবাসার মানুষকে আমি চাইলে হাজারবার ক্ষমা করতে পারি, হাজারবার ! "

ওর হাতের বাধনটা যে শক্ত হচ্ছে সেটা টের পাচ্ছি ... ওর মুখে অদ্ভুত প্রশান্তির হাসি, যেটা দেখে এমন সুখ পাওয়া যায় যা দুনিয়াতে কোটি টাকা খরচ করেও পাওয়া সম্ভব না ...!

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress